বিয়ানীবাজারে সালিশে ‘সমাজচ্যুত’ পরিবার

প্রকাশিত: ১০:৪০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০১৮

বিয়ানীবাজারে সালিশে ‘সমাজচ্যুত’ পরিবার

Manual3 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : গ্রাম্য মাতব্বররা সমাজচ্যুত করেছে একটি পরিবারকে। ওই পরিবারের দুই শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকেও বের করে দেয়া হয়েছে। তাদের স্কুল ও মক্তবে যেতে নিষেধ করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য। বিয়ানীবাজারের দুইবাগ ইউনিয়নের পাঞ্জিপুরী গ্রামের এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে। প্রশাসনের একাধিক দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুবাগ ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম জানান, ‘জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে পাঞ্জিপুরী গ্রামের মুরব্বিরা একই গ্রামের তোতা মিয়ার পরিবারের ওপর নাখোশ হয়ে ওঠেন।

Manual6 Ad Code

গ্রামবাসীর সিদ্ধান্তে স্থানীয় ইউপি সদস্য মউর উদ্দিন ওই পরিবারের কোনো সদস্য যাতে স্কুল-মক্তবে আসতে না পারে, সে কথা জানিয়ে আসেন।’ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, ‘শুক্রবার তিনি গ্রামের লোকজনকে ডেকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ওই পরিবারের সদস্যরা যাতে স্কুল-মক্তবে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’ সমাজচ্যুত পরিবারের কর্তা তোতা মিয়া অভিযোগ করেন, ‘তিনি ও তার পরিবারের লোকজন পার্শ্ববর্তী ঘরের দুদু মিয়া ও সাহাব উদ্দিন সাধুর পরিবার কর্তৃক দীর্ঘ দিন থেকে শারিরিক ও মানষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। সম্প্রতি জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে তারা তোতা মিয়ার ঘরে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা তার স্ত্রীকেও মারধর করে। গত সোমবার রাতে আবারো তোতা মিয়ার ঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। তখন তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিবদর্শন করে।’ তোতা মিয়া জানান, ‘তিনি থানায় কেন অভিযোগ করলেন এবং এলাকায় কেন পুলিশ গেল-এ অভিযোগে বুধবার রাতে তোতা মিয়ার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন মাতবররা। গভীর রাতে গ্রামবাসীর সিদ্ধান্তের এ কথা ইউপি সদস্য মউর উদ্দিন গিয়ে তাদের জানান এবং মসজিদ, মক্তব ও স্কুলে যেতে তাদের নিষেধ প্রদান করেন।’
তোতা মিয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমি আমার নাতি-নাতনিদের স্কুলে পাঠালে সেখান থেকে তাদের বের করে দেয়া হয়। আমার নাতনি পাঞ্জিপুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী আফরিন আক্তার মাহিয়া স্কুল থেকে কেঁদে কেঁদে বাড়িতে আসে। এ সময় সে জানায় তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এর কিছুৃক্ষণ পরে কুশিয়ারা দ্বিপক্ষীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র আমার নাতি মিজানুর রহমান বাড়িতে চলে আসে। সেও জানায়, স্কুল কমিটির লোকজন তাকেও স্কুলে না আসার জন্য বলে দিয়েছে।’ অবশ্য এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা মো. কর্মকর্তা মাছুম মিয়া বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে এ সংক্রান্ত অভিযোগের কোনো সত্যতা পাইনি। তবে কুশিয়ারা দ্বিপক্ষীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ১০ দিন স্কুলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান জানান, আমি এ ধরনের সংবাদ পেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাকে পাইনি। এদিকে ইউপি সদস্য মউরউদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি তোতা মিয়ার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি নিজে তোতা মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তা জানিয়ে দিয়ে এসেছি। সমাজচ্যুত করা আর বাচ্চাদের স্কুল-মসজিদে যাতায়াতে বাধা দান বেআইনি তা জানেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মউরউদ্দিন বলেন, আমি আইনের বই পড়েছি। আইন মোতাবেক আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই প্রধানমন্ত্রী নিজে এলেও আমাদের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারবে না। বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল হক জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..