সুনামগঞ্জে ধান কাটা শুরু : শ্রমিক সংকটের আভাস

প্রকাশিত: ৬:৩১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০১৮

সুনামগঞ্জে ধান কাটা শুরু : শ্রমিক সংকটের আভাস

Manual8 Ad Code

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: পঞ্চাষোর্ধ আবদুল গফুর। পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের শত্রুমর্দন (বাঘেরকোনা) গ্রামের সাধারণ কৃষক তিনি। পাগলার সীচনীর হাওর ও ডাবর সংলগ্ন ডুকলাখাই হাওর মিলিয়ে মোট ১১ কেদার (প্রায় ৪ একর) বোরো জমি চাষ করেছেন তিনি।

Manual3 Ad Code

বুধবার থেকে ডুকলাখাই’র নবীনগর গ্রামের কাছ থেকে তাঁর প্রথম ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান কাটা শুরু হয়েছে- এমন খবর পেয়ে এ প্রতিবেদক তাঁর জমিতে যান। সেখানে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায় নি। তাঁর ছেলে আঙ্গুর মিয়া এ প্রতিবেদককে দেখে এগিয়ে আসেন।

রাস্তার পাশে ধানের আঁটি গোছানোর কাজে ছিলেন তিনি। তার চোখে মুখে সে কি আনন্দের ঝিলিক! খুব হাসিমুখেই তাদের গত তিন বছরের বিশেষ করে গত বছরের ফসল হারানোর কথা বলে যাচ্ছিলেন আঙ্গুর মিয়া। তার মুখে হাসি এবার এজন্যই যে, জমিতে ধান কাটতে পারছে তারা। এ তো গেলো পশ্চিম পাগলার কৃষক আবদুল গফুর আর আঙ্গুর মিয়ার গল্প।

একই ভাবে ধান কাটতে পারবেন ভেবে স্বস্তির কথা জানালেন পূর্ব বীরগাঁওয়ের ধরমপুর গ্রামের ষাটোর্ধ কৃষক মশিক আলী। কোনাডুপি ও রাঙ্গামাটির হাওরে তাঁরও প্রায় ১০ কেদার বা সাড়ে তিন একর জমি। ধান কাটা এখনো শুরু করেন নি তিনি। তবে কাঁচা ধান হলদেটে ভাব ধরেছে। যেভাবে রোদ হচ্ছে এভাবে হলে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ লাগবে তাঁর। তাই তিনি খুশি। তবে কিছুটা ভয় কাজ করছে তাঁর মনে। যদি শিলাবৃষ্টি হয় তাহলে পাকা ধান শেষ হয়ে যেতে পারে।

Manual2 Ad Code

পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের উমেদনগর গ্রামের বর্গাচাষী শাফিক মিয়া। বয়স শেষের পথে। আবচা চোখে ধানখেতের দিকে তাকিয়ে তিনে বলেন, ‘ইবার আল্লায় দিয়া গেলে ঋণ শোধ করতাম। জমিনের মালিক দিয়াও ১শ থেকে দেড়’শ মন ধান তোলতে পারমু। বউত টেখা সুদো ঋণ আছি। খালি ধান দেখাইয়া রাখরাম।’

কেনো সুদে ঋণ এনেছেন এমন প্রশ্নে প্রবীণ কৃষক শাফিক মিয়া বললেন, ‘কিতা যে কউরে বাবা, তিন বছর ধরি ধান পাই না। তোমরার লাখান শিক্ষিতও নায়। চলেরাম যে কিলা তা একমাত্র আল্লায় জানইন। মাইষের কামো কাজো যাই। কাম না পাইলে ঋণ করি চলি।’

Manual6 Ad Code

ঋণের পরিমাণ কত হবে জানতে চাইলে কিছুক্ষণ ভেবে বলেন, ‘লাখ টেখার কম তো অইতো নায়।’ একই অবস্থা মশিক আলীরও।

এ বছর ধান পাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা। কম হলেও কিছু ধান ঘরে তুলতে পারবেন। তবে কিভাবে ঘরে তুলবেন সে ধান। ধান কাটার শ্রমিকের সংকট তো এখনই দেখা দিয়েছে। প্রত্যেকে যার যার জমি নিয়ে ব্যস্ত। বৃষ্টি নামার আগেই ধান ঘরে তোলে নিশ্চিত হতে চান কৃষকরা।

Manual7 Ad Code

আর সপ্তাহ খানেক সময় পার হলেই একসাথে ধান কাটার ধুম পড়বে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের দেখার হাওর, খাইহাওর, পাখিমারা হাওর, জামখলার হাওর, কোনাডুপির হাওর, খাচিভাঙ্গার হাওর, পাগলার দক্ষিণের হাওর ও নাগডরার হাওরসহ ছোট বড় প্রায় সকল হাওরেই। তাই ধান কাটার শ্রমিকেরও সংকট পড়তে পারে। এজন্য কৃষকরা আগে থেকেই শ্রমিক মিলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শ্রকিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নূর মিয়া ও মুসলিম মিয়া নামের পূর্ব পাগলার দুই ধান কাটার শ্রমিক জানান, ‘আমরা খুব ব্যস্ত আছি। প্রচুর কাম আছে। ধান কাটাও শুরু। যদি ধান কাটা পুরাপুরি আরম্ভ অইযায় তাইলে আমরার রোজ বেশি পড়বো।’ কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, ‘ধান কাউটরা কম ইবার।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..