এবারও অভিযুক্ত সেই আজাদ : সিলেট ছাত্রলীগে খুনোখুনি

প্রকাশিত: ১:২৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০১৮

চয়ন চৌধুরী, সিলেট : সিলেটে প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় ছাত্রলীগ কর্মী তানিম খান খুনের পর ফের আলোচনায় এসেছে মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের নাম। গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ৩৩ দিনের ব্যবধানে নগরীতে প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ কর্মী ওমর মিয়াদ ও জাকারিয়া মো. মাসুম খুনের পরও হামলাকারীদের মদদদাতা হিসেবে আলোচনায় এসেছিল এ নাম। এ দুটি খুনের ঘটনায় জড়িতরা আজাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে নগরীতে ছাত্রলীগের ‘টিলাগড় গ্রুপে’র কর্তৃত্ব আজাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে আসছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক রনজিত তালকুদার। আগামী নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রনজিত সরকার সাম্প্রতিক সময়ে ওই এলাকায় ব্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে আজাদ নগরীর টিলাগড়-শিবগঞ্জসহ আশপাশে একক নিয়ন্ত্রণে নিজের অনুসারী ছাত্রলীগের সহায়তা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু সমকালকে  বলেন, রনজিত ও আজাদ দু’জনই আমাদের নেতা। আজাদের মদদে ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আজাদ সন্ত্রাসী লালন করছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ কর্মী ওমর মিয়াদ ও জাকারিয়া মাসুম হত্যা মামলার আসামিরা আজাদের অনুসারী। গত বছরের ১৬ আগস্ট নগরীর জিন্দাবাজারে ব্যবসায়ী মামুন বখত হত্যা মামলার প্রধান আসামি সোলেমানও তার অনুসারী। আওয়ামী লীগ নেতা আজাদের প্রভাবে পুলিশ এসব মামলার আসামিদের গ্রেফতার না করায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাড়ছে বলেও অভিযোগ করেন হিরণ মাহমুদ। অবশ্য শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি সমকালকে বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তানিম খুনের সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওমর মিয়াদ হত্যাকাণ্ডে তোফায়েলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর নগরীর শিবগঞ্জে ছোট ভাইকে আটকে জিম্মি করে তাকে দিয়েই ফোনে ডেকে এনে জাকারিয়া মো. মাসুমকে প্রকাশ্যে খুন করা হয়। এই মামলায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে যে মামলা করা হয়েছে, তাতে প্রধান অভিযুক্ত টিটু চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা আজাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। গত বছরের ১৩ জুলাই অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে এই টিটু চৌধুরীর নেতৃত্বে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ভাংচুর চালানো হয়। একই বছরের ১৬ অক্টোবর নগরীর টিলাগড়ে সিটি কাউন্সিলর আজাদের অফিসের কয়েক গজের মধ্যে প্রকাশ্যে খুন করা হয় নগরীর লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ছাত্র ওমর মিয়াদকে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়। এই মামলার পর ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ সিলেট জেলা কমিটি বাতিল করে, যা এখনও পুনর্গঠন হয়নি। ছাত্রলীগ নেতা রায়হানসহ এই মামলার সব আসামি সেই আজাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরীর নেতৃত্বে গত ৪ জানুয়ারি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এমসি কলেজে প্রবেশের চেষ্টা করে আজাদের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ‘টিলাগড় গ্রুপে’র অন্য অংশের নেতাকর্মীরা বাধা দিলে একপর্যায়ে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। এতে কয়েকজন আহত হওয়ার পর পুলিশ গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেদিন কলেজে প্রবেশে ব্যর্থ হওয়ার বদলা নিতেই রাতের আঁধারে অতর্কিতে হামলা করে তানিমকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ব্যাপারে নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদের মুঠোফোনে অসংখ্যবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরীর মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

সূত্র-দৈনিক সমকাল

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..