সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০১৯
চলচিত্র শিল্পের এই দু:সময়ে সিলেটে কোন রকমে টিকে থাকা দু’টি হলের একটি ‘নন্দিতায়’ বিগত কয়েক বছর থেকে প্রদর্শক কর্তৃক টিকিটের দাম বছরে বছরে বাড়িয়ে দেয়ায় হল বিমুখ হতে শুরু করেছেন দর্শকরা। এমনিতেই চলচ্চিত্র শিল্পে মহাসঙ্কট চলছে এ অবস্থায় প্রদর্শক যদি এভাবে টিকিটের দাম বাড়াতেই থাকেন তাহলে সিলেটের পুরানো এই হলটিও যেকোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে টিকিটের দাম বাড়ানোয় প্রদর্শক লাভবান হলেও দর্শকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি সরকারও লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
দর্শকরা জানিয়েছেন, প্রতিবছরের শুরুতেই নন্দিতা সিনেমা হলের প্রদর্শক টিকিটের দাম ধাপে ধাপে বাড়িয়ে থাকেন। এ জন্য হলে দর্শকদের সংখ্যা দিনে দিনে কমতে শুরু করেছে। সরকারের বেঁেধ দেয়া টিকেটের মূল্যের নিয়মনুযায়ীর তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দেয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে দর্শকরা হল বিমুখ হয়ে পড়ছেন। তারা আরো জানিয়েছেন, বর্তমানে মন্দা চলচ্চিত্রের বাজারে এমনিতেই দর্শকরা হলে আসতে চাইছেন না তার উপর নন্দিতা সিনেমা হলের প্রদর্শক টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় সিলেটে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখাও মনে হয় সম্ভবপর হবে না। শুধু তাই নয় অনেকেই হলে এসে টিকিটের দাম শুনে ছবি না দেখেই ফিরে যাচ্ছেন। হলে ছবি দেখতে আসা দর্শক জুয়েল আহমদ, সিরাজুল ইসলাম, আব্দ্লু হাদি, মঈনদ্দিন, দিনমজুর রিফাত হোসেন, রিক্সা চালক আব্বাস উদ্দিন এর সাথে কথা বলে তারা এমনটাই জানিয়েছেন।
বিভাগীয় সিলেটে দু’টি সিনেমা হলের একটি হচ্ছে নগরীর নন্দিতা সিনেমা হল। এ হলের মূল মালিক ব্যবসায়ী ধন মিয়া। দীর্ঘদিন তিনি এ হলটি চালিয়েছেন। এর পর চলচ্চিত্র শিল্পের দুরবস্থা ও আকাশ সংস্কৃতির কারণে এ শিল্পে ধস নামলে তিনি হলটি ৩ বছরের চুক্তিতে ভাড়ায় দিয়ে দেন ঢাকার পাপ্পু মিয়া নামের এক ব্যক্তির কাছে। পাপ্পু হলটি ভাড়া নিয়েই টিকিটের দাম বাড়াতে শুরু করেন। ৯ টাকার টিকিট মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি নিয়ে আসেন থেকে ১০০ টাকায়। শুধু তাই নয় তিনি নির্দিষ্ট ৯শ’৫২ সিটকে তিনি ঈদ পূজা পার্বণসহ শুক্র ও শনিবারে অতিরিক্ত সিট বসিয়ে ১৬ থেকে ১৭শ তে নিয়ে যান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নন্দিতা সিনেমা হলে নিয়মনুযায়ী ৯শ’ ৫২ সিটের অনুমোদন থাকলেও বর্তমানে সেখানে বসার সিট রয়েছে ১৩শ’ ২৩টি। তারপরেও পাপ্পু মিয়া ঈদ, শুক্র ও শনিবারে সর্বমোট ১৮শ’টি সিট করে পুরোদমে হল ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।
নন্দিতা সিনেমা হলে পূর্বে প্রথম শ্রেণীর টিকিটের মূল্য ছিল ১৫ টাকা। বর্তমানে এ টিকিটের মূল্য হচ্ছে ৬০ টাকা। সরকারী মূল্য হচ্ছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা। পূর্বে দ্বিতীয় শ্রেণীর এ টিকেটের মূল্য ছিল ১৬ টাকা। বর্তমানে ৬০ টাকা এবং সরকারী মূল্য ১৩ টাকা ৬৫ পয়সা ছিল। তৃতীয় শ্রেণীর পূর্বে টিকিটের মূল্য ছিল ২৩ টাকা সেটাকে বর্তমানে বাড়িয়ে হয়েছে ৭০ টাকা। তৃতীয় শ্রেণীর টিকিটের সরকারী মূল্য হচ্ছে ১৮ টাকা ৮৩ পয়সা। বক্স টিকিটের মূল্য পূর্বে ছিল ৩০ টাকা। সরকারী এ টিকিটের মূল্য ১৯ টাকা ২০ পয়সার পরিবর্তে বর্তমানে এ টিকিটের মূল্য ১০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে সরকারের লাখ লাখ টাকার কর ফাঁকি দেয়ার পাশাপাশি হল বিমুখ হচ্ছেন দর্শকরা।
নন্দিতা সিনেমা হলের প্রদর্শক পাপ্পু মিয়ার সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, টিকিটের মূল্য ঠিক আছে বাড়ানো হয়নি। নির্ধারিত দামে টিকিট বিক্রির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে হল সমিতির সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী তাদের বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট রেইটেই টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তিনি হলের সিট বাড়ানোর বিষয়ে বলেন, নির্দিষ্ট যে সিট রয়েছে সে অনুয়ায়ীই হলে ঢুকেন অতিরিক্ত কোন সিট বাড়ানো হয়নি।
এ বিষয়ে নন্দিতা সিনেমা হলের মালিক ধন মিয়া বলেন, আমি ৩ বছর অন্তর অন্তর হল ভাড়া (লিজ) আসছি। এখন টিকিট বা হলের সিট বাড়ানোর হয়েছে কিনা সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমি ভাড়া পেয়ে থাকি। তবে তিনি বলেন, আগের মতো বর্তমানে হলে দর্শকরা ছবি দেখতে আসছেন না।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd