সিলেট ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ, মে ৭, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটে ৭ আসামিকে বাঁচাতে বাদির স্বাক্ষর ‘জাল’ করে আদালতে এফিডেভিট দাখিল করেছেন এক আইনজীবী। এ নিয়ে আদালত পাড়ায় তোলপাড় চলছে। হলফনামা সম্পাদনকারী আইনজীবী নিজেও জানেন না বাদী কে বা কীভাবে এই এফিডেভিটটি তাঁর কাছে এসেছে এবং জাল স্বাক্ষরে সম্পাদন হয়েছে।জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হামলার দায়ে সিলেট আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-মেয়র-এমপিসহ ২৮৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে আদালতে মামলা হয়। মামলাটি দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত হওয়া সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার রণকেলী উত্তর গ্রামের শেখ আবদুর রহমান জনির ছেলে শেখ শফিউর রহমান কয়েছ (১৮)।
আদালতের নির্দেশে ২ মে মামলাটি রেকর্ড করেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক। তবে এই মামলা থেকে ৭ জন আসামিকে রক্ষায় বাদি শেখ শফিউর রহমান কয়েছের স্বাক্ষর জাল করে ৪ এপ্রিল একটি এফিডেভিট সম্পাদন করা হয়। এফিডেভিটটি সম্পাদন করেছেন সিলেট আদালতের আইনজীবী মোহাম্মদ সেলিম মিয়া। তবে বাদি শফিউর রহমান কয়েছ জানেন না, কারা এই ভুয়া এফিডেভিট সম্পাদন করেছেন। মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সামসুল আলম দুষ্কিও এফিডেভিটটির সম্পাদন অস্বীকার করছেন।
মামলার এহাজারনামীয় সাতজন আসামির নামে ভুয়া এফিডেভিট করা হয়েছে। তারা হলেন- মামলার ৪৮ নং আসামি আমির হোসেন, ৫২নং আসামী দিপন রঞ্জন দাস (৫০), ৬০ নং আসামী কে এম ফারুক হোসেন (৫৮), ৭০ নং আসামী মো. শফিকুর রহমান (৫০), ৬৪নং আসামী নুর আজিজ (৪৮), ৭১ নং আসামী মাহমুদুল হাসান (৫০), ৩২ নং আসামী আবুল হাসান শোভন (৩৮)।
অ্যাডভোকেট সামসুল আলম দুষ্কি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী শেখ শফিউর রহমান কয়েছের মামলার আইনজীবী স্বীকার করে জানান, আমি এই মামলার ফাইলিংয়ের পর থেকে মামলার সাথে সম্পৃক্ত নই, এরপর কে-কি করছে তা জানা নেই, পাশাপাশি বাদির সাথেও আমার যোগাযোগ নেই। এফিডেভিটের বিষয়ে আমি অবগত নই। তাছাড়া এরকম এফিডেভিট হয়ে থাকলে আমি বিবৃতি দিব।
বাদির স্বাক্ষর জাল করে ৬ আসামিকে এফিডেভিট করিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট সামসুল আলম দুষ্কি বলেন, সিনিয়রের সাথে বাদির যোযাযোগ আছে, সিনিয়র (অ্যাডভোকেট তাহের) এই ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। আমি ফাইলিংয়ের সময় মাত্র স্বাক্ষর করেছিলাম। সিনিয়র (অ্যাডভোকেট তাহের) যেহেতু এপিপি তাই আমাকে এই মামলার আইনজীবী করেছিলেন। আমি স্বাক্ষর দিয়েছি মাত্র।
এ ব্যাপারে সিলেট জজ কোর্টের এপিপি অ্যাডভোকেট তাহের বলেন, তিনি এই মামলার বাদি, বিবাদী, আইনজীবী ও এফিডেভিট সম্পর্কে কিছু জানি না।
বাদির উপস্থিতি ছাড়া এফিডেভিট সম্পাদনের কথা স্বীকার করে অ্যাডভোকেট মো. সেলিম মিয়া বলেন, একজন উকেল সাহেব এফিডেভিট সম্পাদন করার জন্য মুহুরি পাঠিয়েছিলেন। তবে এফিডেভিট সম্পাদনের সময় বাদি আমার সামনে উপস্থিত ছিলেন।
বাদির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সামসুল আলম দুষ্কি এই এফিডেভিট তাঁর কাছে পাঠিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না, তবে আগামীকাল মনে হবে। আপনাকে জানাবো। মুহুরির নাম জানতে চাইলেও তিনি একই উত্তর দেন।
বাদির উপস্থিতি ছাড়া এফিডেভিট সম্পাদন আইন সম্মত কি না জানতে চাইলে আইনজীবী সেলিম মিয়া জানান, বিশ্বস্ত উকিল হলে এগুলো আমরা করে দেই।
এ ব্যাপারে মামলার বাদি শেখ শফিউর রহমান কয়েছে বলেন, আজকে সকালে আমি চা-বাগেনর শ্রমিকদের একটি প্রোগ্রামে এনসিপি’র নেতাকর্মীদের সাথে ছিলাম। আমার সাস্টের একজন বড় ভাই ফোন করে জানান আমি নাকি ৭জন আসামিকে এফিডেভিটের মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছি, মামলা বাণিজ্য করছি। ঘটনা শুনার পর আমি আদালতে গিয়ে দেখি আমার স্বাক্ষর জাল করে কারা যেন একটি এফিডেভিট সম্পাদন করেছে। আমি তাৎক্ষণিক বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানাই এবং লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে চাই। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান যে, তিনি এফিডেভিটের কোনও কাগজ পাননি। পেলে তার সাথে যোগাযোগ করবেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ খবির উদ্দিন জানান, আমি এফিডেভিটের কোন কাগজ এখনও পাইনি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd