ছাতক সিমেন্ট কারখানার প্রকল্প গিলে খাচ্ছে সিন্ডিকেট!

প্রকাশিত: ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২৫

ছাতক সিমেন্ট কারখানার প্রকল্প গিলে খাচ্ছে সিন্ডিকেট!

ক্রাইম প্রতিবেদক :: শিল্পমন্ত্রীর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) আলোচিত কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বাদশা আবারো ছাতক সিমেন্ট কারখানার ব্যালেন্সিং মর্ডানাইজেশন রেনোভেশন অ্যান্ড এক্সপেনশন প্রকল্পের পিডির দায়িত্বে। বিসিআইসির প্রতিষ্ঠান ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এবং কর্ণফুলী পেপার মিলে (কেপিএম) কর্মরত অবস্থায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। ছাতক সিমেন্ট কারখানা থেকে একাধিকবার তদন্ত ও বদলি হলে পুনরায় তিনি নিজের ঠাঁই করে নিয়েছেন ছাতক সিমেন্ট কারখানায়। ছিলেন নতুন প্রকল্পের ডিপিডি, বর্তমানে ওই প্রকল্পের পিডির দায়িত্বে তিনি। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে নতুন প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। একটি দায়সারা সিমেন্ট কারখানা তৈরি করতে যাচ্ছেন তারা।

আব্দুর রহমান বাদশার কারখানার বড় ধরনের সব দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে। ওই কর্মকর্তা (পিডি) ছাতক সিমেন্ট কারখানায় কর্মরত অবস্থায় বিনা টেন্ডারে ৩৫ লাখ টাকায় পুরাতন একটি পাওয়ার প্লান্ট বিক্রি করেছিলেন। পরে স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে বাধ্য হয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে প্লান্টটি আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। ভারতের নিজস্ব খনি প্রকল্প থেকে রজ্জুপথে আসা কারখানার চুনাপাথর সেনাকল্যাণ সংস্থার নাম ব্যবহার করে ১৮শ’ টাকা টনের পাথর খোলাবাজারে প্রতি টন পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে কারখানার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বাদশা ও এমডি সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে।

বর্তমানে বাদশাহ সিন্ডিকেটে রয়েছেন সিমেন্ট কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহমান বাদশা, জিএম বাণিজ্যিক এসআর সাইদ খান, এমপিআইসি শাখা প্রধান ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত বাণিজ্যিক বিভাগীয় প্রধান রবিউল ইসলাম, শ্রমিক নেতা আব্দুল কুদ্দুছ, প্রকল্প পরিচালকের পিএস মো. জনি, সাবেক সংসদ-সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, এমপির ব্যক্তিগত সহকারী মুশাহিদ আলীসহ কয়েকজন কারখানার শ্রমিক।

১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরোনো প্রকল্পের অধিকাংশই তারা টেন্ডার ছাড়াই বিক্রি করেন। বিনা টেন্ডারে হাজারও টন স্ক্যাপ ও যন্ত্রাংশ বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট চক্র। নতুন প্রকল্পের মূল কাজ পরিচালনা করতেন চিটাগাং রাঙ্গাদিয়া ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড থেকে সিমেন্ট কারখানায় পে-রোলে আসা প্রধান প্রকৌশলী (রসায়ন) আব্দুর রহমান বাদশা। ছাতক সিমেন্ট কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৬ সালে ড্রাই প্রসেস প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পায় নানজিং সি-হোপ নামের একটি চায়না কোম্পানি।

বর্তমানে কারখানায় কোটি টাকার নির্মাণকাজ চলমান। চায়না কোম্পানির কাছ থেকে এক নিকটাত্মীয়ের নামে সব কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন বাদশাহ। যার সবই দেখাশোনা ও লেনদেন করছেন তিনি। সরকারি কোষাগারে টাকা জমা না দিয়ে শত কোটি টাকা বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি, টেন্ডার বাণিজ্যি, ঘুসবাণিজ্যি ও রাতের অন্ধকারে কারখানার ভেতর হতে অকেজো পরিত্যক্ত স্ক্র্যাপ ট্রাক ভর্তি করে বাইরে চুরির মাধ্যমে বিক্রি করে তাদের পকেট ভারী করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

২০২১ সালে ৭ এপ্রিল রাতে কারখানার ভিতরে চুরির পরিকল্পনায় একটি ট্রাক্টর প্রবেশ করে। শ্রমিক নেতা আব্দুল কুদ্দুছের ফোনে নির্দেশে ডিউটিরত হাবিলদার মাসুক মিয়া এ গাড়িটি স্ক্র্যাপ লোহা চুরির জন্য কারখানার ভেতরে প্রবেশ করান। তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে হাতেনাতে এ গাড়িটি স্ক্র্যাপসহ আটক করেন। এ ছাড়া পুরোনো প্রকল্পের অধিকাংশই তারা বিক্রি করেছেন। ১০০ টন স্ক্যাপ মালের টেন্ডার করে তারা পাচার করছে কয়েক হাজার টন স্ক্যাপ মাল। বিনা টেন্ডারে হাজারও টন স্ক্যাপ ও যন্ত্রাংশ বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্রটি।

এসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে উপজেলার নোয়ারাই গ্রামে ইউনুস আলীর ছেলে লাল মিয়া বাদী হয়ে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহমান বাদশা, জিএম বাণিজ্যিক এসআর সাইদ খান, এমপিআইসি শাখা প্রধান ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত বাণিজ্যিক বিভাগীয় প্রধান রবিউল ইসলাম, শ্রমিক নেতা আব্দুল কুদ্দুছ, প্রকল্প পরিচালকের পিএস মো. জনির বিরুদ্ধে একাধিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে সাবেক সংসদ-সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও শ্রমিক নেতা আব্দুল কুদ্দুছের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল কৃষ্ণ বিশ্বাস জানান, প্রায় রাতে লোহার সামগ্রী চুরি হচ্ছে, প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহমান বাদশার মোবাইল ফোনো যোগাযোগ করা হরে তিনি সাড়া দেননি।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

March 2025
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..