বালাগঞ্জে রক্ষকদের যোগসাজশে স্কুলের শতবর্ষী গাছ লুটের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৪:০৩ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০২৫

বালাগঞ্জে রক্ষকদের যোগসাজশে স্কুলের শতবর্ষী গাছ লুটের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্বপৈলনপুর ইউনিয়নের জালালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষী গাছ লুটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গাছটির আনুমানিক মূল্য ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বলে জানা গেছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, জালালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীর তীরে অবস্থিত। নদীভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়ের শতবর্ষী তিনটি রেন্টি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে দুটি গাছ ইতিমধ্যে লুট করে বিক্রি করে দিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। গত বছরের আগস্ট মাসে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অন্যান্যদের পরামর্শে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তৃতীয় গাছটি কর্তন করে স্কুল প্রাঙ্গণে রাখা হয়। পরে গাছটি লুট করে বিক্রি করে দেওয়া হয়। গত সোমবার (৩ মার্চ) অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছে গাছটি বিক্রির সময় ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজির মিয়া, যুবলীগ নেতা রাজন, সুহেল ও কাশেমকে সহায়তা করতে দেখা যায়।

এছাড়াও, নদীভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ ও চারটি শ্রেণিকক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সূত্রমতে, ওই কক্ষগুলোর ইট, রডসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীও সংঘবদ্ধ দলটি ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করেছে। এমনকি কিছু ব্যক্তি নিজেদের গৃহ নির্মাণেও এসব সামগ্রী ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, স্কুলের গাছ কাটতে হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও বনবিভাগের কাছে লিখিত আবেদন করতে হয়। কিন্তু কোনো ধরনের প্রক্রিয়া ছাড়াই গাছ কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে জালালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুস শহিদ বলেন, “আমি পরিবেশ পরিস্থিতির শিকার। বিষয়টি মৌখিকভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করতে না পারাটা আমার ব্যর্থতা।”

বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক শিখা রানী জানান, “প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আব্দুস শহিদের সময়ে এগুলো হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।”

অন্যদিকে, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও ইউপি সদস্য নজির মিয়া দাবি করেন, “গাছটি পানিতে ভেসে চলে গেছে। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।” বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতি লিটনকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন।

পূর্বপৈলনপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “গাছটি নদীভাঙনের কবলে পড়লে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে অবহিত করে। আমি তাদের পরামর্শ দিয়েছি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও ইউএনওকে অবগত করে গাছটি নিরাপদ স্থানে তুলে রাখার জন্য। গাছটি বিক্রির ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।”

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রকিব ভূঁইয়া বলেন, “স্কুলের গাছ কাটার বিষয়ে আমি জানি না। আমাকে কেউ অবহিত করেনি। তদন্তপূর্বক গাছ কাটা এবং লুটের বিষয়টি সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করব।”

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত কুমার চন্দ বলেন, “এ বিষয়টি আমি এই মাত্র জানলাম। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান, স্কুল কমিটির সভাপতি ও তাদের দলবল মিলে স্কুলের সম্পদ লুট করে খেয়েছে। গত সোমবারও ইউপি সদস্য নজির, স্থানীয় লিটন ও চেয়ারম্যান প্রভাব খাটিয়ে গাছটি লুট করে বিক্রি করে দেন।

এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণ আইনগত ব্যবস্থা ও দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

March 2025
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..