সিলেট ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১, ২০২৫
জৈন্তাপুর প্রতিনিধি :: জৈন্তাপুর উপজেলার বড়গাং নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন। অধিক মুনাফার লোভে বিধিবর্হিভূতভাবে ব্যবসায়ীদেরকে বালু উত্তোলনে সহায়তা করছেন ইজারাদার। ভিটেমাটি হারানোর আশংকা করছেন নদী পাড়ের মানুষজন। বিনষ্ট হচ্ছে ফসলী জমি, বর্ষা এলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে অসংখ্য ঘরবাড়ী। চালানো হচ্ছে বোমা মেশিন, আহরণ হচ্ছে বালুর সাথে পাথর। যা পরিবেশের জন্য মারাতœক হুমকী। স্থানীয় জনসাধারণ একাধিকবার অভিযোগ করা সত্তেও রহস্যজনক কারনে ব্যবস্থা নিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন।
বড়গাং নদী জৈন্তাপুর উপজেলার ১নং নিজপাট এবং ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন অংশে প্রবাহিত। বালু উত্তোলনের অধিকাং জায়গা নিজপাট ইউনিয়নের আওতাভূক্ত। নদীর দু-ধারে রয়েছে লক্ষীপ্রসাদ, রূপচেং, গোয়াবাড়ী, পাখিবিল, মাঝরবিল, কালিঞ্জিবাড়ী, হর্ণি, বাইরাখেল, নয়াগ্রাম সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শহ¯্রাধিক পরিবারের বসতি। এসব গ্রামের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে উল্লেযোগ্য শীম এবং বরবটি চাষ হয় এই অঞ্চলে। অথচ বালু উত্তোলনের নামে এসকল কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ বড়গাং নদীর ইজারা বন্ধ থাকায় সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হলেও ২০২৪ সালে সরকারীভাবে ইজারা প্রদান করা হয়। কিন্তু ইজারাদার কিংবা বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা কোন রকম সরকারী নীতিমালা মানছেন না মর্মে অভিযোগ উঠেছে। বালু উত্তোলকারী শ্রমিকরা রীতিমত নদীর পাড় কেটে বালু আহরণ করছেন। শুধু তাই নয় তাদের থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নদী পাড়ের কৃষি জমি, বাড়ীর আঙ্গিনা। এবার তারা পরিবেশবিরোধী কাজ চালু করেছেন। বড়গাং নদীর উজানে মাঝরবিল গ্রামের গরুরঘাট এ বোমা মেশিন দিয়ে রীতিমত পাথর উত্তোলন করছেন। বালু মহাল লীজ প্রদানে উজারাদার এবং সরকার পক্ষের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ১১ নং কলামে উল্লেখ রয়েছে, নদী গর্ভে এমন কোন যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না, যাহা দ্বারা জনসাধারণের চলাচলে বিগ্ন ঘটে, জান-মালের ক্ষতি সাধিত হয় বা পরিবেশ বিপর্যন্থ্য হয়, নদীতে ড্রেজার বা বোমা মেশিন ব্যবহার করলে সরকার কর্তৃক ক্ষমতা প্রদত্ত আইএসও ১৯৭৬ অনুযায়ী ইজারাগ্রহীতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কিন্তু নদীর পাড় কাটা, ফসলী জমি থেকে বালু উত্তোল এবং বোমা মেশিন ব্যবহার সহ বিধিবর্হিভূত বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের উদাসীনতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারী এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারে নিকট দাখিল করা হয়। স্থানীয় একাধিক পরিবারের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, আমরা গরীব নিরীহ মানুষ তাই কেউ আমাদের ক্ষয়-ক্ষতি দেখতে চায় না, বার বার অভিযোগ দেওয়া সত্তেও প্রশাসন থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।
এব্যাপারে বড়গাং নদীর ইজারাদার ইসমাইল হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি বোমা মেশিন চালনায় সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে বলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কিছুদিন আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বোমা মেশিন বন্ধ করে দেন। পরক্ষনে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রদত্ত বোমা মেশিন চালানো সংক্রান্ত অনুমতি পত্র প্রদর্শন করলে তিনি পূনরায় বোমা মেশিন চালনার মৌখিক অনুুমতি প্রদান বরেন।
অন্যদিকে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জর্জ মিত্র চাকমার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন ইজারাদারের সাথে পাথর উত্তোলন সংক্রান্ত কোন আলোচনা হয়নি। তিনি আরো বলেন বড়গাং নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়েছে, পাথর উত্তোলনের জন্য নয়। কেউ যদি বালুর সাথে পাথর আহরণ কিংবা বোমা মেশিন ব্যবহার করে থাকে তবে এবিষয়ে আমার জানা নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ যদি সঠিক হয়, তবে খুব শিগরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd