সিলেট ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৫৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :: দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ ঘেরা এ জনপদ ও প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ের মোহনীয় দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসে ভ্রমণপিপাসু হাজারও মানুষ। কিন্তু একদল পাথর ব্যবসায়ীর কারণে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে জাফলং, হারাচ্ছে তার চিরায়ত সৌন্দর্য।
পরিবেশ ও পর্যটনকেন্দ্র রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা কোয়ারিতে জমে আছে বিপুল সাদা পাথর। বন্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে পাথর তুলছে। পাথর বহনকারী গাড়ি থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আদায় করছে একটি চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। কিন্তু এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন ও থানার পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ওই পাথর কোয়ারির পাহারায় নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন থানার পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। কিন্তু তারা পাথর উত্তোলনকারীদের কোনো বাধা দেননি। জানা যায়, সিলেটের দৈনিক ও জাতীয় দৈনিক কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নামমাত্র একাধিক অভিযান পরিচালনা করেন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেপরোয়া এই সিন্ডিকেটের প্রধান হলেন বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা শাহ আলম স্বপন ও বিএনপির লেবাসধারী স্বৈরাচারের দোসর হেনরিলামিন। তারা গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই জাফলং কোয়ারি এলাকায় একটি চক্র তৈরি করেন। তাদের চক্রের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান হেলয়ার, বদলের যুগ্ম আহবায়ক ইউসুফ আলী, ছাত্রদল নেতা আজির উদ্দিন, সেলিম জমিদার ও আমজাদ বক্স। এড়াছা এই চাঁদাবাজ চক্রের সাথে স্থানীয় একাধিক সাংবাদিক জড়িত রয়েছেন।
বর্তমানে জাফলং এলাকায় এই চক্রের ত্রাসের রাজত্ব তৈরি হয়েছে। তার রয়েছে বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা সব সময় এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়।সবশেষ জাফলংয়ের নয়াবস্তি এলাকার গ্রামপুলিশ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. ইউসুফ আলীর জমি দখল নিয়ে ঘটেছে লঙ্কাকাণ্ড। রাতভর অস্ত্রের মহড়া দেখেছে জাফলংবাসী। এখানে একটি চক্র প্রতিদিনই জাফলং এলাকায় এ রকম নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এই ভয়ে কেউ মুখ খুলে প্রতিবাদ করে না।
জাফলংয়ের এক পাথর ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন,‘বর্তমান সময়ের বিএনপির এই চাদাঁবাজ সিন্ডিকেটের চেয়ে ভালো ছিলো আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজরা। আগে আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজদের ১৩শ টাকা করে দিয়ে গাড়ি পাস করছি। এখন বিএনপির স্বপন সিন্ডিকেটকে ২৫শ টাকা করে দিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভাবছিলাম পাথর কোয়ারীতে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। কিন্ত না এখন চাঁদাবাজির মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।এতে জাফলং হারাচ্ছে অপরূপ সুন্দর্য। এই চক্রের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। জোরপূর্বক মানুষের জমি থেকে যন্ত্রদানব ব্যবহার করে উত্তোলন করছেন পাথর। পরিবেশের শাপাপাশি হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি ও সরকারি স্থাপনা।
এই চক্রটি জোর করে পাথর উত্তোলনের পাশাপাশি নিরীহ মানুষের জায়গা দখলে নিচ্ছেন। সেই জায়গা থেকে পাথর উত্তোলন করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন এবং পাথরবোঝাই গাড়ি থেকে ২৫০০-৩০০০ টাকা করে আদায় করছেন- এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের।
অবৈধ পাথর উত্তোলনের বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মানিক মিয়া বলেন, ‘আমাদের রেকর্ডীয় জমি থেকে পাথর উত্তোলন করছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে। উনি আশ্বাস দিয়েছেন তাই পাথর তুলছি।’
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা হেনরীলামীনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা জানান, ‘তিনি অবৈধ পাথর উত্তোলনের জন্য কাউকে আশ্বাস দেননি এবং এ বিষয়ে কারও সঙ্গে সমবোঝতাও হয়নি। অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগে মামলা প্রস্তুতি চলমান রয়েছে।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদ জানান, অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে পুলিশি অভিযান চলছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ জানান, গত ৫ আগস্টের পর প্রকৃতি-কন্যা জাফলংয়ের পাথর কোয়ারীতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে শোনেছেন। ইতোমধ্যে পাথর লুটপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে স্ব স্ব থানায় মামলা হয়েছে। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd