হাওরে জলাবদ্ধতা : পানিতে কৃষকের ৫ শ’ একর জমি

প্রকাশিত: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

হাওরে জলাবদ্ধতা : পানিতে কৃষকের ৫ শ’ একর জমি

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ছাতক, দোয়ারা বাজার, সুনামগঞ্জ সদর ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উঁচু জায়গার পানি নেমে এসে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে সুনামগঞ্জের শস্য ভাণ্ডার খ্যাত দেখার হাওরে। এতে এই হাওরের শত শত কৃষকের প্রায় ৫শ’ একর বোরো জমির পাকা ধান জলাবদ্ধতার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষকরা দাবি করছেন, অতি দ্রুততার সাথে যদি হাওরের শান্তিগঞ্জ উপজেলা অংশের আস্তমা-আসামপুর গ্রাম সংলগ্ন উথারিয়া ক্লোজারের পানির নিষ্কাশনের পাইপ খুলে দেওয়া না হয় তাহলে ধান পাকার আগেই জলাবদ্ধতায় তলিয়ে যাবে কৃষকের ফসল। কৃষকদের এমন দাবির মুখে ইতোমধ্যে বাঁধের ক্লোজার অংশ পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার সিংহ। সার্বিক দিক আলোচনা করে করণীয় ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে দেখার হাওরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উথারিয়া বাঁধে ডিজেল চালিত পাঁচটি পাওয়ার পাম্প বসিয়ে দেখার হাওরে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার পানি সেচ দিয়ে মহাসিং নদীতে ফেলা হচ্ছে। অপরদিকে, কোমর পরিমাণ পানিতে নেমে নিজের ডুবে যাওয়া কাঁচা ধান কাটছেন একাধিক কৃষক। অনেক জমির পাকা ধান পানির নিচে ডুবে আছে, কাচা ধানের শীষ পর্যন্ত ভেসে আছে অনেক জমিতে। এ নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকেরা!

কৃষকরা জানান, সুনামগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারাবাজার উপরের অংশ এবং ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে দেখার হাওরের রৌয়া কিত্তা, ডৌক্কা কিত্তা, সুগানি কিত্তা, পাটনী কিত্তা, বাউয়ানী কিত্তা, গোজাউনী বাঁধের কাছের অংশ, লোহাকুচিসহ বেশ কিছু অংশের প্রায় ৫শ’ একর বোরো জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পাওয়ার পাম্প দিয়ে যেভাবে পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে এভাবে এক মাসেও জলাবদ্ধতার পানি শেষ হবে না। এই জলাবদ্ধতার কারণে এসব জমির সমস্ত ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, উথারিয়া বেরিবাঁধে একটি ক্লোজারে পানি নিষ্কাশনের জন্য ১২ ইঞ্চির ৩টি পাইপ বসানো আছে। অনেক বছর ধরেই এই তিনটি পাইপ দিয়ে হাওরের জলাবদ্ধতার পানি মহাসিং নদীতে নিষ্কাশণ হয়। কিন্তু এ বছর এসব পাইপের মুখে মাটি ফেলে পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে৷ ফলে হাওরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে শত শত কৃষকের কষ্টের ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে৷ দ্রুততার সাথে যদি এইসব পাইপের মুখ খুলে দেওয়া না হয় তাহলে অনেক কৃষকই শেষ হয়ে যাবেন।

দেখার হাওরের কৃষক আজিমুল হক, জিল্লুর রহমান, ফজল উদ্দিন ও তখলুছ মিয়া বলেন, ১০/১৫ বছর ধরে এসব পাইপ দিয়ে হাওরের জলাবদ্ধতার পানি নিষ্কাশন হয়। এতো বছর কোনো সমস্যা হয় নি। এ বছর পিআইসি সভাপতি রাজা মিয়া বাঁধের কাজ করানোর সময় দু’পাশেই পাইপের মুখ বন্ধ করে দেন। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকার কারণে এ বছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে কৃষকের শত শত একর জমি হুমকির মুখে পড়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশণ করার দাবি জানাচ্ছি।

উথারিয়া বাঁধের পিআইসি সভাপতি রাজা মিয়া বলেন, পাইপের মুখ ভাঙা থাকার কারণে বন্ধ করেছি। এদিকে পাইপ খোলা থাকলে পানির স্রোতে বাঁধ ধ্বসে যাওয়ার শঙ্কা থেকে যায়৷ এই আশঙ্কা থেকে পাইপের মুখ বন্ধ রেখেছি।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা বলেন, আমরা বাঁধ পরিদর্শন করেছি। কৃষকদের কথা শুনেছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।

বাঁধ পরিদর্শন শেষে সুনামগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার সিংহ বলেন, আমরা পরিদর্শন করেছি। কৃষকের সমস্যাটি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছি। গুরুত্বসহকারে আজ সন্ধ্যায় মধ্যেই জেলা প্রশাসক মহোদয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করবো। এই জলাবদ্ধতা কমাতে হাওরের অন্যান্য ফসলের যেনো ক্ষতি না হয় সেই প্রস্তুতি নিয়ে আমরা পানি নিষ্কাশনের দিকেই এগুবার চেষ্টা করবো।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..