সিলেট ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:১৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২৪
ক্রাইম প্রতিবেদক:
সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানাধীন ২নং হাটখোলা ইউনিয়নের ২নং ও ৩নং ওয়ার্ডের উমাইরগাঁও এলাকার পূর্ব-দক্ষিণ পাশের চেঙ্গেরখাল নদী (বাদাঘাট নদী) থেকে অবৈধভাবে ছোট বড় শতাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। দীর্ঘদিন ধরে কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও এখন পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের নজরে পড়েনি। ফলে সরকারের রাজস্ব হরিলুট নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জালালাবাদ থানা থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে উমাইরগাঁও, পীরেরগাঁও, ঝৈনকারকান্দি এলাকা। জালালাবাদ থানার নিকটবর্তী এই এলাকাগুলো থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সরকারের কোটি টাকার রাজস্ব হরিলুট হলেও এ যেন দেখার কেউ নেই। সরজমিনে ২নং হাটখলা ইউনিয়নের ২নং ও ৩নং ওয়ার্ডের উমাইরগাঁও এলাকার নিকটবর্তী চেঙ্গেরখাল নদী ঘুরে এ ধ্বংসযজ্ঞ দেখা গেছে।
সরজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে- উমাইরগাঁও, পীরেরগাঁও, ঝৈনকারকান্দি এলাকার চেঙ্গেরখাল নদী (বাদাঘাট নদী) থেকে অবৈধভাবে ছোট বড় শতাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে বালু উত্তোলনের মহোৎসবের নেপথ্যের নায়কের ভূমিকায় রয়েছেন ২নং হাটখলা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উমাইরগাঁও গ্রামের আফরোজ মিয়া ওরফে ধনাই মিয়ার পুত্র মুস্তফা কামাল আর তার সহযোগী হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রয়েছেন বাইলাকান্দি গ্রামের কাদির মিয়ার পুত্র জয়নাল গং।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় উমাইরগাঁও, পীরেরগাঁও, ঝৈনকারকান্দি মৌজায় ইজারা দেয়নি কর্তৃপক্ষ। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে বাণিজ্য করছে মুস্তফা কামাল ও তার সহযোগী জয়নাল গং।
স্থানীয়রা জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুস্তফা কামাল ও তার সহযোগী জয়নাল গং। বালু তুলতে বাধা দিলে এলাকাবাসীকে এই মহল প্রাণে মারা, হাত পা ভেঙে দেয়ার হুমকী দেয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন দিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলেও স্থানীয় প্রশাসন মুস্তফা কামাল ও তার সহযোগী জয়নাল গং এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বালু উত্তোলনের ফলে ওই এলাকার আশপাশের অনেক কৃষকের আবাদি জমি ভেঙে গেছে। গত ৫-৭ বছরে উমাইরগাঁও এলাকার কৃষকদের প্রায় ১০ কিয়ার আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে তাঁর প্রায় ৮০ শতাংশ আবাদি জমি ভাঙনের মুখে রয়েছে। তারা বলেন, ‘কত লেখালেখিও হয় কিন্তু বালু তুলা বন্ধ হয় না।’ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করার পরেও কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে জানান এলাকাবাসী।
অন্যদিকে, এমন একাধিক অভিযোগ এনে ভিন্ন তারিখ ও সময়ে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বারবার নিজের মালিকানা কৃষি ক্ষেতের আবাদি জমি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্রের কবল থেকে রক্ষার জন্য লিখিত দরখাস্ত দায়ের করেন একাধিক ভুক্তভোগী।
উমাইরগাঁও মৌজায় বালু উত্তোলনের কোন লীজ নেই বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন বিলাজুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নিতাই বাবু। তিনি আরো জানান- এই মৌজায় শুধুমাত্র নদী থেকে মাছ ধরার একটি লীজ রয়েছে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত জয়নাল এর ব্যবহৃত সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না এসব কামাল ভাই জানেন। তবে আমার জানামতে সিলেটের জেলা পরিষদের সদস্য সুবাস দাস ও রমিজ ভাই লীজ এনেছেন। উমাইরগাঁও মৌজায় কোন লীজ নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান- এসব কামাল ভাই ও সুবাস দাদা আর রমিজ ভাই জানে বলে তিনি ফোন রেখে দেন।
এব্যাপারে ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুস্তফা কামাল এর ব্যবহৃত সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- এসব আমি জানি না তবে এখানে সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য সুবাস দাদার নামে লীজ রয়েছে। তার কথা অনুযায়ী বালু উত্তোলন হচ্ছে। উমাইরগাঁও মৌজায় কোন লীজ নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান- এসব সুবাস দাদা জানে বলে তিনি ফোন রেখে দেন।
এব্যাপারে সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য (গোয়াইনঘাট ১০নং ওয়ার্ড) সুবাস দাস এর ব্যবহৃত সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- আমি সঠিকভাবে কামাল কিংবা জয়নালকে চিনি না বোধহয় বড়চর মৌজায় আগামী ১৩ই এপ্রিল ২০২৪ ইং পর্যন্ত আমার নামে লীজ আছে এর বাহিরে আমার নাম ব্যবহার করে কেউ কিছু করলে আমি তা জানি না। লীজের কপি চাইলে তিনি জানান- লীজের কপি দিয়ে আর কি করবেন লীজের মেয়াদ আর ৮/১০দিন আছে।
এব্যাপারে ২নং হাটখলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল জব্বার এর ব্যবহৃত সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- যে অংশে অবৈধভাবে ছোট বড় শতাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে বালু উত্তোলনে হচ্ছে সেই অংশে কোন প্রকার লিজ নেই বলে তিনি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন। তবে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে বাণিজ্য করছে মুস্তফা কামাল ও তার সহযোগী জয়নাল গং।
এব্যাপারে জালালাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান এর ব্যবহৃত সরকারি সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- আমরা এ বিষয়ে বহু অভিযান করেছি আর মূলত এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কোন ব্যবস্থা নেয় না তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরীন আক্তার এর সরকারি সেলফোনে যোগযোগ কররে তিনি জানান- আমি এখন এ বিষয়ে থানা পুলিশকে বলে দিচ্ছি আর পারলে আপনারা এদের কয়েকজনকে আটকে রাখুন আমি এসে ব্যবস্থা নিবো বলে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মোঃ বদরুল হুদা এর সরকারি সেলফোনে যোগযোগ করলে তিনি জানান- আমাদের পরিবেশ আইনে বালু উত্তোলন সংক্রান্ত কোন ধারা নাই। এটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর এখতিয়ার যা ব্যবস্থা নেওয়ার উনারা নিবেন। তারপরও যদি উনারা আমাদের লিখিত নোটিশ করেন তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd