সিলেট ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:১৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০২৪
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জের পিয়াইন নদী শুকিয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে জমেছে পানি। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে নদীর তীরে স্থানীয় শিমুলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাসহ এলাকার লোকজন মরিচ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন। এমনকি চরে ধানও রোপণ করেন কেউ কেউ। তবে এবার বালু উত্তোলনকারীদের কারণে মরিচ ও বেগুন চাষ করে বিপাকে পড়েছেন তারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আমির আলী জানান, বালু উত্তোলন ও যাতায়াতের কারণে ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা ভেঙে যাচ্ছে। দিনরাত মেশিনের শব্দের কারণে তাদের বাস করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কাছে অবৈধভাবে বালু উত্তোল বন্ধে আবেদন করেছেন তারা। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
সরেজমিন আমির আলীর বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। নদীর যেসব অংশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, সেখানে কিছুদিন আগে ছিল সবুজ ঘাস। এখন সেখানে গর্ত আর গর্ত। লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে দৃশ্যপট বদলে ফেলা হয়েছে। বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে শুকিয়ে যাওয়া নদীর বিভিন্ন অংশ ধসে পড়াসহ তীরের গ্রাম, রাস্তা, ঈদগাহ, কবরস্থান, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ নানা স্থাপনা ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। ‘বোমা মেশিন’ নামের দানবীয় যন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করায় সংকট তীব্র হয়েছে। নিষিদ্ধ হলেও পিয়াইন নদীতে একাধিক বোমা মেশিনসহ অর্ধশতাধিক লিস্টার মেশিন দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন।
একই দৃশ্য দেখা গেছে সীমান্তবর্তী আরেক উপজেলা গোয়াইনঘাটের জাফলং এলাকার পিয়ান নদীতে। সেখানকার জাফলং সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে কয়েকশ ছোট নৌকা দিয়ে বালু ও চিপ পাথর উত্তোলন করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। এ ছাড়া আরেক সীমান্ত এলাকা জৈন্তাপুরের রাংপানি নদীর ৪ নং বাংলাবাজার থেকে আর্দশগ্রাম, সারী-৩ লালখাল খেয়াঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত এবং বড় নয়াগাং নদীর একাংশে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এ তিনটি নদীর বালুমহালের কোনো ইজারা নেই। বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে পুলিশ কিংবা বিজিবির নামে স্থানীয় একাধিক পক্ষ চাঁদা আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন ট্যাক্স নামে রাংপানি থেকে চাঁদাও আদায় করা হয় বলে শ্রমিকরা জানান।
জানা গেছে, সাধারণত বর্ষা মৌসুমে বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন হয়ে থাকে। বিশেষ করে ইজারা দেওয়া মহাল থেকে। অবশ্য এক জায়গা ইজারা নিয়ে অন্য জায়গায় বালু উত্তোলনের ঘটনাও ঘটে। তবে এবার শুষ্ক মৌসুমেই শুরু হয়েছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।
সিলেটের যে কয়টি শুকিয়ে যাওয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছে, এর মধ্যে পিয়াইন নদীর অবস্থা খুবই করুণ। প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে মজুত করা হচ্ছে সেখানে। জানা গেছে, এতে স্থানীয় কাঁঠালবাড়ির আক্কাছ আলী, একই গ্রামের রফিক মিয়া, বুড়িডহর গ্রামের আজমান আলী, জামাল মিয়া ও তাঁর ভাই এখলাছ মিয়া, গয়াছ মিয়া, আলী হোসেন, মাসুক মিয়া, নজরুল ইসলাম প্রমুখ জড়িত।
স্থানীয়রা জানান, ৬০-৭০টি মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন একাধিক অভিযান পরিচালনা ও মামলা করেছে। তবে দু-একদিন পরই আবারও উত্তোলন শুরু করে বালুখেকোরা। সেখানকার প্রতি মেশিন থেকে পুলিশের নামে ৩ হাজার টাকা ও উপজেলা প্রশাসনের নামেও চাঁদা নেওয়া হয় বলে দাবি করেন এক মেশিন মালিক। তবে এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমদ বলেন, কারা বালু উত্তোলন করে পুলিশ তা জানে না। উপজেলা প্রশাসন কোনো অভিযান পরিচালনা করলে পুলিশ সহায়তা করে।
সরেজমিন দেখা গেছে, শিমুলতলা ও বুড়িডহর গ্রামের দুই পাড় কেটে বালু উত্তোলন করে স্তূপ আকারে রাখা হচ্ছে। শিমুলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আব্দুর রহিমের ছেলে রইছ আলী গত ৩ মার্চ ও আরেক বাসিন্দা আমির আলী ১৩ মার্চ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানার ওসি বরাবর অভিযোগ দেন।
অভিযোগের পর অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে উল্লেখ করে ইউএনও সুনজিত কুমার চন্দ জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে। অভিযানে মেশিনও নষ্ট করা হয়। কাউকে বালু উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে জাফলং সেতুর দুই পাশে দেখা গেছে ২০০-৩০০ ছোট নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, সঙ্গে ছোট চিপ পাথরও। সেগুলো কিনে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে গোয়াইনঘাটের ইউএনও তৌহিদুল ইসলাম জানান, পিয়াইন নদীর বালুমহালের কোনো ইজারা নেই। কেউ নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এএসএম কাশেম জানান, ইজারা ছাড় নদী থেকে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। কেউ এ কাজে জড়িত থাকলে উপজেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd