সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:২২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০২৪
স্টাফ রির্পোটার: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটন কেন্দ্র জামে মসজিদের (হাজী সোনা মিয়া জামে মসজিদ)’র মুতল্লির বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা অর্থআত্মসাৎ, স্বৈরাচারিতাসহ নানা রকম অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে মসজিদের অর্থ লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন থেকে মসজিদের মুতয়াল্লী সেজে এই লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে স্থানীয় এলাকাবাসীর করা গণসাক্ষরকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩নং পূর্বজাফলং ইউনিয়নের সোনাটিলায় পর্যটন এলাকাসহ আশপাশের স্থায়ী বাসিন্দাগণ ও জাফলং আসা পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় বাসিন্ধাগণ সম্মিলিত ভাবে সোনাটিলায় একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্দ্যেগ গ্রহণ করেন। সে সময় সোনাটিলা এলাকার বাসিন্ধা মৃত সোনা মিয়ার ছেলে খায়রুল মিয়া মসজিদের জন্য ২৬ শতক ভুমি দান করে সেই জমি নিয়ম মোতাবেক মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দিবেন বলে সকলকে অবহিত করলে সেখানে মসজিদ নির্মান কাজ শুরু হয়।
স্থানীয় লোকজন জমিদাতা হিসাবে খায়রুল মিয়াকে অস্থায়ী ভাবে মসজিদের মোতায়াল্লী নিয়োগ করেন। কিন্তু দীর্ঘ ২০১৬ সাল থেকে তিনি একাই মসজিদের মোতয়াল্লী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন, কোন রকম কমিটি গঠন করেননি। বর্তমানে মসজিদটি (৩য় তলা) বিশিষ্ট নির্মানাধিন রয়েছে। সেই সুযোগে খায়রুল মিয়া অতিসুকৌশলের মসজিদের দানের সমূহ টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করে আসছেন মসজিদের কাজ না করেই। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় কয়েক কোটি টাকা বিভিন্ন ভাবে আত্মসাৎ করে নিয়েছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।
পর্যটন এলাকায় মসজিদটি হওয়ায় সেখানকার সকল ব্যবসায়ীরা এককালীন প্রায় কোটি টাকা দান করেন মসজিদে। খায়রুল মিয়া মসজিদের দানকৃত ভুমি ওয়াকফ করে দেওয়াসহ প্রতি বছর কমিটি রদবদলের কথা থাকলেও দীর্ঘ ৫/৬ বছর যাবত মসজিদের কোন কমিটি নেই। খায়রুল মিয়া একক ভাবে নিজেই মসজিদ পরিচালনা করে মসজিদের কোন কাজ না করে কাজের নামে জালিয়াতি করে মানুষের দানকৃত টাকা লুটপাট করে নিচ্ছেন। মসজিদের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির খতিব মৌলানা নাজিম উদ্দিন ও অভিযোগকারিরা জানিয়েছেন, উক্ত মসজিদে বহুবৃত্তবান লোকজন নামাজ পড়তে আসেন। বিশেষ করে মসজিদে জুমার নামাজের সময় মসজিদের অবশিষ্ট কাজের জন্য বহু অর্থ দান করেন সাধারণ মানুষ। এমনকি খায়রুল মিয়ার মোবাইলে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী পর্যটকগণ লক্ষ-লক্ষ টাকা দান করে আসছেন। প্রতিটি জুম’আ নামাজে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা সদকা উঠে। মসজিদ প্রতিষ্ঠা হতে এখন পর্যন্ত ৩৬৪ সাপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। এতে প্রায় সর্ব নিম্ন ২,৫৪,৮০,০০০/-(দুই কোটি চুয়ান্ন লক্ষ আশি হাজার) টাকা সদকা উত্তোলন হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে আরোও প্রায় ৫০,০০,০০০/-(পঞ্চাশ লক্ষ) টাকা বিশেষ কালেকশনের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। জাফলং পাথর সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় মসজিদের সকল পাথর, সিমেন্ট, স্থানীয় ষ্টোন ক্রাশার মালিকগণ প্রদান করেন। কিন্তু খায়রুল মিয়া এতোই অর্থলোভী ও চতুর ব্যক্তি যে, তাতে তিনি কোন রকম রশিদ ব্যবহার করেন না। উক্ত মসজিদের জমির উপরে নির্মিত একটি মার্কেট রয়েছে। সেখানে রয়েছে অনেক গুলি দোকান কোঠা। উক্ত দোকান কোঠা হতে প্রতিমাসে ৫০,০০০/-(পঞ্চাশ হাজার) টাকা ভাড়া উত্তোলন করা হয়। কিন্তু সকল টাকা যায় খায়রুল মিয়ার পকেটে। উক্ত মার্কেটটি মসজিদ মার্কেট নামে সবার নিকট পরিচিত থাকলেও বর্তমানে নিজ স্বার্থে মার্কেটের নাম পরিবর্তন করে দিয়েছেন খায়রুল মিয়া। যদিও ১/২টি সাইনবোর্ডে মসজিদ মার্কেট নাম এখনোও লেখা রয়েছে। খায়রুল মিয়া তার নিজ স্বার্থের জন্য মসজিদের অযুর ট্যাংঙ্কি হতে পাবলিক টয়লেট ও বিভিন্ন হোটেল রেষ্টুরেন্টে পানি বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার কারণে মুসাল্লিগণ প্রতিনিয়ত ওযুর পানি সংকটে পড়েন। প্রায় তিন বছর যাবৎ পর্যটক মুসাল্লীদের নিকট হতে টাইলস লাগানোর কথা বলে টাকা উঠানো হলেও আদৌ কোন টাইলস লাগানো হয়নি মসজিদে। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি প্রতিবাদ করলে খায়রুল মিয়া নানা রকম ভয়-ভীতি পরিদর্শন করে সবাইকে ধামিয়ে রাখেন। বিধায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ ভয়ে নিরব থাকেন। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে প্রথমে উক্ত মসজিদটি সোনটিলা পর্যটন কেন্দ্র জামে মসজিদ নামকরণ করা হলেও বর্তমানে খায়রুল মিয়া তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে কাউকে কিছু না বলে তার মৃত পিতা হাজী সোনা মিয়ার জামে মসজিদ নামকরণ করে ফেলেছেন। তার এমন কান্ডে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসাল্লীগণ বিক্ষুদ্ধ। যে কোন সময়ে হতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
এমতাবস্থায় এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অর্থলোভী প্রতারক খায়রুলকে নিয়ে একাধিক বার বৈঠক বসলে তিনি কাউকে কোন রকম পাত্তাই দিচ্ছেনা। তাই ঐতিহ্যবাহী সোনাটিলা পর্যটন কেন্দ্র জামে মসজিদটি রক্ষার জন্য স্থানীয় লোকজন গত ৫/৩/২০২৪ ও ০৬/৩/২০২৪ ইং তারিখে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি সিলেট, জেলা প্রশাসক সিলেট, সিলেট পুলিশ সুপার, ওয়াকফষ্ট্রেট সিলেট, ইসলামী ফাউন্ডেশনের পরিচালক বরাবরে গণসাক্ষরকৃত লিখিত অভিযোগ করেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd