সিলেটে চোরাচালান স্বর্গরাজ্যে বেসামাল প্রশাসনের লাইনম্যান আবুল

প্রকাশিত: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৪

সিলেটে চোরাচালান স্বর্গরাজ্যে বেসামাল প্রশাসনের লাইনম্যান আবুল

ক্রাইম প্রতিবেদক: তার নাম আবুল হোসেন। সে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের শীর্ষ চোরাকারবারি ও চোরাকারবারীদের গডফাদার। সে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল খালিকের পুত্র। হরিপুর বাজার এলাকায় এই আবুলের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে চলছে প্রশাসনের নামে চোরাচালানের লাইনম্যান পরিচয়ে চাঁদাবাজি। তার রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। প্রতিদিন দিন ও রাতে অবৈধ ভারতীয় নিষিদ্বকৃত নানারকম মালামালের পরিবহণ হতে আবুলের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে প্রশাসনের নামে চাঁদাবাজি চললেও অদৃশ্য কারণে যেনও তার কাছে অচল দেশের আইন-কানুন! তাতেই অল্পদিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন আবুল।

 

অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এলাকার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী অসাধু চোরাকারবারী দলের সদস্য প্রশাসনের লাইনম্যান পরিচয়ে আবুল এমন চাঁদাবাজি করলেও অদৃশ্য কারণে নিরব দর্শকের ভূমিকায় প্রশাসন। স্থানীয় সচেতন মহল হামলা ও মামলার ভয়ে এবিষয়ে কথা বলতেও নারাজ। তবে সিলেট জেলা পুলিশের ডিবি পুলিশ ও জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশের নামে এই চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে দৈনিক। আবুল সরকার দলীয় স্থানীয় পর্যায়ের কথিত কিছু নেতাকর্মীদের শেল্টারে প্রশাসনের সমূহ সেক্টরের সহীত গড়ে তুলেছে গভীর দহরম-মহরম।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, আবুল হোসেন প্রশাসনের লাইনম্যান পরিচয়ে জৈন্তাপুর ও হরিপুর এলাকার চোরাকারবারীদের গডফাদার।

 

স্থানীয় সুত্রমতে- আজ থেকে দুই বছর পূর্বে যে আবুল জাফলং এর মামার দোকান এলাকায় খোলা পেট্রোল, ডিজেল, মবিল ও কেরোসিন বিক্রি করতো, সেই আবুল মাত্র দুই বছরের মাথায় চোরাচালানোর আলাদিনের চেরাগের কেরামতিতে এখন নিজেই একটি পেট্রোল পাম্পের মালিক। জৈন্তাপুর ও হরিপুরে রয়েছে তার প্রচুর ভূ-সম্পত্তি। আবুল কিভাবে এত অল্প সময়ে প্রায় শত কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জৈন্তাপুর ও হরিপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের মাথায়।

 

এলাকাবাসীর সূত্রমতে- আবুল হোসেনে চোরাচালান জগতে পা রাখেন সর্বপ্রথম ভারত থেকে অবৈধভাবে চা পাতা এনে শহরে বিক্রির মারফতে। পর্যাক্রমে আবুল প্রশাসনের লাইনম্যান পরিচয়ে সিলেটের হরিপুরসহ দেশকেন্দ্রীক গড়ে তুলেন চোরাচালান ও চোরাকারবারীদের এক বিশাল সিন্ডিকেট।

 

আবুল হোসেনের বিপুল অর্থবিত্ত ও সম্পদের হিসাব দুদক যদি অনুসন্ধান করে তাহলে বেরিয়ে আসবে প্রকৃত থলের বিড়াল। এমন কোনো ভারতীয় অবৈধ পণ্য নেই যা আবুল ও তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সিলেটসহ সমগ্রহ দেশে প্রবেশ করছে না। বর্তমানে আবুল হোসেনের চোরাচালানের প্রধান দ্রব্য হচ্ছে ভারতীয় চিনি, মদ ও ভারতীয় কাপড়। সিলেটের তামাবিল মহাসড়ক পথে আবুল হোসেন ও তার সিন্ডিকেটের সদস্য ধারা প্রতিরাতেই জৈন্তাপুর থানা পুলিশ, সিলেট জেলা ডিবি পুলিশ, শাহপরাণ থানা পুলিশ, কোতয়ালী থানা পুলিশ ও দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে সিলেট শহরসহ সমগ্র দেশে প্রবেশ করছে শত শত ড্রামট্রাক, কাভারভ্যাণ, ডিষ্ট্রিক ট্রাক, এইচ পিক-আপ, মাইক্রোবাস ভর্তি চোরাই চিনি।

 

সুত্রমতে, জৈন্তাপুর মডেল থানা ও শাহপরাণ (রঃ) থানার কতিপয় কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে আবুল হোসেন প্রতিরাতেই সিলেট শহরের কালীঘাটসহ সমগ্র দেশে পাঁচার করছে শত শত ড্রামট্রাক, কাভারভ্যাণ, ডিষ্ট্রিক ট্রাক, এইচ পিক-আপ, মাইক্রোবাস ভর্তি চোরাই চিনি।

 

অনুসন্ধানে প্রতিবেদক নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে একাধিক চুরাকারবারীদের সাথে মুঠুফোনে যোগাযোগ করলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্ত এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা আবুলের মাধ্যমে সিলেট শহরে অবৈধ ভারতীয় চিনি এনে থাকি। প্রশাসন এই মালগুলো ধরে না কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে চোরাকারবারীরা বলেন ভাই, প্রশাসন তো আবুল ভাই নিয়ন্ত্রণ করে। আর রাস্তার টহল পুলিশকে গাড়ি প্রতি আগে পাঁচশত টাকা করে আমরা দিতাম এখন তা সাতশত করে দিলেই হয়। আর কালীঘাট পর্যন্ত মাল পৌঁছানোর জন্য ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গুটিকয়েক নেতাকে গাড়ি প্রতি তিন হাজার টাকা করে দিলে আমাদের আর কোন অসুবিধা হয় না। ছাত্রলীগ যুবলীগ কাদের টাকা দিতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে চোরাকারবারীরা ছাত্রলীগের জেলা ও আনুগত পর্যায়ের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা তাদের লাইনম্যানের নাম উল্লেখ করে বলেন, আপনি যদি ব্যবসা করতে চান তাহলে আমরা আবুল ভাইকে বলে সবকিছু ঠিক করে দেব। আপনি চিন্তা করবেন না। আবুল সহ কয়েকজন ব্যবসয়ায়ীকে প্রশ্ন করলে আবুল বলে পুলিশ নেতাদের ম্যানেজ করেই লাইন চালাচ্ছে এবং মিডিয়ার মুলধারার সাংবাদিকদের গাড়ি প্রতি ২ হাজার টাকা করে দেই তাদের নাম বলার কথা বললে, বলে এরা বড় বড় সাংবাদিক, বলে কথা এরিয়ে যায় আবুল। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের নাম বিক্রি করে চালিয়ে যাচ্ছে তার এই বুঙ্গার ব্যবসা।

 

সিলেটে রাতের আঁধারে প্রবেশ করছে শত শত ডিআই পিকআপ ভর্তি ভারতীয় অবৈধ চিনি। এ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন স্থানীয় পত্র পত্রিকা ও স্যাটেলাইট চ্যানেল ৭১ টিভিতে প্রকাশ করলেও থেমে নেই চোরাকারবারিদের গডফাদার কুখ্যাত চোরাকারবারি আবুল হোসেনের চোরাচালান বাণিজ্য। স্থানীয় এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন- শুধু চিনি নয়, ভারতীয় চিনির বস্তার ভেতরে আবুল ইয়াবা, ফেনসিডিল ও মাদকের চালান বহন করে থাকে।

 

এব্যাপারে মুঠোফোনে জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন- এনিয়ে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার থানা এলাকার কোন পুলিশ সদস্য এরকম কাজে জড়িত পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা হরিপুর বাজার এলাকায় চাঁদা উত্তোলন করছে তাদের খুঁজ নিয়ে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

সর্বশেষ খবর

………………………..