সিলেট ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৩৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় বালুমহাল যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বিলুপ্ত ঘোষণা ও নদীকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে এবং সেই মোতাবেক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে জোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
এ নদীর ইজারা বাতিল করে বালু উত্তোলন বন্ধে দুই সচিবসহ ১৩ জনকে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেছে বেলা।
মঙ্গলবার এ লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আইনজীবী জাকিয়া সুলতানা।
লিগ্যাল নোটিশ ভূমি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিন সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর এ লিগ্যাল নোটিশের জবাব সাত দিনের মধ্যে বেলাকে অবহিত করতে অনুরোধ জানানো হয়।
এ সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আইনজীবী জাকিয়া সুলতানা।
নোটিশে বলা হয়- যাদুকাটা নদী একটি সীমান্ত নদী। এ নদী ভারতের খাসিয়া-জৈয়ন্তা পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ নদীতে দুটি বালুমহাল রয়েছে যা যাদুকাটা-১ এবং যাদুকাটা-২ বালুমহাল নামে পরিচিত। যাদুকাটা-১ বালুমহালটি তাহিরপুর উপজেলার চালিয়ারঘাট মৌজায় এবং যাদুকাটা-২ বালুমহালটি বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর মৌজার চালিয়ারঘাট, লাউর এবং ইকরাটিয়া মৌজায় অবস্থিত।
ইতোপূর্বে এ বালুমহাল দুটি ইজারা প্রদানের ফলে ইজারা নেওয়া ব্যক্তিরা বালুমহাল ও বালুমহালের বাইরে যত্রতত্র থেকে যান্ত্রিক উপায়ে বালু উত্তোলনের ফলে এশিয়ার বৃহত্তম পর্যটনকেন্দ্র শিমুল বাগান, বারেক টিলা, শাহ আরেফিন সেতু, বিজিবি ক্যাম্প, অদ্বৈত আখড়া, লাউড়েরগড় বাজার, বিন্নাকুলী বাজার, ঘাগটিয়া, গড়কাটি, মোদেরগাঁও, পাঠানপাড়া, কুনাটছড়া, সোহালা, মিয়ারচর ও সত্রিশ গ্রামের অসংখ্য ঘরবাড়ি ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মর্মে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখিত, বালুমহাল দুটি ১৪৩১ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা প্রদান থেকে বিরত থাকতে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। এছাড়া বালুমহাল দুটি ইজারা প্রদান না করার দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।
নোটিশে আরও বলা হয়, নিয়ম না মেনে ইজারা দেওয়ার পরে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশ, প্রতিবেশ বা জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট বা সরকারি বা বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা জনস্বাস্থ্য বা জনস্বার্থ বিঘ্নিত হবার আশঙ্কা থাকলে উত্তোলিত বালু পরিবহণের কারণে বিদ্যমান সরকারি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে জেলা প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনারের অনুমোদনক্রমে বালুমহাল বিলুপ্ত ঘোষণা করতে পারবে কিন্তু যাদুকাটা নদীতে বালুমহাল ঘোষণার ক্ষেত্রে বালু উত্তোলন সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালার বিধান প্রতিপালন করে কোনোরূপ হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ পরিচালনা করা হয়নি।
এ সময় যাদুকাটা নদীর সংকটাপন্ন অবস্থা তুলে ধরে এলাকাবাসী এবং বেলার পক্ষ থেকে ইজারা বাতিল ও বালুমহাল বিলুপ্ত করতে জেলা প্রশাসককে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হলেও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়নি। উপরন্তু বিগত ২৫ জানুয়ারি, যাদুকাটা নদীতে বিদ্যমান উল্লেখিত বালুমহাল ১৪৩১ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা প্রদানের দরপত্র আহবান করা হয়েছে; যা প্রচলিত আইনের পরিপন্থি।
এ ব্যাপারে বেলার সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক আইনজীবী শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, সুনামগঞ্জে জেলার জন্য বিরাট ঐতিহ্য বহন করে যাদুকাটা নদী। তবে প্রতিবছর ইজারার নামে যাদুকাটা এবং যাদুকাটার পরিবেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে। যার ফলে আমরা বেলা লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি যেন যাদুকাটার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখানে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, বেলার এ সংক্রান্ত কোনো নোটিশ পাইনি। যাদুকাটা ইজারার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে গেল বছরের চেয়ে এ বছর এ মহালে কম ইজারা মূল্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে বালু ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, যাদুকাটা নদী-১ ও ২ দুটি বৃহৎ বালু মহাল গেল বছরের ইজারামূল্য ছিল ৫৪ কোটি ৯২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এ বছর (১৪৩১ বঙ্গাব্দ) ইজারামূল্য উল্লেখ করা হয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd