সিলেটে খাস জমি জবরদখলকারী জামাল পাশার কাছে অচল দেশের আইন-কানুন!

প্রকাশিত: ২:১৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪

সিলেটে খাস জমি জবরদখলকারী জামাল পাশার কাছে অচল দেশের আইন-কানুন!

মোঃ রায়হান হোসেন:
সিলেট সদর উপজেলার পাহাড় ও টিলা ঘেরা আখালিয়ার টিলার গাঁও এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস জমি জবরদখল করে অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ উঠছে সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মির্জা জামাল পাশার বিরুদ্ধে।

 

১৯৫৬ ইং তারিখের এস/এ রেকর্ড অনুযায়ী সরকারি ২১৪০ নং দাগের ৬.৬০ একর খাস টিলায় মুক্তিযোদ্ধা পল্লী গড়তে ২০১১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও লিজ পাননি মির্জা জামাল পাশা। প্রকাশ্যেই মির্জা জামাল পাশার এমন দখলবাজি চললেও মুখে কুলুপ এঁটেছেন সিলেট সদর উপজেলা প্রশাসন, সিলেট জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয়ও থানা পুলিশের কর্মকর্তারা। ফলে বেপরোয়া অবস্থা হয়েছে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশার। তার বিরুদ্ধে কোটি টাকার সরকারি খাস জমি জবরদখল ও বিশাল কয়েক শত ফুট উঁচু টিলা কেটে প্লট বাণিজ্যের মারফতে মুক্তিযোদ্ধা পল্লী গড়ে তোলার বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একের পর এক লিখিত অভিযোগ করেও কেউ কোনো সুবিচার না পাওয়ায় এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশা। বর্তমানে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন সাবেক এই কমান্ডার। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার অপকর্মের সংখ্যা দিন দিন শুধু বেড়েই চলেছে। তার বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের রয়েছে একাধিক অভিযোগ থাকলেও তার কাছে অচল দেশের প্রচলিত আইন-কানুন!

 

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- বিগত ২১/০১/২০২০ ইং তারিখে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশা গং এর বিরুদ্ধে সরকারি খাস জমি জোরপূর্বক জবরদখল ও জমি হইতে গাছ কেটে বিক্রি করছেন মর্মে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন রজনী কান্ত দাস ও অনীল দাস গং।

 

বিগত ২৩/০১/২০২০ ইং তারিখে উক্ত এলাকার বসবাসরত ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট এর বরাবরে টিলা ও গাছ রক্ষার্থে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশা গং এর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহিম ও বিগত ১৩/০২/২০২০ ইং তারিখে এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও পুলিশ কমিশনার সিলেট বরারবরেও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশা গং এর বিরুদ্ধে প্রভাব খাটাইয়া সরকারি খাস জমি বিভিন্ন লোকজনের নিকট জোরপূর্বক বিক্রয় করছেন মর্মে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহিম।

 

বিগত ২৮/০১/২০২০ইং ও ০৬/০২/২০২০ ইং তারিখে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশা গং এর বিরুদ্ধে সরকারি অনুমোদন ছাড়া ব্যাক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে সরকারি খাস খতিয়ানের জমি লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে দালাল ও রাজাকারদের ছেলে-মেয়েদের নিকট বিক্রি ও গরীব মুক্তিযোদ্ধাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করছেন মর্মে মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়, সিলেটের দূর্নীতি দমন কমিশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিলেট জেলা প্রশাসক ও সিলেট সদর ভূমি কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহিম।

 

বিগত ০৮/০৬/২০২১ ইং তারিখে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশা গং এর বিরুদ্ধে সরকারি অনুমোদন ছাড়া ব্যাক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে গরীব মুক্তিযোদ্ধাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করছেন মর্মে এয়ারপোর্ট থানায় সাধারণ ডায়েরী দাখিল করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহিম, যাহার নং- ৩৪৬।

 

এতো লিখিত অভিযোগের পরও সরকারি খাস জমি জবরদখল ও টিলা কেটে প্লট বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধা পল্লী গড়ার নায়ক সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশা গং এর বিরুদ্ধে অদৃশ্য কারণে কার্যকরী আইনী ব্যবস্থা নিতে এখনোও হিমশিম খাচ্ছেন থানা পুলিশ, সিলেট সদর উপজেলা প্রশাসন, সিলেট জেলা প্রশাসক, সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেটের দূর্নীতি দমন কমিশন ও মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কি এমন অদৃশ্য শক্তি যার ফলে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশা গং এর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে ভয় পাচ্ছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সেখানে বসবাসরত অসহায় প্রায় ৫০টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের স্বজনদের মনে।

 

উল্লেখ্য, বিগত ২০/১০/২০২০ ইং তারিখের সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন এয়ারপোর্ট থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার প্রবাস কুমার সিংহ এর লেখা একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন সুত্রে জানা গেছে- জেলা প্রশাসক সিলেট কোন সমিতির নামে এস/এ রেকর্ড অনুযায়ী সরকারি ২১৪০ নং দাগের ৬.৬০ একর খাস টিলার জমি নিবন্ধন কিংবা হস্তান্তর করেননি তবে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশা প্রভাবশালী হওয়াতে উক্ত খাস টিলাটি তার দখলে রয়েছে।

 

প্রতিবেদনে আরোও বলা হয়েছে- উক্ত টিলার জায়গা বিভিন্ন লোকজনের নিকট প্রভাব খাটিয়ে বিক্রি ও যেখানে-সেখানে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশার শেল্টারে টিলা কেটে অপরিকল্পিতভাবে কাঁচা-পাকা ঘর তৈরি করে লোকজন বসবাস করছে। তবে তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং যেকোন সময় বৃষ্টি কিংবা অন্য কোন কারণে মাটি ধসে পরলে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় এবং পরিবেশ বাদীদের আশঙ্কা এই এলাকায় সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশার নেতৃত্বে যেহারে টিলা কেটে বসতঘর নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে আগামী বর্ষায় সেখানে ঘটতে পারে ভূমিধস সহ বড় ধরণের দুর্ঘটনা।

 

এব্যাপারে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশার ব্যক্তিগত সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য সংগ্রহ করা যায়নি।

 

এব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এর সরকারি সেলফোনে যোগযোগ করলে তিনি জানান- খাস জায়গার মালিক সরকার বিধায় উক্ত বিষয়টি দেখবালের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও সিলেট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় রয়েছেন। তারপরও এবিষয়ে উনারা যদি পুলিশের উপর কোন নির্দেশনা প্রদান করেন তা আমরা পালন করতে সবর্দা প্রস্তুত।

 

এব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাছরিন আক্তার এর সরকারি সেলফোনে যোগযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য সংগ্রহ করা যায়নি।

 

এব্যাপারে সিলেট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শেখ রাসেল হাসান এর সরকারি সেলফোনে যোগযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য সংগ্রহ করা যায়নি।

 

এব্যাপারে সিলেট জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ বদরুল হুদা এর সরকারি সেলফোনে যোগযোগ করলে তিনি জানান- আমরা ইতিমধ্যে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা জামাল পাশা গং এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পল্লী গড়ে দৃশ্যমান টিলা অবৈধভাবে কর্তণের সত্যতা পাওয়ায় কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছি। হেয়ারিং শেষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি প্রতিবেদককে আশ্বাস প্রদান করেন।

চলমান সংবাদ-০৫।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2024
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
242526272829  

সর্বশেষ খবর

………………………..