আখালিয়ায় টিলা কেটে গড়ে উঠছে আবাসন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব!

প্রকাশিত: ৭:৩৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪

আখালিয়ায় টিলা কেটে গড়ে উঠছে আবাসন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব!

মহানগর সংবাদদাতা: বিশিষ্টজনের দাবি সিলেট নগরীর আয়ত্ত বাড়ায় টিলা কাটায় নতুন মাত্রা পেয়েছে। শীত, বর্ষা সব মৌসুমেই চলছে টিলা কাটা। দেখা গিয়েছে মাটি কাটার পর টিলা যখন অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যায়, তখন জনগনের আইওয়াশ করার লক্ষ্যে অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। অন্যদিকে পরিবেশবাদীরা বলছেন, দিন দিন মানবসৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট। গত বর্ষা মৌসুমে এ ধরনের সংকট মোকাবেলা করতে হয়েছে সিলেটবাসীকে। যেখানে এক মাসে পৃথক টিলা ধসে প্রাণহানি ঘটেছিল অনেকের।

 

এদিকে এয়ারপোর্ট ও জালালাবাদ থানাধীন টিলার গাঁও, মুক্তিযোদ্ধা টিলা ও বড়গুলের বিশাল দুইটি টিলা কেটে গড়ে উঠছে আবাসন কিন্তু অদৃশ্য কারণে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগ এই দুটি টিলা কাটার সঙ্গে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর, আখালিয়া ভুমি অফিস ও থানা পুলিশের রয়েছে গভীর দহরম-মহরম। যার ফলস্বরূপ এসব দেখেও দেখছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

 

সরজমিনে দেখা গেছে- আখালিয়া টিলার গাঁও অবস্থিত সৈয়দা দিলারা হান্নান হলের উত্তর পাশের ২১০৭ নং দাগ, একই এলাকার হাজী আব্দুল গনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের ২১১২ এবং ২১৪০ নং দাগ যা বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা টিলা এবং বড়গুল এলাকার পূর্ব পাশের ২০৭৪ ও ২০৫৭ নং দাগের টিলা দিনে এবং রাতে কেটে গড়ে উঠছে আবাসন। কোন কোন স্থানে একতলা বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে।

 

টিলা কাটায় দেখে শ্রমিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তারা শুধু দফায় দফায় একটা কথাই বলছেন যে আমরা শ্রমিক মানুষ আমরা টাকার বিনিময়ে এখানে টিলা কেটে ঘর নির্মাণের কাজ করতে আসছি দয়া করে আমাদের কোন বিপদে ফেলবেন না বলে তারা কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিলার গাঁও এবং বড়গুল এলাকার একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা প্রতিবেদককে জানান- টিলার গাঁও ও বড়গুলের যে কয়েকটি টিলা কেটে গড়ে উঠছে আবাসন। পূর্বে এই টিলা গুলোর উচ্চতা কয়েক শত ফুট ছিলো। বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিনে এবং রাতে টিলা গুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। এখন প্রায় অস্তিত্ব সংকটে টিলাগুলো। টিলা কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর, সদর উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও আখালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস।

 

তারা বলেন- সম্প্রতি নগরীর আয়ত্ত বেড়েছে। এতে বাসযোগ্য জায়গার দাম ও চাহিদা বেড়েছে। এখনই যদি টিলা কাটা এবং বসত ঘর নির্মাণ বন্ধে কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে আগামী তে হুমকির মুখে পড়বে অত্র এলাকার পরিবেশ।

 

তারা আরোও বলেন মুক্তিযোদ্ধা টিলার ঢালে ঢালে টিলা কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে শতাধিক বসত ঘর। সামনের বর্ষায় আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে পাহাড় টিলা। তখন ঘটতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা। প্রশাসন থেকে এখনই ব্যবস্থা না নিলে টিলা ধস ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে।

 

‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী, ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক যেকোনো প্রয়োজনেই কোনো ধরনের পাহাড়-টিলা কাটা যাবে না। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে টিলা কাটা যেতে পারে। এ আইনের পরিপ্রেক্ষিতেও সিলেটে টিলা কাটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১১ সালের নভেম্বরে উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করে বেলা। ২০১২ সালে সেই রিটের রায়ে সিলেটে সব ধরনের টিলা কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন উচ্চ আদালত। সেই নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ রয়েছে। তবে বন্ধ হয়নি টিলা কাটা, কেউ কারো কথা যেন শুনছে না।’

 

উল্লেখ্য, গত ০৫ ফেব্রুয়ারি আখালিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিনকে টিলা কেটে বসত ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে মর্মে জানানো হলে তিনি তাৎক্ষণিক সৈয়দা দিলারা হান্নান হলের পাশের ঘটনাস্থলে গিয়ে টিলা কেটে ঘর নির্মাণ করার কাজ বন্ধ করেন কিন্তু বড়গুলের দুইটি স্থানের খবর জানালেও তিনি অদৃশ্য কোন কারনে সেখান না গিয়ে উল্টো সাংবাদিকের নাম্বার টিলা কাটার সাথে জড়িত ব্যক্তিকে দিয়ে সাংবাদিককে হুমকি-ধমকি প্রদান করান।

 

এ প্রসঙ্গে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরিন আক্তার এর সরকারি মোবাইল ফোনে দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে কল দিলে তিনি কল রিসিভ না করায় বক্তব্য সংগ্রহ করা যায় নি।

 

এপ্রসঙ্গে সিলেট মহানগর এসি ল্যান্ড মাহমুদ আশিক কবির এর সরকারি মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি কল রিসিভ না করায় বক্তব্য সংগ্রহ করা যায় নি।

 

এপ্রসঙ্গে জালালাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সাথে দেখা করে টিলা কেটে বসত ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে মর্মে জানানো হলে তিনি জানান- রাতের আঁধারে চুপ করে টিলা কাটা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এপ্রসঙ্গে এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নুনু মিয়া সাথে দেখা করে টিলা কেটে বসত ঘর নির্মাণ হচ্ছে মর্মে জানানো হলে তিনি জানান- ব্যক্তি মালিকানাদিন কারো কোন জায়গা হলে অভিযোগের ভিক্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি টিলা কাটা হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এপ্রসঙ্গে বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট জেলার সহকারী পরিচালক বদরুল হুদার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান টিলা কাটার অভিযোগ পেয়েছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চলমান পর্ব- ০১

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2024
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
242526272829  

সর্বশেষ খবর

………………………..