সিলেট ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৪৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪
নিজস্ব ডেস্ক: সিলেটে যুবদল নেতার শারীরিক নির্যাতনে তার আপন বোন যুব মহিলা লীগ নেত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে। ওই নেত্রী মারাত্মক আহত অবস্থায় গত ৩/৪ দিন ধরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এ ব্যাপারে তাদের মা বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
আহত যুব মহিলা লীগ নেত্রীর নাম সৈয়দা রুজিনা আক্তার। তিনি এয়ারপোর্ট থানার সুবিদবাজার এলাকার নূরানী ৮৪/১১ বনকলাপাড়া এলাকার পারভেজ আহমদের স্ত্রী। তিনি দুই সন্তানের জননী। রুজিনা সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক।
আর তাকে নির্যাতনকারী তারই সহোদর ৭নং ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক সৈয়দ আবু শাহিন আজাদ খোকন (৪০)। তিনি এয়ারপোর্ট থানার সুবিদবাজার এলাকার বনকলাপাড়াস্থ ১০৫/২৫ নূরানী আবাসিক এলাকার মৃত সৈয়দ তছির আহমদের ছেলে। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে শাহিন ওরফে খোকন তার বোনকে সিলেট জজ কোর্টেও ৫নং বার হলে হামলা চালিয়ে শারীরিক নির্য্যাতন করেন বলে সিলেট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে দায়েরকৃত মামলায় (নং কোতোয়ালি সিআর, ১১৬/২০২৪) তাদের গর্ভধারিনি জননী মৃত সৈয়দ তছির আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী সাহেনা বেগম (৬০) উল্লেখ করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ তছির আহমদের ৩ স্ত্রী। এরমধ্যে সবার বড় স্ত্রীর ছেলে-মেয়েরা যুক্তরাষ্ট্রে বসোবাস করছেন। তারা তাদের ছোটো মা, তছির আহমদের তৃতীয় স্ত্রী সামসুন নেহার সমছুনও তার একমাত্র সন্তানকে যাবতীয় সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তবে দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান সৈয়দ আবু নাইম আজাদ তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বাবার সম্পত্তির সঠিক হিস্যা তাদের বুঝিয়ে দিতে আগ্রহী হওয়ায় তার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তারা। তারা আবু নাইমের সহদোর ও ৭নং ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক সৈয়দ আবু শাহিন আজাদ খোকনকে (৪০) মোটা অংকের টাকা পয়সা দিয়ে তাদের পক্ষে টেনে নেন। খোকন প্রবাসী সৎ ভাই-বোনদের প্ররোচনায় নাইমের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে অন্তত ২০ থেকে ২২টি মামলা দায়ের করে অযথা হয়রানি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেন।
সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় (নং ৪/২০২৩) তাকে গ্রেফতার করা হয়। নাইমের পক্ষে আদালতে লড়াই করেছেন তারই আপন বোন রুজিনা ও মা সাহেনা বেগম। গত ১ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার জামিন শুনানীতে উপস্থিত হয়েছিলেন বোন রুজিনাসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। সেদিন আদালত নাইমের জামিন আবেদন মঞ্জুরের পর ৫নং বার হলে উপস্থিত হলে খোকন অপর তিন আসামি চন্দরপুর গ্রামের মোস্তাক আহমদের ছেলে জাহেদুল আজাদ জুয়েল, মাহবুবুল আজাদ লিটন, বিয়ানীবাজারের মেউয়ার কুটু মিয়ার ছেলে শাহিন আহমদসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে রুজিনাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে খোকনসহ অন্যান্যরা ৩ মাসের গর্ভবতি বোন রুজিনার গায়ে হাত তুলেন। তার পেটে লাত্থি এবং কিলঘুষি মারতে থাকলে তিনি মারাত্মক আহত হন। এমন কি তার মার সাথেও তারা খারাপ আচরণ করেন। তারা তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেন। পরে রুজিনাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও ডাক্তাররা জানান, তার গর্ভপাত ঘটেছে। বর্তমানে তিনি হাসপতালেই চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে আবু নাইম আজাদ জানান, যুবদল নেতা হলেও তার বড় ভাই খোকন একজন নেশাসক্ত মানুষ। তিনি ইয়াবাসহ অন্যান্য নেশায় আশক্ত দীর্ঘদিন ধরে। এর আগে বিভিন্ন মামালায় তিনি যেমন কারাগারে ছিলেন, তেমনি তাকে নেশামুক্ত করতে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার বিভিন্ন রিহ্যাব সেন্টারে পারিবারিক উদ্যোগে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু রিহ্যাব থেকে বের হওয়ার পরপরই আবার তিনি পূর্বাবস্থায় ফিরে যান এবং মাদকসেবনসহ নানা বিতর্কিত বেআইনী কাজে লিপ্ত হন। আর এসব কাজে তাকে ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছেন প্রবাসে থাকা সৎ ভাইবোন এবং দেশে অবস্থানরত চাচাতো ভাই ও অন্যান্য স্বার্থপর আত্মীয়-স্বজন। তারা অবিলম্বে তাকে এবং তার সঙ্গীদের গ্রেফতার কারে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ ও মামলা এবং বোনের উপর হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দ আবু শাহিন আজাদ খোকন বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আদালতের বার হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই তাদের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে আমার দায়েরকৃত মামলার প্রতিশোধ নিতেই এখন আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া নাইম আমার মা’র সন্তান হলেও পিতা আলাদা। তার বাবার নাম কামাল আহমদ। কিন্তু সে আমার বাবার নামে পরিচয় দিয়ে থাকে। আমি আমার বোনকে আঘাত করার প্রশ্ন উঠেনা। এসব মিথ্যা ষড়যন্ত্র।
নিজের মাদকাসক্ততা ও রিহ্যাব সেন্টারে থাকার বিষয়টিকেও তিনি ডাহা মিথ্যা অভিযোগ বলে উড়িয়ে দেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd