সিলেট ২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:১৮ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক, গোয়াইনঘাট: সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় হাতেগোনা কয়েকটি বধ্যভূমির মধ্যে অন্যতম বধ্যভূমি হলো পূর্ণানগর গ্রামে। অবহেলায় অরক্ষিত হয়ে আছে এই বধ্যভূমি। সরকারি উদ্যোগে ২০২২ সালে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হলেও এখনো সীমানাপ্রাচীরই নির্মাণ হয়নি সেখানে। সীমানাপ্রাচীর ও তদারকি না থাকায় বধ্যভূমিটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে।
উপজেলার পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নে গোয়াইন নদীর তীরে পূর্ণানগর গ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একটি ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। বিভিন্ন সময়ে সে ক্যাম্পে নিরীহ বাঙালীদের আটকে রেখে চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। সে সময় অনেক মানুষকে সেখানে গুলি করে হত্যা করে ভাসিয়ে দেওয়া হত গোয়াইন নদীতে। যায়গাটি বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হলেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে স্থানটি সংরক্ষণ করা হয়নি।
বিগত ২০২২ সালের জুন মাসে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ করে স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করে। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন বধ্যভূমিটি দখলে এনে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসানকে প্রধান করে স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে বধ্যভূমি চিহ্নিত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি যাচাই বাছাই করে স্থানটি চিহ্নিত করে। এবং স্বাধীনতার ৫২ বছর পর অবশেষে সেখানে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। তবে বেশ কিছু জায়গা জুড়ে থাকা বধ্যভূমিটি নদীগর্ভে থাকায় সেখানে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তাই নদীর তীরে ৬ শতক ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্মৃতিফলক নির্মাণের জন্য গ্রামের আতিকুর রহমান, হাফিজ উদ্দিন ও আবদুল মুতলিব জায়গাটি দান করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুর্ণানগর বধ্যভূমির যে স্থানে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে গরুর গোবর, মাছের শুঁটকি ও লাকড়ি শুকাতে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। গণকবরের স্থানটিতে সীমানাপ্রাচীর নেই। ঝোপঝাড়ে ছেয়ে যাওয়া গণকবরের জায়গায় চড়ে বেড়াচ্ছে গরু ছাগল। অপরদিকে বধ্যভূমিতে নির্মিত স্মৃতিফলকটি নদীর একদম কিনারে হওয়ায় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। যে কোন মুহুর্তে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন- বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, এখানে আমাদের সহযোদ্ধারা শহীদ অবস্থায় শুয়ে আছেন, এখানকার অগোছালো পরিবেশ দেখতে আমাদের ভীষণ কষ্ট হয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন- ‘এখানে গরু-ছাগল চড়ে বেড়ায়, আমাদের অনেক কষ্টের আন্দোলনের ফসল এই স্মৃতিফলক, সেটাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক জানান- যারা এখানে শুঁটকি মাছ কিংবা গোবর শুকাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে এবং শীঘ্রই এখানে গার্ড ওয়াল নির্মাণসহ স্মৃতিফলকটি রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd