সিলেট ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৩৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪
ক্রাইম প্রতিবেদক: সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের চাতল হাওর ও খামার টিলার মধ্যবর্তী আনুয়া এলাকা। গত রোববার দুপুরে একটি এক্সক্যাভেটর ওই এলাকার একটি ফসলি জমি থেকে মাটি কাটছিল। যন্ত্রদানবটি একের পর এক ট্রাকে বোঝাই করছে মাটি। পাশে বসে সেই দৃশ্য দেখছিলেন চারজন লোক।
মাটি কাটার ধরন দেখে মনে হবে– সেখানে কোনো পুকুর খনন হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে সেখানে কোনো পুকুর খনন হচ্ছে না। জমির মালিক মাটি বিক্রি করায় ইচ্ছে মতো গভীর গর্ত তৈরি করে তুলে নেওয়া হচ্ছে মাটি। এভাবে আনুয়ার ফসলি জমির বুক খুবলে খাচ্ছে এক্সক্যাভেটর।
প্রতি বছর শীত মৌসুম এলেই বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমির ওপরের অংশ (টপ সয়েল) কাটার ধুম পড়ে। এতে উর্বরতা হারাচ্ছে জমি, পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমি থেকে সাধারণত এক ফুট থেকে দুই ফুট পর্যন্ত মাটি খনন করা হয়। কিন্তু আনুয়ার দৃশ্যটি আলাদা। গভীর গর্ত করে মাটি তুলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে। অবৈধভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হলেও দেখার কেউ নেই।
সরেজমিন দেখা যায়, চাতল আনুয়া এলাকায় স্থানীয় চান মিয়া, হানিফ আলী, ফারুক মিয়াসহ কয়েকজনের জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। একই এলাকার মখলিছুর রহমান নামে আরেক জমির মালিকও তাঁর জমি থেকে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি তুলছেন। মখলিছুর সমকালকে জানান, তিনি মাটি বিক্রি করেননি। প্রয়োজনে তাঁর জমির ওপরের অংশ কেটে অপর জমি ভরাট করা হয়েছে। এখন সেখানে দুই ফসল আবাদ করা যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আনুয়া এলাকায় ফসলি জমি থেকে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কাটার নেপথ্যে রয়েছেন টুকেরবাজার ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা হারুন মিয়াসহ আরও কয়েকজন। ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন জমির মালিক থেকে প্রশাসন– সব কিছু ম্যানেজ করেন। পরে ফসলি জমির মাটি কেটে বাসাবাড়ি, হাউজিং প্রকল্পে ভরাট কাজে ব্যবহারে বিক্রি করছেন।
মাটি ভরাট ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন ৫০ থেকে ৮০টি ট্রাকে করে মাটি শুধু চাতল হাওরের আনুয়া এলাকা থেকেই কেটে নেওয়া হচ্ছে। এসব মাটি স্থানীয় বারাকা সিটি হাউজিং প্রকল্পের বাসিন্দা ছাড়াও আশপাশের এলাকার লোকজন কিনে নিচ্ছেন। শুধু আনুয়া এলাকাতেই নয়, সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি থেকে মাটি তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। সিলেট সদরের চাতল ছাড়াও একই উপজেলার খাদিম হাতুড়া এলাকায়ও জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় একটি সিরামিক কোম্পানি ওই মাটি কিনে নিচ্ছে।
অভিযোগ বিষয়ে ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন জানান, তিনি ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত নন। কে বা কারা মাটি কেটে বিক্রি করছে, তিনি জানেন না।
অন্যদিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার সুরমা নদীর তীরবর্তী কৃষিজমি থেকে মাটি তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় কামিল উদ্দিন ও তাঁর ভাগনে শফিক উদ্দিনসহ কয়েক ব্যক্তি একটি ব্রিক ফিল্ডে মাটি সরবরাহসহ বসতবাড়ি নির্মাণ ও ভরাট কাজে মাটি বিক্রি করছেন। একইভাবে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার উত্তর কুশিয়ারা ও উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নের কিছু এলাকার ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ চৌধুরী জানান, এভাবে মাটি তুলে বিক্রি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
সদর উপজেলা ইউএনও নাসরিন আক্তার বলেন, এ বিষয়ে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গর্ত করে কেউ ফসলি জমির মাটি তুলতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখে থাকে। তবে ফসলি জমির মাটি যদি ইটভাটায় যায় তখন পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নেয়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd