সিলেট ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:২০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২৩
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর টুকেরগাঁও এলাকার তরুণ সুরুজ্জামান বিয়ে করেছিলেন বছরখানেক আগে। তার ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রিতা আক্তারকে চিকিৎসা ও দেখাশোনার সুবিধার জন্য সুনামগঞ্জের নিজ বাড়িতে নিতে এসেছিলেন নানা একাব্বর আলী। দু’দিন থেকে বৃহস্পতিবার সকালে নাতনিকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন একাব্বর আলী। সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ও তার নানাকে কোম্পানীগঞ্জ স্টেশন এলাকা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেন সুরুজ্জামান। তবে নানার বাড়ি আর পৌঁছাতে পারেননি রিতা।
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়কের গোয়াইনঘাট উপজেলার সুন্দ্রাগাঁও এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে রিতা ও তার নানার। ওই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। আহত হয়েছেন শিশুসহ চারজন।
ফলে দুর্ঘটনায় নিজের সাথে গর্ভের সন্তানকে নিয়ে গেলেন রিতা। আর সন্তানের মুখ দেখা হলো না সুরুজ্জামানের।
স্ত্রীকে হারিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ সুরুজ্জামান। তিনি কোনো কথাই বলতে পারছেন না। সুরুজ্জামানের বোন তানিয়া বেগম জানান, তাঁর ভাইয়ের সুখের সংসার ছিল। অনাগত সন্তান নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর নানা স্বপ্ন ছিল। অথচ সেই সন্তানের মুখ আর দেখা হলো না।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ঢাকার মানিকগঞ্জ থেকে ১০ পর্যটক নিয়ে সিলেট যাওয়া একটি মাইক্রোবাস সকালে কোম্পানীগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথরের দিকে যাচ্ছিল। পথে গোয়াইনঘাটের পিয়াইনগুল কাজী কলিমুল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে চাকা ফেটে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। মাইক্রোবাসটি সেখানে রিতাদের অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে দুটি গাড়িই ছিটকে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশাচালকসহ ছয়জন প্রাণ হারান। আর আহতদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর মারা যান মাইক্রোবাসচালক।
নিহতরা হলেন– কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কালীবাড়ি গ্রামের প্রয়াত আছদ্দর আলীর ছেলে কলেজ শিক্ষক মাওলানা আমির উদ্দিন, ইসলামপুর গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে মো. কালন (৩০) ও গোয়াব আলীর ছেলে জালাল মিয়া, রণিখাই বতুমারা গ্রামের ইদ্রিছ আলী, সুরুজ্জামানের স্ত্রী রিতা আক্তার (১৯), তার নানা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাগলী গ্রামের একাব্বর আলী (৬০) এবং ঢাকার হেমায়েতপুরের বাসিন্দা মাইক্রোবাসচালক তাহের মিয়া (৪৫)।
মানিকগঞ্জ থেকে বেড়াতে যাওয়া মাইক্রোবাসের যাত্রী আরিফুল ইসলামের জানান, দুর্ঘটনায় তার ভাই সোলেমানসহ দুই শিশু ভালোই আঘাত পেয়েছে। অন্যরা সামান্য আহত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, তাঁরা ভোরে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে পৌঁছান। সেখানে নামাজ ও কবর জিয়ারত শেষে সাদা পাথরের উদ্দেশে রওনা দেন। পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জেলা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শ্যামল বণিক জানান, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহগুলো বৃহস্পতিবারই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd