সিলেট ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৪৬ অপরাহ্ণ, মে ২৭, ২০২৩
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শেখ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী (৬৫) নামে অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোররাতে উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে রফিকুল ইসলামের বড় ভাই শেখ সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ পরিবারের স্বজনদের দাবি, নিহত রফিকুলের স্ত্রী এবং কন্যারা তাঁর অবসর ভাতার টাকা ও পারিবারিক বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকী বাদি হয়ে ৬ জনকে অভিযুক্ত থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় নিহত রফিকুলের স্ত্রী, মেয়ে, জামাতাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ, মামলার অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। দুই বছর আগে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। তাঁর ঘরে ৫ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। অবসরের পর একমাত্র ছেলে শেখ আমিনুল ইসলাম সিদ্দিকীকে পেনশনের টাকায় আরব আমিরাতে পাঠান। ছেলেকে প্রবাসে পাঠানোর পর তাঁর কাছে অবশিষ্ট থাকা পেনশনের টাকার জন্য স্ত্রী মিছফা আক্তার সিদ্দিকা ও মেয়েদের সাথে প্রায়ই ঝগড়াবিবাদ লেগে থাকত। এনিয়ে শেখ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম পাখির উপস্থিতিতে একাধিকবার পারিবারিক শালিসী বৈঠক হয়। সর্বশেষ শুক্রবার (২৬ মে) রাত ১০টার দিকে পারিবারিক বিরোধের ঘটনায় রফিকুল ইসলামের ভাই সিরাজুল ইসলামসহ স্বজনদের উপস্থিতিতে পারিবারিক শালিসী বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সবাই চলে যান। পরে রাত দেড়টার দিকে সিরাজুল খবর পেয়ে তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান রফিকুলের লাশ ঘরের বারান্দায় পড়ে আছে। সিরাজুল বিষয়টি জেনে স্থানীয় ইউপি সদস্যর মাধ্যমে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রফিকুলের লাশ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল তৈরি করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মৌলভীবাজার মর্গে প্রেরণ করে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত রফিকুলের স্ত্রী মিছফা আক্তার সিদ্দিকা (৫৫), মেয়ে শেখ শারমিন আক্তার সিদ্দিকা (৩৫), শেখ তাজরিন আক্তার সিদ্দিকা (৩০) ও তাজরিনের স্বামী মেহেদী হাসানকে (৩২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মেহেদী হাসানের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। তিনি সিলেট শহরে বসবাস করন।
রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর ভাই সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার ছোট ভাই রফিকুল চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁর পেনশন বাবদ প্রাপ্ত ৫২ লাখ টাকা নিয়ে সবসময় ঝগড়া-বিবাদ হতো। আমার ভাইয়ের স্ত্রী মিছফা আক্তার ও তাঁর মেয়েরা পেনশনের টাকা নিজেদের কাছে নেওয়ার জন্য রফিকুলকে প্রায় সময় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতো। ভাইয়ের স্ত্রীর আচরণের পরিবর্তনের জন্য তাকে নিয়ে স্বস্ত্রীক উমরাহ হজও পর্যন্ত করেছিল আমার ভাই। এ নিয়ে আমরা আমাদের ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যসহ বেশ কয়েকবার পারিবারিক শালিসী বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেছি। শুক্রবার রাতেও এ সংক্রান্ত বিবাদের জন্য পারিবারিক শালিসী বৈঠকে বসে সমাধান করি। পরে আমরা আমাদের বাড়িতে চলে যাই। রাতে খবর পেয়ে রফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখি তাঁর লাশ ঘরের বারান্দার মেঝেতে জখমী অবস্থায় পড়ে আছে। আমার ভাইকে তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও মেয়ে জামাতা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে ধারণা করছি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম পাখি বলেন, ‘রফিকুল সম্পর্কে আমার মামা। আমার মামা রফিকুলের সাথে ভাতার টাকা ভাগভাটোয়ারা নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি করতেন মামি, তাঁর মেয়ে ও মেয়ে জামাতারা। একাধিকাবার বৈঠকে বসে পারিবারিকভাবে বিষয়টি আমরা সমাধান করার চেষ্টা করেছি। মামার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে ধারণা করছি এটি পরিকল্পিত হত্যা হতে পারে।’
থানায় পুলিশী হেফাজতে থাকা রফিকুলের মেয়ে শারমীন ও তাজরীন কলেন, ‘আমাদের বাবা মানসিক রোগী ছিলেন। এ জন্য আমাদের সাথে বাবা প্রায়ই খারাপ আচরণ করতেন। শুক্রবার রাতে তাঁকে খাবার দিতে বিলম্ব হওয়ায় বাবা (রফিকুল) আমাদেরকে গালিগালাজ করেন। পরে ঘরের ভিতর আমাদেরকে রেখে তিনি বের হয়ে যান। পরে দরজা ভেঙে বের হয়ে দেখি বাবা বারান্দার মেঝেতে পড়ে আছেন।’
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ জানান, পুলিশ সুরতহালের সময় নিহতের মাথার পেছনে আঘাত এবং গলায় নখের আচড়ের চিহ্ন পেয়েছে। রফিকুলের ভাই সিরাজুল ইসলাম ৬ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দিয়েছেন। রফিকুলের স্ত্রী, মেয়ে এক মেয়ের স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd