কোম্পানীগঞ্জে বেপরোয়া মামা-ভাগ্না গ্রুপের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৯:৪৭ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২৩

কোম্পানীগঞ্জে বেপরোয়া মামা-ভাগ্না গ্রুপের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ পত্রিকার উপজেলা  প্রতিনিধির উপর হামলার দীর্ঘ ১৫ দিন পর প্রাণের নিরাপত্তা চেয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মঈন উদ্দিন মিলন নামের এক গণমাধ্যমকর্মী। ডায়েরি নং ৮৯৫।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩ মে বুধবার সকাল সারে ৯টায় উপজেলার ধলাই নদী সংলগ্ন দয়ারবাজারের কিনারঘেষে যন্ত্রদানব খ্যাত মিনিবোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ছবি তুলতে গেলে মামা-ভাগনে গ্রুপ নামে পরিচিত সাহাব উদ্দিন ও রাসেল মিয়ার বাহিনীর হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হোন মঈন উদ্দিন মিলন নামের এক গণমাধ্যমকর্মী। ঘটনার পরপরই থানায় অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলেও সাহাব উদ্দিন ও রাসেল মিয়ার ভয়ে থানায় অভিযোগ দিতে পারছিলনা হামলার শিকার সেই গণমাধ্যমকর্মী। অবশেষে ঘটনার ১৫ দিন পরে থানায় জিডি করেন তিনি। মামা-ভাগ্নার ভয়ে মারধরের ঘটনাটি জিডিতে উল্লেখ না করলেও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থচিন্তা করেই জিডি করেছেন বলে জানান সাংবাদিক মঈন উদ্দিন মিলন। মঈন উদ্দিন মিলন আরও জানান, হিংস্র এই বাহিনীর ভয়ে গত ১৫ দিন থানায় অভিযোগ কিংবা জিডি করতে আতঙ্কগ্রস্ত ছিলাম।
পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত যন্ত্রদানবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দয়ারবাজার,লিলাইবাজার এলাকার একাধিক ব্যক্তি সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে গভীর রাতে লিস্টার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করেন সাহাব উদ্দিন ও তার ভাগ্না রাসেল। নিজেকে পুলিশের লাইনম্যান পরিচয় দিয়ে লিলাইবাজার ও দয়ারবাজার ঘেঁষে দীর্ঘদিন যাবত যন্ত্রদানব মিনি বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করে আসছে। এই যন্ত্রদানবের সাহায্যে গভীরগর্ত করে পাথর উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ ও প্রবাহ-পালটে নদীঘেষা গ্রাম ও হাটবাজার বিলীন করে দিচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে নিরব থাকায় জনমনে নানানপ্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে।
জানা যায়, অর্ধ যুগ ধরে ধলাই নদীতে একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছে সাহাব উদ্দিন ও রাসেল মিয়ার নেতৃত্বাধীন মামা-ভাগনে গ্রুপ। ২০১৫ সালে ভোলাগঞ্জের কলেজ ছাত্র শামিমকে কুপিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে এই গ্রুপটি আলোচনায় আসেন। শামিম হত্যাকান্ডের ঘটনায় সাহাব উদ্দিনকে এক নাম্বার এজাহারনামীয় আসামি করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও নিহত শামিমের পরিবার নিরীহ প্রকৃতির হওয়ায় আসামীরা সাজা ভোগ করতে হয়নি। প্রাণ ভয়ে আপোষ নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হয় শামিমের পরিবার। শামিম হত্যাকান্ড ছাড়াও আরও এক পাথর শ্রমিম হত্যার আসামি সাহাব উদ্দিন। ধলাই নদীর পাথর সাম্রাজ্য দখলকে কেন্দ্র করে একাধিক মামলার আসামী হয়েছেন সাহাব উদ্দিন ও তার ভাগ্না রাসেল মিয়া। তবুও থামছেনা তাদের ক্ষমতার ঘোড়া। দিনকেদিন যেন বেপরোয়া হয়ে উঠছে এই বাহিনী। থানা প্রশাসনের সাথে এই বাহিনীর সখ্যতা থাকায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পায় স্থানীয়রা।
স্থানীয় একাধিক সাংবাদিক তাদের অবৈধ সাম্রাজ্যের সংবাদ সংগ্রহকালে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিগত বছর কয়েক আগে জলিল ও ফখর নামে দুই গণমাধ্যমকর্মীকে লাঞ্চিত করেন সাহাব উদ্দিন ও তার ভাগ্না রাসেল মিয়া।
হামলার শিকার মঈন উদ্দিন মিলন গত ৩ মে তারিখে সংঘটিত ঘটনা বর্ণনায় প্রতিবেদককে বলেন, সেদিন সকাল সারে ৯টা কি ১০টা হবে। আমি নদীপাড় এলাকায় ছবি তুলতে গেলে সাহাব উদ্দিন ও তার ভাগ্না রাসেলের নেতৃত্বে ৭/৮ জনের একটি বাহিনী হামলা করেন।  হামলায় আমার নাক ফেটে গেছে। হামলায় আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিয়েছি। থানায় জিডি করেও তাদের ভয়ে বাড়ি ছাড়া আছি। সেদিন স্থানীয় কয়েকজন তাদের কাছ থেকে আমাকে উদ্ধার না করলে আমি ভোলাগঞ্জের শামিমের মতোই খুন হতাম। আমি এই চাঁদাবাজ চক্রের শাস্তি চাই। আমার প্রাণের নিরাপত্তা চাই। পরিবার নিয়ে বাচতে চাই।
সাহাব উদ্দিন ও তার ভাগ্না রাসেল বাহিনীর সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা অনুভব করে মঈন উদ্দিন মিলন কর্তৃক কোম্পানীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরির বিষয়টি নিশ্চিত করেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিল্লোল রায়। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবেন বলে জানান। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আস্বাস দেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..