সুনামগঞ্জে কৃষকের কার্ড হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী

প্রকাশিত: ৯:১০ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২৩

সুনামগঞ্জে কৃষকের কার্ড হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সুনামগঞ্জে বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ। আগামী রোববার সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হবে। প্রতি বছরের মতো এবারও মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষি কার্ড হাতিয়ে নিচ্ছে। ধান দেওয়ার লটারিতে তারাই সরবরাহ করবে শত শত কার্ড, তাতে বঞ্চিত হবেন প্রকৃত কৃষক।

বাজারে এখন ধানের দাম মণপ্রতি প্রকারভেদে ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা। সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করেছে প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ টাকা। সরকারি খাদ্যগুদামে একজন কৃষক সর্বোচ্চ তিন টন ধান বিক্রি করতে পারবেন।

সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করে এবার প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এই জেলা থেকে সরকার কিনবে মাত্র ১৭ হাজার ৪৮৩ টন ধান। এই ধানও প্রকৃত কৃষকরা দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তাঁরা।

জেলা কৃষি অফিসের কৃষক তালিকা অনুযায়ী সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় কৃষক আছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৭৭ জন। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী খাদ্যগুদামে প্রতি কৃষক তিন টন ধান দিলে জেলার মাত্র ৫ হাজার ৮২৭ জন কৃষক সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে পারবেন। ভাগ্যবান এই কৃষক হতে প্রতি বছরই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় কৃষকদের।

হাওরাঞ্চলে প্রতি বছরই সরকারি ধান কেনা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অনলাইনে ধান কেনাবেচায়ও কৌশলে নয়ছয় হয়। বিশেষ করে খাদ্যগুদামের অসৎ কর্মচারীদের যোগসাজশে কৃষকের কার্ড ব্যবহার করে মধ্যস্বত্বভোগীরা গুদামে বিপুল পরিমাণ ধান সরবরাহ করে। এবারও সেটির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

বুধবার দুপুরে ঝাওয়ার হাওরের পাশের খলায় ধান শুকাচ্ছিলেন সুনামগঞ্জ শহরতলির আপ্তাবনগরের কৃষক জহুর উদ্দিন। মধ্যস্বত্বভোগীদের গ্রামের কৃষকদের কৃষি কার্ড সংগ্রহ করার কথা জানিয়ে তিনি সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে না পারার কষ্টের জানালেন।

তিনি বলেন, ‘ধান তো ভালোই অইছে, অখন গোদামে যদি ধান বেচতাম পারতাম, তাইলে কয়টা টেকা পাইলাম নে (পেতাম), ইটা তো পারতাম নায়। আমরার গাঁওয়ে দুই-তিনজন ব্যবসায়ী আছে। এরা আস্তা (পুরো) গাঁওয়ের হকল কৃষি কার্ড সংগ্রহ করি লিব (করে নেবে)। অনলাইনে আবেদন করবো, যয়টা (যতগুলো) ঠিকে, হকলটিরে ৫০০-১০০০ টেকা দিয়া ধান গোদামে দিবো তারাই। আর আমরা যারা প্রকৃত কৃষক, তারার নাম দেখা যাইবো লটারিতে ওঠছে না। ইবারও আরম্ভ অই গেছে ই কাম (এই কাজ)।’

জহুর উদ্দিন জানান, গুদামে ধান কেনা শুরু হলেই কৃষি কার্ড সংগ্রহ করতে মধ্যস্বত্বভোগীরা গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি যায়। তাঁর মতে, যারা কৃষি কার্ড করেছে, তারাও কিছু অনিয়ম করেছে। অনেক রিকশাচালক ও ঠেলাচালককে কৃষি কার্ড দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুরের রাধানগরের কৃষক আব্বাস উদ্দিন জানান, গুদামে ধান কেনার যে লক্ষ্যমাত্র থাকে, তার অর্ধেক রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা দিয়ে দেন। বাকি অর্ধেকের মধ্যে ছোটখাটো ধানের ব্যবসায়ীরা একেকজন ৩০-৪০টি কার্ড সংগ্রহ করে জমা দেন। পরে লটারিতে যাঁদের নাম ওঠে, তাঁদের নামেই ব্যবসায়ীরা ধান দেন। কৃষকরা কেবল টাকা তুলে দেন। এ জন্য কৃষদের ওই ব্যবসায়ীরা টনে হাজারখানেক টাকা দেন। তাঁর মতে, কৃষকরা অনেক সময় ইচ্ছা করেই সরকারি খাদ্যগুদামে যান না। সরাসরি গেলে গুদামের কর্মচারীরা ধানে চিটা আছে, শুকনা কম এসব বলে হয়রানি করে। একই ভাষ্য বিশ্বম্ভরপুরের ব্রজনাথপুরের কৃষক সুধাংশু বিশ্বাস ও তাহিরপুরের বড়দলের কৃষক মিলন মিয়ার।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বেনু গোপাল দাস বললেন, প্রকৃত কৃষকদের আবেদন করানো গেলে এবং কৃষি অফিস তৎপর থাকলে কৃষি কার্ড কেনাবেচার সুযোগ থাকবে না। তিনি জানান, সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, দিরাই, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুরের ধান কেনা হবে অনলাইনের মাধ্যমে। ৭ মে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ভার্চুয়ালি সুনামগঞ্জের ধান কেনা উদ্বোধন করবেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..