সিলেট ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৩৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২৩
ক্রাইম প্রতিবেদক: সিলেট মহানগরের ফুটপাতে হকার বসিয়ে মানুষজনে চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি পাশাপাশি জনগনের উপর হামলা চালিয়ে সবকিছু লুটপাট করে নিচ্ছে হকার নামীয় চাদাঁবাজরা। নগরীর আনাচকানাচে গাড়ি পাকিং করাকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়তই এরকম হকারদের হামলা শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষজন। ঠিক তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে গতকাল রাত অনুমাণ ২ ঘটিকার দিকে জিন্দাবাজার পয়েন্ট সংলগ্ন খান ফ্যাশন নামীয় কাপড়ের দোকানের সামনে। জানা গেছে- দক্ষিণ সুরমা থানাধীন কতমতলি এলাকার এক ব্যবসায়ী তার ছোট ভাইদের নিয়ে শপিং করতে আসেন জিন্দাবাজার। মধ্য পথে গাড়ি থাকা ছোট ভাই আইসক্রীম খেতে চাইলে তিনি সিএনজি চালককে গাড়িটি ধার করাতে বলেন তখন চালক গাডিটি খান ফ্যাশনের সামনে ধার করান। ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে থাকা একজন হকার এসে গাড়িটি সড়ানোর জন্য বলেন জবাবে চালক এ যাত্রীরা বিনয়ের সহীত জানান যে আমরা একটা আইসক্রীম কিনে চলে যাবো বলা মাত্রই সেই হকারের ব্যবসায়ী যুবক তাকে মারপিঠ শুরু করে দেয় সেই সঙ্গে তাদের সঙ্গে আরো ১৫/২০ জন যুবক দেশীয় অস্ত্র লোহার পাইপ ও রড় নিয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়ে তাদের মারাত্মক জখম করে এক পর্যায়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ একজন কে গ্রেফতার করে থানা নিয়ে যায়।
জানা গেছে তাদের এতো দাপট দেখানোর পিছনে রয়েছে মহানগরের ফুটপাতে ওরা ১২ থেকে ১৪ জন চাঁদাবাজ। প্রকাশ্যে মেয়র ও কমিশনারের নামে চাঁদা উত্তোলন করলেও তাদের গ্রেফতার করার সাহস নেই পুলিশের। কারণ চাঁদাবাজদের কয়েকজন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী খুব কাছের লোক। বাকিরা বিভিন্ন রাজনৈতীক লেবাসদারী।
প্রকৃত চাঁদাবাজদের গ্রেফতার না করে প্রতিদিন ফুটপাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ধরে কোর্টে চালান দিচ্ছে পুলিশ। যাহা সম্পন্ন অমানবিক। চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে পুলিশের বিরুদ্ধেও, ডিউটি পার্টিকে নাকি টাকা দিয়ে ফুটপাতে চলে চাঁদাবাজী। এই চাঁদাবাজদের কারণেই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রায় অর্ধকোটি টাকা এখন অথৈ জলে।
মাত্র এক বছর আগে ডামাডোল পিটিয়ে নগরীর ফুটপাত হকারমুক্ত করতে লালদীঘির পারে হকারদের পূর্ণবাসন করেন মেয়র আরিফ। এতে হকার মার্কেটে শতশত ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু হকার বসানোর তালিকা নিয়ে দ্বন্ধ শুরু হলে সেই পূর্ণবাসনের বাজার এখন ছেলেদের খেলার মাঠে পরিনত হয়েছে। প্রথম দিকে সেই বাজারে যে কয় জন হকার বসতো তারাও এখন রাস্তায় চলে এসেছে অধিক লাভের আশায়। ফলে সিটি কর্পোরেশনের অর্ধশত কোটি টাকা এখন জলে।
মেয়র আরিফকে ও এখন আর ফুটপাত মুক্ত করতে লাটি হাতে দেখা যায় না রাস্তায়। কারণ এখন তার অনুসারীরা নিয়ন্ত্রণ করছেন সিলেট নগরীর সব কয়টি ফুটপাত। ফুটপাতের চাঁদার টাকায় মেয়রের বাসায় প্রায়ই নাকি দেশী মাছ, মাংসের বাজার-সদাই পাঠাতে হয়। এমন বক্তব্য ফুটপাতের রাজা নুরুল ও আহাদগংদের। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের জনৈক কর্মকর্তাও নাকি চাঁদা ভাগ বসান। যার ফলে সিটি মেয়র ও এসএমপি কমিশনারের হকারমুক্ত নগরী গড়ার সকল পরিকল্প ব্যর্থ হচ্ছে।
হকার বাণিজ্য আর চাঁদাবাজী বন্ধ করতে হিমসিম খাচ্ছে এসএমপির বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি ও কোতয়ালী থানা পুলিশ। হকারদের ভাষ্যমতে, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নামে ওপেন চাঁদা উত্তোলন করে চাঁদাবাজরা। অপর দিকে বিকাল হলেই এসএমপি কমিশনারের নির্দেশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুলিশ ৩/৪ জন ভাসমান ক্ষুদ্র হকারকে আটক করে আদালতে চালান দিচ্ছে। এক সময় সাবেক প্রয়াত মেয়র বদর উদ্দিন কামরানকে দায়ী করে বলা হতো তার অনুসারী রকিবের একক নিয়ন্ত্রনে সিলেট নগরীর সকল ফুটপাত। সময়ের ব্যবধানের সেই রকিবের নামে উঠে আংশিক চাঁদা এখনো উত্তোলন হয়।
কিন্তু এখন ফুটপাতের রাজা খোদ মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর আস্থাভাজন জাতীয়তাবাদী হকার্সদলের সভাপতি নুরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ। তাদের নিয়ন্ত্রণে দিনে রাতে ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে ১৫/১৬ জনের কয়েকটি চক্র। তাদের রাজনৈতীক পরিচয় ভিন্ন হলেও ফুটপাতে চাঁদাবাজীতে তারা ঐক্যজোট। ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর ফুটপাতের ১৬ চাঁদাবাজকে চিহ্নিত করে ছবিসহ আদালতে তালিকা দিয়েছিলেন মেয়র আরিফুল হক। আটক করা হয় হকার পরিষদের সভাপতি রকিবকে।
২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ৫০ লক্ষ টাকা খরছ করে পুরাতন হকার্স মার্কেটের ভেতরে একটি অস্থায়ী বাজার স্থাপন করেন মেয়র। নগরীর দখলকৃত ফুটপাতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় হর্কার বসা নিষেধ সম্বলিত সাইনবোর্ড। কিন্তু এখন আর এইসব সাইনবোর্ডের অস্থিস্তই নেই। সেই অস্থায়ী বাজার এখন খেলা মাঠ। রকিব জেলে থাকার সুযোগে ফুটপাতের চাঁদাবাজীর নিয়ন্ত্রন নেন হর্কাস দল নেতা আহাদ-নুরুল। অনুসন্ধান মতে ফুটপাত থেকে গড়ে প্রতিমাসে আদায়কৃত চাঁদার পরিমান কোটি টাকা। কিছু পুলিশের ভাষ্যমতে, পুলিশ আর মেয়রের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা উত্তোলন করে চাঁদাবাজরা নিজেরাই ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। তাহলে কেন সেসব চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করছেন না, এমন প্রশ্নের কোন উত্তর নেই কোন পুলিশ সদস্যর কাছে। প্রশ্ন হলো আসলে সেই সব চাঁদাবাজীর টাকা যায় কোথায়? এসএমপি কমিশনারতো নিজেই এসব চাঁদাবাজদের আটক করতে বারবার বলছেন, তবে কেন তাদের আটক করা হচ্ছেনা ?
হকারদের ভাষ্যমতে, ফুটপাতে চাঁদাবাজদের শীর্ষে আছেন জাতীয়তাবাদী হর্কাস দলের সভাপতি নুরুল ইসলাম, ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ। এই দুই রত্নের হাতেই নগরীর ১২শ হকারসহ বন্দবাজার ফাঁড়ি, কোতয়ালী পুলিশ এখন জিম্মি। কারণ তাদের কথা চলে গরীর ফুটপাত। সিসিক মেয়রের সাথে নাকি তাদের চুক্তি রয়েছে, মেয়রের যে কোন অনুষ্টান হলে, মিছিল সহকারে হকারদের নিয়ে আসতে হবে, তা ব্যক্তিগত হউক আর সরকার বিরোধী হউক। বিনিময়ে ফুটপাতে যা খুশি তারা করতে পারবে। নুরুল-আহাদের সাথে আছেন মুমিন ‘লেংড়া’ কামাল, সাব্বির, দাঁড়িওয়ালা একরাম, গেদু, উজ্জ্বল, ফারুক, রাসেল, মিজান, শামিম, সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী ‘সাজু’। শাহাজান উরফে প্যান্ট শাহাজান, শাহাজান সাজু। ইউসুফ উরফে (ইয়াবা ব্যবসায়ী ইউসুফ), সুমনসহ আরো কয়েকজন, এদের সকলের সাথে রয়েছে পুলিশের উঠাবসার গভির সম্পর্ক। ফলে হকার আটক করলে চাঁদাবাজদের আটক করেনা পুলিশ।
ফুটপাতে হাটাচলা করতে না পেরে অনেক পথচারী ক্ষোভের সাথে বলেন, সামান্য কয়েকজন চাঁদাবাজের কাছে কি সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, এসএমপির নিষ্টাবান পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ জিম্মি হয়ে আছেন? অসহায় ক্ষুদ্র হকারদের আটক করা হলেও এসব চাঁদাবাজদের কেন আটক করা হয়না? নাকি মেয়র-কমিশনার থেকে এসব চাঁদাবাজদের ক্ষমতা বেশী। তবে সচেতন মহলের প্রত্যাশা, এসএমপি কমিশনার একটু কঠোর হলেই ফুঁটপাতের এসব চাঁদাবাজ রুখে দেওয়া সম্ভব।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd