সিলেট ২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০২৩
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নকে দ্বি-খণ্ডিত করেছে পুরাতন সুরমা নদী। যে নদী দিরাই উপজেলায় প্রবেশ করে নাম ধারণ করেছে কালনী। নদীর পূর্বপাড়ে পাথারিয়া ইউনিয়নের একাংশ, পশ্চিম বীরগাঁও, জয়কলস ও পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের ২৫টিরও বেশি গ্রাম। পাথারিয়া বাজারে অর্থাৎ নদীর পশ্চিম পাড়ে আসতে পূর্ব পাড়ের চার ইউনিয়নের ২৫টিরও বেশি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের প্রচণ্ড রকমের দুর্ভোগ পেতে হতো। নদী পারাপার হওয়ার একমাত্র মাধ্যম খেয়া নৌকা। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় গোদারা। গোদারায় নদী পার হতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার স্বীকার হতে হয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসীকে। শিক্ষার্থীদের দেরি করে পৌঁছাতে হয়েছে বিদ্যালয়ে। অনেক সময় নৌকা না থাকায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় যেতে দেরি হতো। রোগী নিয়ে আসা ব্যক্তিদের পোহাতে হতো চরম বেগ। মাছ আর ধান ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা নেওয়ায় দু’টানা করতে হতো। খরচও পড়তো বেশি। এসব কারণেই সুরমা পাড়ের মানুষেরা স্বপ্ন দেখতেন কখন এ নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। এটি ছিলো পুরাতন সুরমার পূর্ব পাড়ের মানুষের স্বপ্ন। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এলাকাবাসীর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে। পাথারিয়া বাজার সংলগ্ন, সুরমা হাইস্কুল এন্ড কলেজের পশ্চিমাংশ ঘেঁষে, পুরাতন সুরমা নদীর উপর ১৯ কোটি ৭০ লক্ষ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১৭৫ মিটার সেতু। সেতুর দুইপাশের এ্যাপ্রোচ অর্থাৎ ইউপি রাস্তায় চেইনেজসহ সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ২৫০ মিটার।
জানা যায়, সেতুটির পর্বপাড়ে পাথারিয়া ইউনিয়নের কান্দিগাঁও, পুরাতন কান্দিগাঁও, আসামমুড়া, কাশিপুর, নারাইনকুড়ি, শ্রীনাথপুর, জাহানপুর, নতুন জাহানপুর, পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের জয়সিদ্ধি, বসিয়াখাউরি, বড়মোহা, দূর্বাকান্দা, শান্তিপুর, উলারপিঠা, শ্যামনগর, ঠাকুরভোগসহ সমস্ত ইউনিয়ন, পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের হাঁসকুড়ি, ধলমৈশা, কাউয়াজুরী, উমেদনগর ও উপ্তিরপাড় এবং জয়কলস ইউনিয়নের পশ্চিম দক্ষিণাংশের বেশ কয়েকটি গ্রামের চলাচল হবে এ সড়কে। সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে তৈরি করতে হবে সড়ক। শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে যে সড়ক ডুংরিয়া বাজার হয়ে রজনীগঞ্জ (টানাখালী) বাজারের দিকে গিয়েছে সে সড়কের সাথে সংযোগ সড়ক হলে উপজেলা সদরের সাথে পাথারিয়া ইউনিয়নের দূরত্ব কমে আসবে ১০ কিলোমিটারের উপরে। বর্তমানে দিরাইর সড়ক হয়ে শান্তিগঞ্জ যেতে ঘুরতে হয় ২০ কিলোমিটার। সেতুটির কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ হলে এবং ব্যবহার উপযোগি হয়ে উঠলে পাথারিয়া বাজার থেকে মাত্র ৭/৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে যাওয়া যাবে শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরে। এতে যেমন কমে আসবে দূরত্ব তেমনি উন্নত হবে মানুষের জীবনযাত্রার। বাঁচবে সময়। কমে আসবে অর্থ ব্যয়ও। সড়ক যে শুধু শান্তিগঞ্জ উপজেলার মানুষেরাই ব্যবহার করবেন তা তিন্তু নয়, দিরাই উপজেলার সিলেটগামী মানুষের প্রধান পছন্দ হতে পারে এ সড়ক। শিমুলবাক ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষজনও এই সড়ক ব্যবহার করবেন। সব মিলিয়ে সড়কটি শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাথে যেমন সড়কপথ কমিয়ে আনবে তেমনি লক্ষাধিক মানুষের উপকারেও আসবে।
বুধবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাথারিয়া ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে চলা পুরাতন সুরমা নদীর উপর নির্মিত সেতুটির মূল অংশের নির্মাণকাজ শেষ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধানে সেতুটির নির্মাণ কাজ করছে রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লি.। সেতুর পূর্ব এবং পশ্চিম পাড়ে মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে সংযোগ সড়ক। চলছে এ্যাপ্রোচের কাজ। সেতুটির উপরে রাখা আছে বেশ কিছু নির্মাণ সামগ্রী। উভয়পাড়ের মানুষ পায়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছেন সেতু। হেঁটে যাচ্ছেন কিছু শিক্ষার্থী।
নদীর পূর্ববাড়ের বাসিন্দা আসামমুড়া গ্রামের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী রেশমি আক্তার ও কান্দিগাঁও গ্রামের মানবিক বিভাগের ছাত্রী মুসলিমা বেগম বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিলো এ সেতু। আগে ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই চিন্তা থাকতো খেয়া নৌকা পাবো কি না। কোনো কারণে নৌকা মিস হলেই পরীক্ষায় যেতে দেরি হতো। কিছু দিন পর পর নৌকা ডুবতো। বই খাতা ভিজে সব নষ্ট হতো। দুর্বিষহ দিনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে।
দলিল লিখক অজিত দে, সংগঠক মনোয়ার হোসেন হিমেল, নারাইনকুড়ি গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী ফয়জুল হক ও পোল্টি্র মোরগের ব্যবসায়ী জামাল পাশা জানান, এ সেতু সম্পূর্ণ নির্মাণের পর উপজেলা সদরের সাথে আমাদের এলাকার দূরত্ব ১০/১২ কিলোমিটার কমবে। সহজেই ও কম সময়ে উপজেলায় গিয়ে কাজ করা যাবে। নদীর অপর পাড় থেকে মাছ নিয়ে এপাড়ে আসতে দুই তিনটা গাড়ি বদলাতে হতো। এখন আর সে কষ্ট করতে হবে না। সরাসরি মাছ আনা নেওয়া করা যাবে। দুর্ভোগ কমবে পূর্বপাড়ের মানুষে।
পাথারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, পুরাতন সুরমার উপরে সেতু ছিলো পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। পরিকল্পনামন্ত্রীর হাত ধরে এ স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে। আমার ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে পরিকল্পনামন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুব আলম বলেন, সেতুটির মূল অংশের কাজ শেষ। এখন বাকী দু’পাশের এ্যাপ্রোচের কাজ। প্রোটেকটিভ ব্লক বসানো হচ্ছে। সামান্য কাজ বাকী। এই জুনের মধ্যেই যে কোনো মূল্যে সেতুটির কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া আছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd