সিলেট ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৫৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০২৩
ক্রাইম প্রতিবেদক: ঈদকে সামনে রেখে ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে সিলেটে ঈদের কেনাকাটা আর সিলেটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী, পকেট চোর ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। প্রতিদিনই নগরীর কোথাও না কোথাও সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন মানুষজন। হঠাৎ করে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় গণপরিবহন থেকে শুরু রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
গত কয়েক বছরে সিলেটে অজ্ঞান পার্টির কর্মকাণ্ডের কথা খুব বেশি শোনা যায়নি। তবে ইদানীং প্রায়ই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অনেকেই হারাচ্ছেন সর্বস্ব। অজ্ঞান পার্টি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সচেতন নগরবাসী।
বিগত কয়েক বছর করোনার নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঈদ ও পূজায় মন মতো কেনাকাটা করতে পারেনি জনসাধারণ এবং পাশাপাশি লোকাসন গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। তবে এবার করোনার প্রভাব কমে আসায় নগরের বিপণি বিতানগুলোতে কেনাকাটা জমতে শুরু করেছে। জনসাধারণের ব্যস্ততা বাড়ায় নগরীতে অত্যাধিক বেড়েছে পকেটমার ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। আর চুরি, ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত শতাধিক কিশোর ও যুবক।
কয়েকদিন আগে বিয়ানীবাজার থেকে বাচ্চা নিয়ে সিলেট নগরে ঈদের কেনাকাটা করে ফেরার পথে মোবাইল, টাকা হারিয়েছেন এক নারী। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, জিন্দাবাজারে ব্লুওয়াটারসহ কয়েক মার্কেট ঘুরে কেনাকাটা করে ফিরছিলেন। বন্দরের হাসান মার্কেটের সামনে এসে দেখেন তার ভ্যানেটি ব্যাগের চেন খোলা। হাত দিয়ে দেখেন টাকা, মোবাইল নাই।
কয়েকটি ছোট ছেলে তাকে দীর্ঘ সময় অনুসরণ করে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমার ধারণা ওই ছেলেরা আমার ফোন, টাকা নিয়ে গেছে। এর আগে রমজানের প্রথম সপ্তাহে বন্দর বাজারে এক যুবকের কাঁধে থাকা ব্যাগ থেকে মানিব্যাগ, মোবাইল মোবাইল চুরি করছিলো চোর। বিষয়টি পেছনের আরেক পথচারী দেখে যুবককে বললে ওই যুবক চোরকে ধাওয়া দেন। এক পর্যায় কোর্টের নতুন বিল্ডিং এর পেছনের সড়ক থেকে চোরকে ধরে ফেলেন। পরে জনতা গণধোলাই দিয়ে তার কাছ থেকে দুটি স্মার্ট ফোন ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়। উৎসুক জনতা মোবাইল চোরকে গণধোলাই দিলে সে তার নাম বলে সুমন। তার প্রকৃত নাম সাকিল। নগরীর রংমহল টাওয়ারের পেছনে বসবাসকারী ঝাড়ু, আমিন, সমর তার সহযোগী বলে এক পর্যায় স্বীকার করে। পরে দৌড়ে পালিয়ে গেলে আর কেউ দাওয়া করেনি। চুরি ছিনতাইয়ের এমন ঘটনা নগরীতে প্রতিনিয়ত ঘটছে বলে জানা যায়।
নগরীর প্রাণ কেন্দ্র জিন্দাবাজার, বন্দর বাজার, সুরমা মার্কেট, সোবহানীঘাট কাঁচা বাজার, হুমায়ূন রশিদ চত্তর এলাকায় প্রতিদিন ছিনতাই ও পকেটমারের কবলে পড়ছেন জনসাধারণ। এছাড়াও নগরীর ওসমানী হাসপাতাল, মেডিকেল রোড, মদিনা মার্কেট, আম্বরখানা, শাহ্জালাল মাজার, চৌহাট্রা, শিবগঞ্জ, টিলাগড় পয়েন্ট, উপশহর রোজভিউ এলাকা, শাহ্জালাল ব্রিজ, ক্বীনব্রিজ ও কাজিরবাজার ব্রিজের দুই প্রান্তে প্রায় সময় ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা।
বাসে, সিএনজি অটোরিকশা ও ট্রেনেও যাত্রীদের পকেট মারছে ছিনতাইকারীরা। পুলিশ বলছে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে নগরীর বিপণি বিতান ও ব্যস্ততম এলাকায় পুলিশের নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। জনসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো নগরে পুলিশের টহল বারানো হয়েছে। তবে পুলিশের কাজ করার কিছু প্রমাণ মিলেছে।
নগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার দুটি টিম গত বৃহস্পতিবার একদিনে নগরীর কুমাপাড়া ও লামাবাজার থেকে ছিনতাইকারী জালাল উদ্দিন, শরীফ আহমদ, জসিম উদ্দিন ও আসলাম আহমদকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত চাকু। একই দিনে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ কদমতলীর হুমায়ূন রশিদ চত্তর থেকে ছিনতাইকারী আজিজুর রহমান, ইদ্রিস আলী, সায়মন ও ফারহান আহমদকে আটক করে। তল্লাশি করলে তাদের কাছে দুটি টিপ চাকু পাওয়া যায়। তার কয়েকদিন আগে দক্ষিণ সুরমার রেলগেট থেকে চাকুসহ রাজু আহমদ নামের এক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএম এর সাথে কথা হলে তিনি জানান- আমি থানার ইনচার্জের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে মোট ১৭জন ছিনতাইকারীকে অভিযান দিয়ে আটক করেছি। অভিযান অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজবাহার আলী শেখ পিপিএম এর সাথে কথা হলে তিনি জানান- নগরীতে সাদা পোশাকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম তৎপর রয়েছে। নগরীর প্রতিটা মার্কেটে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কোথাও কোনো অপরাধ সংগঠিত হলে পুলিশকে খবর দিতে তিনি জনসাধারণকে আহ্বান জানান।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd