সিসিক নির্বাচন: প্রার্থী নিয়ে বিভক্তি আওয়ামী লীগে

প্রকাশিত: ১১:০১ অপরাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০২৩

সিসিক নির্বাচন: প্রার্থী নিয়ে বিভক্তি আওয়ামী লীগে

ইয়াহ্ইয়া মারুফ :: বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। আমৃত্যু সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জননন্দিত নেতা ছিলেন। জীবনের শেষ দুবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় ‘বিভেদ’-এর কাছে পরাজিত হন তিনি। তবুও নগরবাসী তাঁকে ‘মেয়র সাব’ বলে ডাকতেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে কামরানের পরাজয় হয়। এরপর সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভেদের বিষয়টি সামনে আসে। তখনই মেয়র পদপ্রার্থীসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেয় হাইকমান্ড। পাশাপাশি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হয়।

২০২০ সালের ১৫ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিরবিদায় নেন সিলেটের ‘মেয়র সাব’। চলতি বছরের মাঝামাঝি সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই সিটিতে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন কামরান। তাই এবারের নির্বাচনে কামরানের স্থলাভিষিক্ত কে হচ্ছেন, তা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার মধ্যে কোন্দল-বিভক্তিতে মোড় নিয়েছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি।

বিভক্তি মেটানোর উদ্যোগ না নিয়ে, তাতে ঘি ঢেলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সব মিলিয়ে গত নির্বাচনে সিলেটে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের সবগুলো কারণ বিদ্যমান রয়েছে বলে অভিযোগ দলের নেতাদের।

সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। হঠাৎ করেই আসন্ন সিসিক নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেতে দলের হাইকমান্ড থেকে তাঁকে ‘সবুজসংকেত’ দেওয়া হয়েছে বলে নগরজুড়ে প্রচার শুরু করেন তাঁর অনুসারীরা। এরপর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আনোয়ারুজ্জামান। যদিও তিনি গত দুটি সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করেও পাননি।

আওয়ামী লীগে ক্ষোভ:

সিসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় আওয়ামী লীগের হাফডজন নেতা দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রয়েছেন। শেষ সময়ে এসে প্রবাসী নেতা আনোয়ারুজ্জামানের নাম আলোচনার শীর্ষে উঠে আসায় মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। ‘সবুজসংকেত’-এর সত্যতা নেই বলেও দাবি তাঁদের। দলীয়প্রধানের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

এদিকে, ৬ ফেব্রুয়ারি নগরে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বক্তব্য দেন। এরপরই প্রকাশ্যে আসে নগর আওয়ামী লীগের ক্ষোভ ও বিরোধ। নগর আওয়ামী লীগ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘সিসিক নির্বাচনে মেয়র মনোনয়ন নিয়ে দলীয় সভাপতির বরাতে নাদেলের বক্তব্য দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আমরা পাইনি। শৃঙ্খলাসহ দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট এবং বিভ্রান্তি না ছড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘বক্তব্য স্পষ্ট, বিভ্রান্তিমূলক কিছু বলিনি। তাঁরা তো ব্যাখ্যা চাইতে পারতেন। কোনো ধরনের কথাবার্তা ছাড়াই গণমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়াটা মনে হয় সুন্দর হয়নি।’

আর মেয়র পদে দলের অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও বসে নেই। দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম হাসান জেবুল, চারবারের সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদসহ কয়েকজন প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে নগরের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার-বিলবোর্ড লাগিয়ে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদও প্রার্থী হতে কাজ করে যাচ্ছেন। আর সাবেক মেয়র কামরানের ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু বাবার মৃত্যুর পর থেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ করছি। বিভাজন, ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ার কিছু নেই। তাঁরা আগে থেকেই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং যোগ্য। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই তাঁর সঙ্গে নৌকার জন্য কাজ করব।’

এদিকে নতুন কমিটি ঘোষণার পর অনেকটা চাঙা হয়েছিল সিলেট আওয়ামী লীগ। তবে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের মধ্যে ভেতরে-ভেতরে দূরত্ব সৃষ্টি হয় বলে জানান দলীয় নেতা-কর্মীরা। সম্প্রতি মেয়র পদপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান ইস্যুতে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। বর্তমানে সিলেট আওয়ামী লীগ দুটি বলয়ে বিভক্ত।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় দল। অনেকেই প্রার্থী হতে পারেন। বর্তমানে সবুজসংকেত আর গ্রিন সিগন্যাল বলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে—এটা দলীয় শৃঙ্খলা নয়। তাতে নেতায়-নেতায় বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দলের সভাপতি যাকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা তাঁর জন্য কাজ করব।’

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা এখানে বিভেদের কিছু দেখছি না। দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তাঁর সঙ্গে নৌকার জন্য কাজ করব। আমরা আলাদাভাবে কারও সঙ্গে আগে থেকেই থাকতে পারব না।’ সৌজন্যে : আজকের পত্রিকা

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

March 2023
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

সর্বশেষ খবর

………………………..