হাতের অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে কিডনি হারালেন দিনমজুর

প্রকাশিত: ১০:৩২ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৩

হাতের অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে কিডনি হারালেন দিনমজুর

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেট হাতের হাড় ভাঙার অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে কিডনি খোয়ালেন খছরু মিয়া নামের এক রোগী। অস্ত্রোপচারকালে তার কিডনি অপসারণ করা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী খছরু সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ফতেহগঞ্জ গ্রামের মৃত মোজাম্মিল আলী ছেলে। দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। হাসপাতালের কর্তব্যরতদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছেন খছরু মিয়া।
শুক্রবার (৩ মার্চ) আদালতের নির্দেশে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি মামলা রেকর্ড করা হয়।
মামলায় মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের ধারায় ইচ্ছাকৃতভাবে অপারেশনের মাধ্যমে কিডনি দেহের নির্দিষ্ট স্থান থেকে বের করে নিয়ে অঙ্গহানি করার অপরাধের ধারা যুক্ত করা হয়। সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত ০১ মার্চ দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দরখাস্ত মামলা করেন ভুক্তভোগী খছরু মিয়া। আদালতের বিচারক আবদুল মোমেন আবেদনটি আমলে নিয়ে মামলাটি রেকর্ড করে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলাটি তদন্ত করছেন থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) জুয়েল আহমদ।
তিনি আরও বলেন, মামলায় খছরু মিয়া কারও নাম উল্লেখ না করলেও গত বছরের ১৯ নভেম্বর হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করা সহকারী রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিবাদী করেছেন।
এদিকে মামলা দায়েরের পর নড়েচড়ে বসে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রশাসন। এ ঘটনায় মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. হিজবুল্লাহ জীবনকে প্রথান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রোববার (০৫ মার্চ) ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ঘটনাটি যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সার্জারি বিভাগের প্রধান, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি রয়েছেন। কমিটির সদস্যরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দেবেন।
মামলার এজহারে যা উল্লেখ করা হয়েছে দিনমজুর খছরু মিয়া কাজ করতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে বাঁ হাতের কনুইয়ের হাড় ভেঙে যায়। গত বছরের ১৮ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এরপর ১৭ নভেম্বর সকালে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে তার বাঁ হাতের অস্ত্রোপচার শেষে তার বা দিকের কিডনি বের করে নেন।
অস্ত্রোপচার শেষে খছরু মিয়ার জ্ঞান ফিরলে তিনি তার বাঁ হাতের পাশাপাশি বাঁ দিকের কিডনির পাশে অস্ত্রোপচারের চিহ্ন দেখতে পান। এ সময় খছরু মিয়ার স্বজনেরা বিষয়টি জানতে চাইলে চিকিৎসকেরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
পরে হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিসহ চিকিৎসকেরা জানান, কিডনি থেকে একটি শিরা নিয়ে বা হাতে সংযুক্ত করা হয়েছে। পরে তড়িঘড়ি করে অস্ত্রোপচারের একদিন পর হাসপাতাল থেকে তার ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরার পর শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন খছরু মিয়া। ঠিকমতো হাটাচলা করতে পারছিলেন না। প্রস্রাব ও মলত্যাগে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। অসুস্থতার ব্যাপারে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে বিস্তারিত জানালে তারা চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করতেন।
পরে ১৫ জানুয়ারি বেসরকারি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম করে নিশ্চিত হন, তার বা দিকের কিডনি নেই। আর্থিক সুবিধার জন্য চিকিৎসকেরা তার কিডনি অপসারণ করে নিতে পারেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

March 2023
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

সর্বশেষ খবর

………………………..