শিলং তীরের খপ্পরে সালুটিকর এলাকা : নিঃস্ব হচ্ছে মানুষজন

প্রকাশিত: ৬:২৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০২২

শিলং তীরের খপ্পরে সালুটিকর এলাকা : নিঃস্ব হচ্ছে মানুষজন

নিজস্ব প্রতিবেদক :: ডিজিটাল জুয়া খেলা ‘শিলং তীর’! ১ টাকায় ৮০ টাকার লোভে আজ দিশেহারা অনেকেই। এমন জুয়ায় কাউকেই সন্দেহ করা যায় না আবার অনেককেই সন্দেহ করা যায়। এমন সন্দেহের তীরের মাঝে মূল এজেন্টরা বাদ পড়ে যান। যারা ধরা পড়েন তারা শুধুমাত্র তীর জুয়ার খেলোয়ার। জেল-জরিমানা দিয়ে বের হয়ে ফের মজে যান জুয়ায়। কেউ কেউ মৌসুমী জুয়াতে ব্যস্ত থাকেন আবার কেউ কেউ স্থায়ীভাবে শিলং তীরের জুয়ায় মগ্ন থাকেন।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, শুরুতে সীমান্তবর্তী এলাকায় শিলং তীরের প্রভাব থাকলেও ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত সংখ্যা ভিত্তিক এই জুয়া ধীরে ধীরে তা সীমান্তবর্তী এলাকা পেরিয়ে নগরী-মহানগরীসহ প্রত্যেকটি উপজেলায় এর বিস্তার লাভ করতে থাকে। প্রথম অবস্থায় নগরীর নির্দিষ্ট দু/একটি জায়গায় এ সর্বনাশা জুয়ার আসর বসলেও এখন গ্রাম গঞ্জের সীমানায় বিস্তার লাভ করেছে । নিঃস্ব হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। চেষ্টা করেও শিলং তীরের ভয়ঙ্কর ছোবল থেকে তেমন কাউকেই রুখতে পারছে না প্রশাসন। এ খেলার বিস্তার দিন দিন গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে বেড়ে চলছে। ভাগ্যের খেলায় জুয়ার আসরে বিভিন্ন পেশার লোকজন বাজি ধরলেও এতে বেশি আগ্রহী দিনমজুর, স্কুল-কলেজের ছাত্র, রিকশাচালক, যানবাহনের চালক-শ্রমিকসহ বেকার যুবকরা অংশ নিচ্ছেন। অনেক স্কুলগামী ছাত্ররা স্কুল ফাঁকি দিয়ে এ খেলায় অংশ নিচ্ছে। এতে পড়ালেখার পরিবর্তে জুয়ার প্রতি ছাত্রদের মনোযোগ বাড়ছে। এসব জুয়ার আসরে লাভের আশায় টাকা খরচ করা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষরা বেশিরভাগই সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরেন। বিশেষ করে এই ডিজিটাল জুয়ার প্রভাব পড়েছে তরুণ-যুবকদের মধ্যে। জুয়ায় আসক্ত এইসব তরুণদের ধারা দিন দিন বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। দিন-দুপুরে যেখানে-সেখানে চুরি, ছিনতাইসহ আরো বিভিন্ন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও ঘটছে।

সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের সালুটিকর এলাকার আশপাশ কয়েক গ্রামে এই খেলা বিস্তার লাভ করেছে। মূলত দুইজন এজেন্টদারী তাদের সোর্সের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামে এই খেলা পরিচালনা করে থাকেন। তারা হলেন, উপজেলার মিত্রিমগল গ্রামের মৃত নাজির মিয়ারর ছেলে রুবেল মিয়া ও মেগার গাঁও গ্রামের চেরাগ আলীর ছেলে জামাল মিয়া। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, মূলত এটি একটি কৌশলগত খেলা। খুবই অল্প সময়ে মানুষজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিরাট ফাঁদ এটি। এ জুয়ার আসর থেকে সাধারণ মানুষ যাতে মুখ ফিরিয়ে না নেন, সেজন্য প্রতি ৩-৪ দিনের মাথায় একজনকে জুয়ার বাজিতে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বাজিতে প্রাপ্ত টাকার অংক কম হলে সাথে সাথেই পরিশোধ করা হয়। টাকার অংক বেশি হলে পরদিন তা পরিশোধ করা হয়। একই ব্যক্তি একাধিক সংখ্যা নিয়ে জুয়া খেলতে পারেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, আমাদের নাম বলতে পারবেন না, এই তীর খেলা মিত্রি মহল গ্রামের ও মেগার গাও গ্রামের একজন এই দুইজন মিলে মূল এজেন্ট হয়ে তাদের সোর্সের মাধ্যমে এই খেলা পরিচালনা করে থাকে । যোগাযোগের মাধ্যম মোবাইলে হওয়ায় তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এই সর্বনাশা খেলার কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে তরকারি ব্যবসায়ী ও সিএনজি চালকরা। দিনশেষে পারিবারিক জীবিকা নির্বাহ করতে না পারায় বাড়ছে পারিবারিক কলোহ।

জানা যায়, অনেক মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির সন্তানরাও জড়িয়ে পড়েছে এই খেলায়। ব্যবসা পতিষ্ঠানে দেখা দিয়েছে মন্দার প্রভাব। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এই খেলায় জড়িত হওয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় ধস নেমেছে। অনেকে লোক লজ্জার ভয়ে কাউকে বলেন না। এলাকার সচেতন মহলের মাঝে বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতের ভয়ংকর পরিণাম কি হবে তারা ভেবে কোল পাচ্ছে না। সচেতন মহল প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। যে কোন কৌশলে এই ভয়ংকর সর্বনাশী খেলা থেকে তরুণ প্রজন্মকে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তারা । বিষয়টি এলাকাভিত্তিক হওয়ায় স্থানীয়ভাবে সংঘর্ষ হতে পারে তাই কেউ কারো বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কোনো তথ্য উনার জানা নেই।সঠিক তথ্য বলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা যায়, ভারতের সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ভাগের সময় থেকে শুরু হয় নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নাম্বার কেনা। কেউ কিনেন সরাসরি। কেউ কেউ আবার ‘বিকাশ’-‘রকেট’ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ খেলায় অংশ নেন। ভারতীয় এজেন্টের মাধ্যমে দেশীয় এজেন্টরা ভারতের এজেন্টদের সাথে জুয়ার আসরের সমন্বয় করে থাকেন।

শিলং তীরের ওয়েবসাইটের সূত্রমতে, বেশকয়েকটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ‘শিলং তীর’র জুয়ার আসর পরিচালিত হচ্ছে। এই ডিজিটাল জুয়া খেলাটি সপ্তাহের ছয়দিনই বসে। প্রতিদিন দু বার এ খেলার ড্র অনুষ্ঠিত হয়। লটারিতে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত যে-কোনো সংখ্যা কিনে নেয়া যায়। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা যায়। লটারিতে একটি নাম্বারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2022
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..