সিলেট ১৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক :: চলতি বছরের জুন মাসের মাঝামাঝি ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয় সিলেটের চার জেলা। তখন অসংখ্য শিক্ষার্থীর বই–খাতা ভেসে গিয়েছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় সারা দেশে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজ সোমবার ঘোষিত ফলাফলে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার দেশের অন্যান্য বোর্ডের চেয়ে সবার নিচে অবস্থান করছে। এমন ফলাফলের জন্য ভয়াবহ বন্যাপরিস্থিতিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, ভয়াবহ বন্যার কারণে অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর বইখাতা ভেসে গিয়েছিল। পরে পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়ে পরীক্ষার্থীদের পুনরায় বই সরবরাহ করা হয়। তবে অনেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব খাতা ভেসে যাওয়ায় তাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি থেকে যায়। এতে ফলাফলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৫৬৫ জন শিক্ষার্থী। গতবারের চেয়ে পাসের হার কমলেও জিপিএ-৫ বেড়েছে। গত বছর পাসের হার ছিল ৯৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪ হাজার ৮৩৪ জন। গত বছর ১৮৫টি বিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করলেও এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৭টিতে।
আজ বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এসএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়। এ সময় বোর্ডের সচিব মো. কবির আহমদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জানান, পরীক্ষায় মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৯০ হাজার ৯৪৮ জন।
সিলেট এগিয়ে, পিছিয়ে মৌলভীবাজার
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে থাকা চার জেলার মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে সিলেট জেলা। এখানে পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৩। এ জেলা থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৫৯৮ জন। এরপরই সুনামগঞ্জ জেলা ভালো ফলাফল করেছে। এ জেলায় পাসের হার ৭৯ দশমিক ২৬। তবে চার জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জে জিপিএ-৫ এসেছে সবচেয়ে কম। এ জেলায় ৯৬৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাসের হারের দিক দিয়ে হবিগঞ্জ জেলা তৃতীয় স্থানে এসেছে। এ জেলায় ৭৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। হবিগঞ্জ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৩৪৩ জন শিক্ষার্থী, যা ফলাফল বিবেচনায় ৪ জেলার মধ্যে তৃতীয়। অন্যদিকে পাসের হারে পিছিয়ে আছে মৌলভীবাজার জেলা। এখানে পাস করেছে ৭৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে সিলেটের পরই মৌলভীবাজার জেলায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। জেলাটিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬৫৬ জন।
ভালো ফল মেয়েদের
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো ফল করেছে। মেয়েদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৯০ভ। অন্যদিকে ছেলেদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭১। এ ছাড়া ৪ হাজার ৩১১ জন মেয়ে এবং ৩ হাজার ২৫৪ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এ দিকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগ থেকে ৯৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে ৮৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ পাস করেছে। সবার নিচে আছে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগের পাস করেছে ৭৩ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিভাগওয়ারি জিপিএ-৫ পাওয়ার হিসাবেও মেয়েরা অনেক এগিয়ে আছে। বিজ্ঞান বিভাগে ৩ হাজার ৭৮৮ জন মেয়ে এবং ৩ হাজার ১০৬ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। মানবিক বিভাগে ৩২০ জন মেয়ে ও ৬৯ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০৩ জন মেয়ে ও ৭৯ জন ছেলে।
সন্তুষ্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ
শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, বন্যার কারণে সিলেট অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। শিক্ষার্থীর বই ও নিজস্ব নোটখাতা পানিতে ভেসে যাওয়ায় পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও ব্যাঘাত ঘটেছে। এসব দিক বিবেচনায় পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে।
আজ দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. কবির আহমদ বলেন, বন্যায় শহরের তুলনায় গ্রাম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত অনলাইন–সুবিধা না থাকায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে ছিল। চলতি বছরের ফলাফলে গ্রামের শিক্ষার্থীরা তাই তুলনামূলকভাবে কিছুটা পিছিয়ে আছে। এতে পাসের হার কিছুটা কমেছে। তবে ভয়াবহ বন্যার পর এমন ফলাফলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd