সিলেট ৪ঠা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৮ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:২৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২, ২০২২
বহু কাল থেকে আমাদের সংস্কৃতিচর্চার জায়গাগুলিতে আঘাত এসেছে বারবার ।কিন্তু কেন ? যারা এই কাজটি করছে তারা নিশ্চয় কারো না সন্তান , ভাই ও বন্ধু। তারা কি একটা সুন্দর , সুস্থ পারিবারিক বন্ধনে বড় হয়নি ? সেই শিক্ষা, সেই চর্চা কি তাদের ছোঁয়ে যায়নি ? তাহলে কেন এমন করবে ?
আমার ” মা ” আমাকে ছোটবেলায় শিখিয়েছেন , যে শিল্পের সঙ্গে মধ্য বিত্তের যোগাযোগ নেই , সে শিল্প ত্বরান্বিত হয় না । তখন বুঝিনি। আজ বেলা শেষে তা বুঝেতে পারছি । স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ- গান ও খেলা করেছি। প্রেরণা দাতা ছিলেন মা।
ওই সময় আমাদের বাড়িসহ আশেপাশের বাড়ী থেকে প্রতিদিন সকালে হারমোনিয়ামের আওয়াজ আসত । এখন কয়টা বাড়ী থেকে সে আওয়াজ শুনা যায় ?
আসলে কু- শিক্ষা হটিয়ে দিতে পারে একমাত্র সংস্কৃতিচর্চা। এর কোন বিকল্প নেই। আমার মা বলতেন,নিজের তো নয়ই , অন্য কারও ক্ষতি হয় এমন কিছু করবে না। আমরা ডেল কার্নেগির বানী পড়ি। মা বাবার এক একটা কথাও যে সে বানীর চেয়েও মহামুল্যবান। এটা বুঝতে হবে প্রত্যেক সন্তানদের। আর সে শিক্ষা দেবার প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান হলো ” শিক্ষিত পরিবার ” । যাহা আজকাল বিলুপ্ত হতে চলেছে ডিজিটালের ও মোবাইলের বাতাবরনে । এক পরিবারের এক ছাঁদের নীচে থেকেও সবাই আলাদা আলাদা জগতের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছেন ! কেউ কারো দিকে ফিরে তাকানোর ও যেন অবসর নেই বা প্রয়োজন মনে করেন না । অর্থাৎ আজকাল পারিবারিক সম্পর্ক গুলি টিস্যু পেপারের ন্যায় । প্রয়োজনের সাথে সম্পর্ক। যেখানে নেই আত্মিক ও হৃদয়জ টান ও বন্ধন।
আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার সঙ্গে ” নৈতিকতার” শিক্ষাটাও দিতে হবে। আর সিনেমা ও মিডিয়াতে নৈতিকতার প্রচার বৃদ্ধি করতে হবে। গুরুত্ব দেয়া দরকার। একটা সময় ছিল যখন আমার বড় ভাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভাল সিনেমা গুলি দেখতে যেতাম ছোট থাকাতে এসব বুঝতাম না বলে বড় ভাই বাসায় বুঝিয়ে দিতেন।
পেপারের বিভিন্ন কলাম এর অর্থ আমাদের বোঝাতেন।তখন না বুঝতে পারলেও এখন এগুলি মনে দাগ কাটে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার এখন আর সিনেমা হলে যায় না। নেটের জগতে ই তাদের বসবাস । সকল আনন্দদের খোরাক যুগায় ইন্টারনেট।
আমার মনে হয় শুধু জঙ্গির জায়গায় নয় আমাদের অবক্ষয় হয়েছে নানা জায়গায়। একটা খারাপ কাজকেও স্বার্থের ও ক্ষমতার প্রভাবে মিথ্যে স্বীকৃতি দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে। টাকায় বড়লোক না হয়ে শিক্ষায় বড়লোক হওয়া দরকার। সব ধরনের শিক্ষায় যে মানুষ সমৃদ্ধ তাঁকে দিয়ে কোন খারাপ কাজ হয় না। সুষ্ঠু সংস্কৃতিচর্চার মানুষ কোন সময় খারাপ কাজ করতে পারে না। যাদের ভেতরে রবীন্দ্র নজরুলের বসবাস তার হাতে অস্ত্র উঠতে পারে না।
সকল পরিবারকে প্রাথমিক বিদ্যার প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলে বিত্তশালী না করে চিত্তশালী হৃদয়বেত্তার পরিচয়ে সবাই প্রকৃত শুদ্ধ ও পরিশালিত এবং পরিমার্জিত মানুষ হয়ে উঠি । দুর্লব মানব জীবন সার্থক করি ।
লেখক – অমিতা বর্দ্ধন
কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক ।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd