সিলেট ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:০৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২২
বড়লেখা প্রতিনিধি :: শিশু নির্যাতনের মামলা দিয়ে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় সিমা আক্তার সুমি (২৬) নামে এক যুবতীকে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বজনদের অভিযোগ সিমা আক্তার সুমির পৈত্রিক মূল্যবান সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে রয়েছেন সুমির স্বামী জামাল উদ্দিন ও তার (সুমির) সৎ মা মনোয়ারা বেগম। এমন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন তার স্বজনরা। সুমির খালু জাফর আহমদ ঘটনা অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য গত ১৩ জুলাই বড়লেখা প্রেসক্লাবের সভাপতি/সম্পাদক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
হয়রানির শিকার যুবতী সিমা আক্তার সুমি বড়লেখা উপজেলার বড়খলা গ্রামের আতর আলীর মেয়ে।
সরেজমিনে অনুসন্ধান ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়খলা গ্রামের আতর আলীর প্রথম স্ত্রীর মেয়ে সিমা আক্তার সুমি। আতর আলী প্রথম স্ত্রী মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আতর আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের কাছেই বড় হন সিমা। কিন্তু সৎ মা মনোয়ারা বেগম প্রায়ই সিমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। তবে মা হারা সিমা এসব মুখ বুঝে সহ্য করতেন। এরমধ্যে ২০১৪ সালে সিমার বাবা আতর আলী স্থানীয় দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ও তার অনেক ঋণ হয়। এরমধ্যে সৎ মায়ের চক্রান্তে ২০২১ সালের শুরুর দিকে পারিবারিকভাবে জোরপূর্বক মাদকাসক্ত বিধবা (স্ত্রী হারা) দুই সন্তানের জনক চাচাতো ভাই জামালের সাথে সিমা আক্তার সুমির বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের প্রমাণ হিসেবে কোনো কাবিননামা (নিবন্ধন) করা হয়নি। ফলে বিয়ের পর থেকেই সিমাকে যৌতুকের জন্য জামাল নির্যাতন করতেন। এছাড়া তাকে (জামাল) খারাপ কাজ থেকে ফেরাতে গিয়ে মারধরের শিকার হন সিমা। এরমধ্যে ঋণের বোঝা টানতে টানতে ও জামাল কর্তৃক সুমিকে নির্যাতনের কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন আতর আলী। এ অবস্থায় অসুস্থ্য হয়ে ২০২১ সালের মার্চে মারা যান আতর আলী। আর এই সুযোটি কাজে লাগায় সিমার সৎ মা মনোয়ারা বেগম। স্বামীর সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মনোয়ারা সহযোগিতা নেন ভাসুরের ছেলে ও সিমা আক্তার সুমির স্বামী জামাল উদ্দিনের। জামাল ও মনোয়ারাকে দুজনেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন এবং সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সিমা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও থানা পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু চাচাতো ভাই জামাল উদ্দিনের প্রভাবের কারণে ন্যায় বিচার পাননি সিমা আক্তার সুমি। এ অবস্থায় সিমা আক্তার সুমির স্বামী জামাল উদ্দিন গত ১০ জুলাই তার প্রথম পক্ষের শিশু সন্তানকে নির্যাতনের অভিযোগে বড়লেখা থানায় মামলা করেন। মামলার খবর পেয়ে সিমা কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে খালু জাফর আহমদের বাসায় যান। সেখানে গিয়ে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন। ঘটনাটি জেনে সিমার খালু জাফর আহমদ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে গিয়ে এর সুষ্ঠু প্রতিকার চান। কিন্তু কোনো আশ^াস না পেয়ে তিনি ঘটনা অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য গত ১৩ জুলাই বড়লেখা প্রেসক্লাবের সভাপতি/সম্পাদক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। প্রেসক্লাবে আবেদনের প্রেক্ষিতে দৈনিক যুগভেরীসহ একাধিক স্থানীয় গণমাধ্যম ঘটনার অনুসন্ধান করে।
অনুসন্ধানকালে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, মা হারা সিমা আক্তার সুমির সংগ্রামী জীবনের ঘটনা। তারা জানায়, মূলত সিমার পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য শিশু নির্যাতনের ঘটনা সাজানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সিমার প্রতিবেশী দেলোয়ার হোসেন, জাহান আহমদ ও প্রবীণ মুরব্বি রবি দাস বলেন, ‘সিমার সৎ মা মনোয়রা ও তার (সিমার) স্বামী জামাল যে কাজটি করছেন এটা কিন্তু অন্যায় হচ্ছে। মেয়টি (সিমা আক্তার সুমি) অসহায়। কোথাও বিচার পাচ্ছে না। মা মারা যাবার পর তার বাবা বিয়ে করেছিলেন মনোয়রা বেগমকে। কিন্তু মা হারা মেয়টির কপালে আর সুখ জুটেনি। উল্টো বিধবা চাচাতো ভাই জামালের কাছে বিয়ে দিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করছেন সৎ মা। এখন মিথ্যা শিশু নির্যাতনের মামলা দিয়ে মেয়টিকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার চাই।’
সরেজমিনে কথিত নির্যাতনের শিকার শিশুটির পিতা জামাল উদ্দিনের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, দুটি শিশু বারান্দায় খেলছে। তখন পরিচয় গোপন রেখে জামলা উদ্দিনের কাছে প্রতিবেদক জানতে চান, শিশু দুটি কার? তিনি জানান, তার। এরপর প্রতিবেদক বলেন, তাহলে আপনি যে শিশু নির্যাতের মামলা করলেন, এখন দেখছি শিশু সুস্থ্য, স্বাভাবিক। এ-কথা বলতেই আর কোনো উত্তর না দিয়ে দ্রুত শিশুদের বারান্দা থেকে সরিয়ে ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন জামাল।
সুমির খালু জাফর আহমদ বলেন, ‘সুমির স্বামী জামালের প্রভাবের কারণে শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছে। এর আগে সুমি নির্যাতিত হলে প্রশাসনের কাছে আবেদন করে কোনো প্রতিকার মেলেনি। আমারা কথিত শিশু নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’
বড়লেখা থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন মামলার বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আপাতত এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।’
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd