সিলেট ৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৯ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৪৯ অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২২
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : পর্যটক আকর্ষণের জন্য ২০১৬ সালে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় একটি মোটেল তৈরি করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। জেলার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র জাফলং সড়কে প্রবেশের আগে মহাসড়কের পাশে মোটেলটি অবস্থিত।
মোটেলটির দোতলা ভবনে পর্যটকদের থাকার মতো কক্ষ আছে চারটি। আছে একটি খাবার কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি অফিস রুম। তবে সারা বছরই মোটেলটি খালি থাকে। ফলে তেমন কোনো আয় নেই। উল্টো একজন ব্যবস্থাপক, একজন স্থায়ী ও দুজন অস্থায়ী কর্মচারীর বেতন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসে দুই লাখ টাকা দিতে হয় পর্যটন করপোরেশনকে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। শুধু এ মোটেল নয়, সিলেট জেলায় পর্যটন করপোরেশনের আরও একটি মোটেল, একটি রেস্তোরাঁ ও একটি সেবাকেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোর অবস্থা করুণ। মোটেলগুলো পর্যটকদের তেমন একটা আকর্ষণ করতে পারে না। আবার সুযোগ-সুবিধারও অভাব। বিপরীতে ভালো ব্যবসা করছে বেসরকারি হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো।
সরেজমিন পরিদর্শন করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি তৈরি করেন উপসচিব লুবনা ইয়াসমীন। তিনি গত ২৩ মে প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। লুবনা ইয়াসমীন প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটনের জন্য জাফলং একটি জনপ্রিয় জায়গা। অথচ সেখানে পর্যটন করপোরেশনের মোটেল খালি পড়ে থাকে। মোটেলগুলো লাভজনক করতে ইজারা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জাফলংয়ে পর্যটন করপোরেশনের মোটেলটি তৈরিতে কত ব্যয় হয়েছে, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। তবে বলা হয়েছে, মোটেলটি নির্মাণের আগে কোনো ধরনের সমীক্ষা করা হয়নি। সেটির প্রয়োজন আদৌ ছিল কি না, তা যাচাই-বাছাই করা হয়নি। মোটেলের আশপাশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও পাওয়া যায় না।
পর্যটন করপোরেশনের অনলাইনে কক্ষ বুকিংয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, মোটেলটির কক্ষ ভাড়া এক দিনের জন্য ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা থেকে যাঁরা সিলেটে বেড়াতে যান, তাঁরা ওই মোটেলে যান না।
সিলেট শহরে পর্যটন করপোরেশনের আরেকটি মোটেল আছে। বিমানবন্দর সড়কের পাশে ৪৪ একর জমির ওপর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে মোটেলটি প্রতিষ্ঠিত। মোটেলে ২৬টি কক্ষ আছে। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, মোটেলটি দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয়নি। আসবাব বেশ পুরোনো। মোটেলটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে যে ধরনের জনবল দরকার, তা সেখানে নেই।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, মোটেলটির দেয়ালের কোনো কোনো জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে। কক্ষে থাকা খাট ও আসবাব যেমন পুরোনো, তেমনি ইলেকট্রনিক সরঞ্জামগুলোও অনেক আগের। মোটেলের বাইরের স্টোররুমটি ভাঙাচোরা। একজন কর্মচারী দাবি করেন, বৃষ্টি হলে কোনো কোনো কক্ষের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে।
মোটেলে গত বৃহস্পতিবার ২৬টি কক্ষের মধ্যে ৩টিতে পর্যটক অবস্থান করছিলেন। সেখানে জনবল মোট ১৭ জন। এর মধ্যে ৫ জন স্থায়ী, ১২ জন অস্থায়ী।
মোটেলটির ব্যবস্থাপক মোতাহারুল ইসলাম বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরে পর্যটক বেশি ছিল। তিনি বলেন, আধুনিকায়নের পাশাপাশি মোটেলটিকে কটেজে রূপান্তর করা হলে পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়বে।
এর বাইরে সিলেটের মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে পর্যটন করপোরেশনের একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। রেস্তোরাঁটি বন বিভাগের পাঁচ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ রেস্তোরাঁয় পর্যটকের যাতায়াত নেই। দীর্ঘদিন ধরে এর কোনো সংস্কার করা হয়নি। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি রেস্তোরাঁ। কিন্তু সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
পর্যটন বর্ষ (২০১৬) উপলক্ষে সিলেটের লালখালে পর্যটন সেবাকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু এটিও ব্যবহৃত হচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, সেখানে কক্ষের সংখ্যা দুটি। পর্যটন সেবাকেন্দ্রে শুধু জুস ও চিপস বিক্রি হয়।
সিলেটে বিছনাকান্দি, হাকালুকি হাওর, রাতারগুল জলাবন, জাফলং, লালাখাল, মালনীছড়া চা-বাগান, ভোলাগঞ্জসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। এ কারণে জেলায় বেসরকারিভাবে অনেক হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। বড় ছুটির সময় বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ পেতে বেগ পেতে হয়।
বেসরকারিতে ভাড়াও বেশি। যেমন সিলেট শহরের পর্যটন মোটেলে এক দিনের জন্য এক কক্ষের ভাড়া ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। সেখানে সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার রোজভিউ হোটেলের ভাড়া কক্ষপ্রতি ৬ হাজার টাকা বা তার বেশি।
রোজভিউ হোটেলের ব্যবস্থাপক নাঈম হোসেন বলেন, ঈদুল ফিতর-পরবর্তী সময়ে তাঁদের হোটেলের ৮০ শতাংশ কক্ষে পর্যটকেরা অবস্থান করেছেন। পর্যটকদের জন্য কক্ষের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হয় তাঁদের।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd