সিলেট ১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৪ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:৪৫ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০২২
আলী হোসেন, গোয়াইনঘাট :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৮৩৪জন মুক্তিযোদ্ধা অধ্যুষিত উপজেলা। ১৯৭১সালে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধ করে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও তাহাদের পরিবারবর্গকে গুলি করে হত্যা করেছে পাক হানাদার বাহিনী। গোয়াইনঘাটের কয়েকটি এলাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর হিসেবে সংরক্ষিত কর হলেও উপজেলা সদরের গোয়াইনঘাট সেতু সংলগ্ন নদীর পূর্বপাড়ে পূর্ণানগর গ্রামের রাজ্জাকের বাড়ীর সামনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর আজও সংরক্ষণ করা হয়নি। উক্ত গণকবর সংরক্ষণের জন্য ইতিপূর্বে দেশের অনেক সাহিত্য, লেখক উক্ত স্থান পরিদর্শন করেছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে গণকবর সংরক্ষণের সংবাদ একাধিকবার প্রকাশিত হলেও গণকবর গুলো অদ্যবদি সংরক্ষণ করা হয়নি। অপর দিকে এ উপজেলায় আজ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের কোন মোরল নির্মাণ কিংবা কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকে এ উপজেলায় অনেক মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলেও তারাও দেখে যেতে পারেননি গণকবরের সংরক্ষিত এলাকা ও মুক্তিযুদ্ধের মোরল। গোয়াইনঘাট উপজেলার নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে ১৯৭১সালে পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের হাতে শহীদ বীর মু্িক্তযোদ্ধা এবং মুক্তিকামী জনতার গণকবর ও বধ্যভূমিগুলি চিহ্নিত ও সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা শহীদ মিনার চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক মানববন্ধনে সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবদুল হক বলেন, অবহেলা আর অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে চিহ্নিত অধিকাংশ গণকবর ও বধ্যভূমি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মহলের এ বিষয়ে দির্ঘদিন কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ৭১’র গণকবর ও বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা না হলে বর্তমান এবং নতুন প্রজন্ম দেশের মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস অজানা থেকে যাবে। এদিকে স্থানীয় সুশীল সমাজের দাবি, বছরের বিশেষ একটি দিনে নয়। গোয়াইনঘাটের চিহ্নিত গণকবর, বধ্যভুমি গুলি সংরক্ষণ, ভূমিদস্যুদের কবল থেকে রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা শহীদের গণকবরের সঠিক সন্ধান ও সংরক্ষণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে আগ্রহী করে তোলতে হবে। দেশের লাল-সবুজের পতাকার মান অক্ষুন্ন রাখতে গোয়াইনঘাটে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯থেকে ১০টি সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করেছেন। এসময় পাক-বাহিনী এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় গণহত্যা ও সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মরদেহ মাটিতে পুঁতে রেখে দেয় নরপশু পাক-সেনারা। অপর দিকে ভুমিদস্যুদের দখল, সরকারের অবহেলা আর অযত্নের কারনে অধিকাংশ গণকবর ও বধ্যভূমির অস্তিত্ব প্রায় বিপন্ন। উপজেলার সুশিল সমাজ ও সচেতন মহলের দাবি অবিলম্বে শহীদদের ঐসব গণকবর যথাযোগ্য মর্যাদায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও নতুন গণকবর চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করে উপজেলার নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধে গোয়াইনঘাট উপজেলার বীরত্বগাঁথা ইতিহাস জানতে সহযোগিতা করার দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার’র পরিচালনা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবদুল হকে’র সভাপতিত্বে মানববন্ধন প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান লেব, বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালিক, সন্তান কমান্ডের সভাপতি কামাল হোসেন, সন্তান কমান্ডের সহ-সভাপতি কামাল আহমদ, সন্তান কমান্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন আহমদ, শেখ ফরিদ, হাবিল আহমদ, বিলাল উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, জিয়ার রহমান, দেলোয়ার হোসেন, চান মিয়া, ময়ূর আহমদ ও মিনহাজ উদ্দিন প্রমূখ।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd