সিলেট ৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৩ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:২৯ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট মহানগরসহ পুরো বিভাগ তলিয়ে গেছে বন্যায়। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লাখো রাখো মানুষ । আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও আশ্রয় কেন্দ্রে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমাসহ বিভিন্ন এলাকায় টানা দুদিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পানির জন্য চলছে হাহাকার। গতকাল বুধবার পর্যন্ত পাহাড়তলী সীমান্ত এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও নিম্নাঞ্চলে পানিবৃদ্ধি আব্যাহত রয়েছে।
এদিকে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, বুধবার রাত ১০ থেকে ১টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে তাণ্ডব চালাতে পারে কালবৈশাখী। এছাড়াও ভারতের মেঘালয় রাজ্য ভারি বৃষ্টি হবে। বিশেষ করে শিলং ও ডাউকিতে। ফলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির প্রবল আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত এক সপ্তাহের অব্যাহত বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট বিভাগের সর্বত্র। সিলেট সদর, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট,গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও জৈন্তাপুর প্রভৃতি উপজেলায় লাখ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। চরম দুর্ভোগের মধ্যে এখন দিন পার করছেন এসব মানুষ। বন্যা কবলিত এসব এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়ায় সিলেট শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে আড়াই শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র।
সিলেটে অকাল বন্যায় দুর্ভোগে পড়া মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বন্যা দুর্গত এলাকাগুলো পরিদর্শনে গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি বিমানের একটি ফ্লাইটে সিলেট এসে পৌঁছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এমপি।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি ছুটে যান বন্যা কবলিত সিলেট নগরীর চালিবন্দর এলাকায়। সেখানের আশ্রয়কেন্দ্রে তিনি বন্যার্তদের মাঝে শুকনো ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।
দিনভর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বন্যার পানিতে প্লাবিত সিলেট মহানগরী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন এবং ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করবেন।
আমাদের ছাতক সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ১৩টি ইউপি ১টি পৌর সভাসহ গত বুধবার পর্যন্ত ভারি বর্ষণ ওপাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে এখানের বহু পাকা, রাস্তাঘাট, প্লাবিত হয়েছে হাজার ঘরবাড়ি, দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শতাধিক মৎস্য খামার। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ।
গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৮০ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা চৈলা নদী,পিয়াই নদী স্টেশন ২৬৮, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারি বর্ষণ ও সীমান্ত এলাকা মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজার,শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
গ্রামীণ সড়ক বন্যা প্লাবিত হওয়ায় ১৮টি সড়ক ও উপজেলা সদরের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ছাতক-সিলেট সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়ক পথে ঝুঁকি নিয়ে কিছু কিছু যান চলাচল করলেও গত বুধবার সকাল থেকে ছাতকের সঙ্গে জেলা সদরসহ দেশের সব অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে সীমাহীন দূর্ভোগের মধ্যে দিন-রাত অতিবাহিত করছেন। ছাতক শহর, ছাতক সদর, কালারুকা, চরমহল্লা, জাউয়াবাজার, দোলারবাজার, ভাতগাঁও, উত্তর খুরমা, দক্ষিণ খুরমা, সিংচাপইড়, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।এতে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও বসত ঘরের মধ্যে হাঁটুপানি, কোমরপানি থাকায় ২দিন ধরে হাড়ি বসছে না বানভাসি পরিবারে ঘরে। পাকা,কাচা রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়াসহ কলেজ,মাদ্রাসা,মাধ্যমিক ও প্রাথমিক; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে পানি ঢোকায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।
ছাতক-দোয়ারা, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক জাউয়া সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক ইসলামপুর ইউনিয়নের ছনবাড়ি-রতনপুর সড়ক, ছনবাড়ি-গাংপাড়-নোয়াকোট সড়ক,কালারুকা ইউনিয়নরে মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, আমেরতল-ধারণ সড়ক,বুড়াইর গাও-আলমপুর.-দাহারগাও-আলমপুর, তাজপুর-নুরুল্লাহপুর, গোবিন্দনগর-দশঘর, পালপুর-সিংচাপইড় সড়ক, বোকারভাঙ্গা-মানিকগঞ্জ সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের একাধিক অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। শতাধিক স্টোন ক্রাসার মিল, পোল্ট্রি ফার্ম ও মৎস্য খামারে বন্যার পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শাক-সবজির বাগানেও পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।
এদিকে নদীতে কার্গো লোডিং আন লোডিং ও কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছে । এতে কয়েক হাজারো শ্রমিকরা এক সপ্তাহ ধরে বেকার হয়ে পড়েছে। এছাড়া ইসলামপুর ইউনিয়নের রতনপুর, নিজগাঁও, গাংপাড়, নোয়াকোট, বৈশাকান্দি, বাহাদুরপুর, ছৈদাবাদ, রহমতপুর, দারোগাখালীসহ অন্যান্য গ্রাম, পৌরসভার হাসপাতাল রোড, শাহজালাল আবাসিক এলাকা, শ্যামপাড়া, মোগলপাড়া তাতিকোনা বৌলা, লেবারপাড়া নোয়ারাই ইউনিয়নের বারকাহন, বাতিরকান্দি, চরভাড়া,কাড়ুলগাঁও, লক্ষীভাউর, চানপুর, মানিকপুর, গোদাবাড়ী, কচুদাইড়, রংপুর, ছাতক সদর ইউনিয়নের বড়বাড়ী, আন্ধারীগাঁও, মাছুখালী, তিররাই, মুক্তিরগাঁও, উত্তর খুরমা ইউনিয়নের আলমপুর, দাহারগাও, ঘিলাছড়া, মৈশাপুর, তকিরাই, তেরাপুর মোহনপুর, আমেরতল, ঘাটপার, গদালমহল, রুক্কা, ছোটবিহাই, এলঙ্গি, রসুলপুর, শৌলা, চরমহল্লা ইউনিয়নের ভল্লবপুর, চুনারুচর, চরচৌলাই, হাসারুচর, প্রথমাচর, সিদ্ধারচর, চরভাড়ুকা দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের দড়ারপাড়, ভুইগাও, হরিশরণ, হাতধনালী, রাউতপুর, ধনপুর, চৌকা, রামচন্দ্রপুর, হলদিউরা কালারুকা ইউনিয়নের নুরুল্লাহপুর, উজিরপুর, রামপুর, মালিপুর, দিঘলবন, সিকন্দরপুর, আরতানপুর, রংপুর, মুক্তিরগাঁও, ভাতগাঁও ইউনিয়নের জালিয়া, ঘাঘলাজুর, হায়দরপুর, বাদে ঝিগলী, সিংচাপইড় ইউনিয়নের পুরান সিংচাপইড়, আসলমপুর,গহরপুর, মহদী, সৈদরগাঁও, সিরাজগঞ্জ বাজার, সরিষাপাড়া, হবিপুর, মামদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
ছাতকে টানা বর্ষণে নদ-নদী, খাল-বিল ও হাওরে হুর হুর করে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ২০০৪ সালে মতো বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব হাওড়ের অধিকাংশ পাকা ধান ঘরে তুলতে না পারায় আহাজারি থামছে না কৃষকদের। রাস্তা, মাঠঘাট ও গোচারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান,বন্যার্তদের জন্য পৌর শহরের বৌলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তাতিকোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এসপিপিএম উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd