ভারতীয় গরু মহিষে সয়লাব সড়কের বাজার ও কালীগঞ্জ

প্রকাশিত: ৮:০৭ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০২২

ভারতীয় গরু মহিষে সয়লাব সড়কের বাজার ও কালীগঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: ভারতীয় গরু মহিষে সয়লাব সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চলীয় সড়কের বাজার ও কালীগঞ্জসহ কয়েকটি বাজার। এগুলোর মধ্যে সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার সড়কের বাজার ও গাছবাড়ি বাজার ও জকিগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ বাজার এবং শাহগলি বাজার । সিলেট জেলার গরু মহিষের হাট হিসেবে উপরোক্ত ৪টি বাজার সার্বাধিক প্রসিদ্ধ। সড়কের বাজার ও কালীগঞ্জ বাজার হচ্ছে গরু-মহিষ চোরাচালানের প্রধান ট্রানজিট পয়েন্ট। প্রতিবছর রমজান ও কোরবাণীর ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে ওঠে ভারতীয় গরু-মহিষ চোরাচালানী সিন্ডিকেট। সূত্রমতে এবারও রমজান ও পবিত্র ঈদুল আযহাকে ঘিরে তৎপর হয়ে ওঠেছে চোরাচালানী সিন্ডিকেট।
বাংলাদেশের সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রাম বাজারের দুই কিলোমিটার পূর্ব হতে ভারতের সাথে সুরমার নদীসীমান্ত। আবার আমলশীদ হতে জকিগঞ্জ সদর হয়ে শেওলা পর্যন্ত কুশিয়ারা নদী বাংলাদেশ ভারতের জলসীমান্ত। তাই এই দুই নদী পার করে ভারতীয় গরু-মহিষ চোরাচালানী সম্ভব হয় না। আবার কানাইঘাটের ডোনা সীমান্তের পরেই উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পর্বত সীমান্ত। উঁচু পাহাড় বাইয়ে এবং খাসিয়া অধ্যুসিত মেঘালয়া রাজ্যে বাঁধা থাকায় পাহাড়ি এলাকা দিয়ে চোরাই গরু-মহিষ আমদানী সম্ভব হয় না। তাই এই দুই উপজেলার পশু চোরাচালানী সিন্ডিকেট কানাইঘাট উপজেলার স্থলসীমান্ত ডোনা ও কারাবাল্লাকেই বেছে নিয়েছে। কাইনাইঘাট উপজেলার ডোনা ও কারাবাল্ল সীমান্তের অপারে রয়েছে ভারতের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুর থানা এলাকার সর্ববৃৎ জালালপুর বাজার। আসাম রাজ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় তিন জেলা যথা করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ও শিলচর এবং তৎপাশ^বর্তী মনিপুর রাজ্যের চোরাই গরু-মহিষ সীমান্তবর্তী জালালপুর বাজার হয়ে বাংলাদেশে চালান হয়ে থাকে। কাইঘাট উপজেলার ডোনা ও কারাবাল্লার চোরাই পথ দিয়ে নিয়ে আসা ভারতীয় গরু-মহিষ কারাবাল্লার পশ্চিমে এসে দুভাগ হয়ে যায়। জকিগঞ্জের চোরাচালানীরা তাদের ভাগ আটগ্রাম বাজারের রাস্তা দিয়ে উপজেলার কালীগঞ্জ বাজার সহ বিভিন্ন বাজারে পাচার করে থাকে। অপরদিকে কানাইঘাট উপজেলার পশু চোরাচালানীরা তাদের চোরাচালানী পশু কানাইঘাটের বটেরবাজার ও মমতাজগঞ্জ বাজার নদীঘাট দিয়ে সুরমাা পার করে উপজেলা সড়কের বাজারে নিয়ে আসে। সড়কের বাজার থেকে রসিদ করে জকিগঞ্জের পশ্চিম এলাকাস্থ শাহগলি বাজার ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি বাজারে পাচার করা হয়ে থাকে। মূলত কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ দিয়ে ভারতীয় চোরাই গরু-মহিষ পাচারের প্রধান পয়েন্ট হচ্ছে কানাইঘাটের সড়কের বাজার ও জকিগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজার। এই দুই বাজারে বৃহৎ গরু মহিষের হাট থেকে রসিদ করেই বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয় ভারতীয় গরু ও মহিষ। এই দুই বাজারের ইজারাদাররাই মূলত ভারতীয় চোরাই গরু-মহিষের চালানের সাথে জড়িত।
তবে পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ থানা পুলিশ। বাজারের ইজারাদারদের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার বখরা আদায় করে থাকে দুই থানা পুলিশ। অতীতে এসব বাজারের ইজাদারদের নিয়ে অনেক লেখালেখিও হয়েছে। এমনকি দুবছরে আগে কানাইঘাট থানা পুলিশের সাবেক অফিসার ইনচার্জের (ওসি) বিরুদ্ধে ভারতীয় গরু-মহিষ চোরচালানী ও ভারতে অবৈধ মূদ্রাপাচারের অভিযোগে আদালতে মামলাও হয়েছিল। ভারতীয় চোরাই গরু-মহিষগুলো জেলার পূর্বাঞ্চলীয় এ সব বাজার থেকে সিট করে সিলেট নগর ও তৎপাশর্^বতী বিভিন্ন কসাইখানায় নিয়ে আসা হয়, জবাই করে মাংস বিক্রি করা হয়। তবে মহিষকেও গরু বলে মাংস বিক্রি করা হয়ে থকে।
চোরাচালানীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম গুলোতে নিউজ প্রকাশিত হলে সাংবাদিকদের প্রাণে মারার হুমকিসহ হামলা-মামলা দিয়ে তাদের নাজেহাল করা হয়ে থাকে। মাস তিনেক আগে কানাইঘাট ডোনা সীমান্ত এলাকার চোরাচালানীদের হাতে নির্মমভাবে আহত হন স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুর রব। তবে কাইঘাট ও জকিগঞ্জে এমন কিছু সাংবাদিক নামধারীরাও রয়েছেন,যারাা এ বিষয়ে লেখালেখি না করে মোটা অংকের টাকা পেয়ে থাকেন। ডোনা ও কারাবাল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু-মহিষ চোরাচালানী সিন্ডিকেট সনাক্ত করতে মাঠে রয়েছে দৈনিক সোনালী সিলেট-এর একটি অনুসন্ধানী টিম। অনুসন্ধান শেষে পরবর্তী প্রতিবেদনে সিন্ডিকেট সদস্যদের নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ পাবে।
সড়কের বাজার ইজাদারদের প্রধান স্থানীয় ইউপি মেম্বার সাহাবুদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি সড়কের বাজার গরুহাটের ইজারাদার। হাটে যা উঠে তা আমি রসিদ করে দেই। বিক্রেতা ভারত থেকে না বাড়ি থেকে নিয়ে আসে সেটা আমার দেখার বিষয় নয়।
এব্যাপারে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইন্সপেক্টর তাজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে
যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন সড়কের বাজার নিলমে ৭২ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন মেম্বার সাহাবুদ্দিদনসহ কয়েকজন। তবে এই বাজারে ভারতীয় চোরাচালানী গরু মহিষ বিক্রি হয় বলে এ পর্যন্ত আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইন্সপেক্টর মোশারফ হোসেন বলেন- আমি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ থানায় যোগান করেছি। থানার কালীগঞ্জ ও শাহগলি বাজারে ভারতীয় চোরাই গরুর চালান আসে কি না এ সম্পর্কে কোন তথ্য আমার কাছে নেই। তথ্য পাওয়া গেলে থানা পুলিশ অভিযান চালাবে বলেও জানান তিনি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

May 2022
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..