সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৫, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় দ্বি-মুখী আইন প্রয়োগ করছে পুলিশ। যার ফলে অতিরিক্ত ভাড়া ও যানজটে নাভিশ্বাস যাত্রী সাধারণের। সিলেট সিটি এলাকায় ৩ জন যাত্রী ব্যতিত সিএনজি অটোরিক্সায় যাত্রী বহন করতে পারবে না চালকরা। এর অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলে মামলা-জরিমানা। ফলে সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের এখন পোয়াবারো। তারা ৩জন যাত্রী হলেই ট্রিপ ছেড়ে দেয়। এতে করে যানবাহন সংকট দেখা দেওয়ায় যাত্রী বহনের প্রয়োজনে সিলেট সিটি এলাকায় আগের চেয়ে দ্ব্গিুন ঢুকে পড়েছে সিএনজি অটোরিকসা। নগরের সম্প্রসারিত রাস্তাও সামাল দিতে পারছে না এতো অটোরিক্সা। আগে যেখানে ৫শ’ যাত্রী বহনে ব্যবহৃত হতো ১শ’ সিএনজি অটোরিক্সা, এখন ৫শ’ যাত্রী বহনে ব্যবহৃত হয় প্রায় ২শ’ সিএনজি অটোরিক্সা। আর সিটি মেয়র ব্যবহৃত হচ্ছেন স্বার্থপর অটো ব্যবসায়ী ও পুলিশের আয় বৃদ্ধিরকাজে। রাস্তা সম্প্রসারণ করে আনলিমিটেড যানবাহনের স্থান করে দিতে ভাংছেন বাড়িঘরের দেওয়াল, দোকানপাট, মার্কেট, বিপনীবিতান, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল- কলেজ ও গীর্জার দেওয়াল। তিনি চাইলে নগরের রাজপথ থেকে রিক্সা-অটোরিক্সা সরিয়ে উন্নতমানের সিটিবাস বা নগর পরিবহণ চালু করতে পারতেন। যেমন প্রতিবেশি দেশের অনেক নগরে রাজপথে রিক্সা অটোরিক্সা চলাচলের অনুমতি নেই। ছোট যানবাহন বন্ধ না হলে বড় যানবাহনে যাত্রী সংকট থাকা স্বাভাবিক। সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশের এই দ্বিমুখী আইনের ফলে সিলেট নগরে যানজট ফরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপর দিকে গলাকাটা ভাড়া নিচ্ছে অটো চালকরা। যেখানে আগে ৫ জন যাত্রী মিলে এক ট্রিপে ৯০ টাকা পেতো অটো চালকরা, সেখানে তারা ৩ জনের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে ৯০ টাকা। লাভ হচ্ছে অটোচালক ও মালিকদের। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন যাত্রী সাধারণ।
পুলিশ বলছে সিএনজি অটোরিক্সায় ৩ জনের বেশি যাত্রী বহনের আইন নেই। তাই ৩ জন করে যাত্রী বহনের আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, হাইওয়ে রোডসহ নগরের রাজপথে অটোরিকসা চলাচলের অনুমতি নেই । কিন্তু সিলেট মেট্রোসিটিতে সেই আইন প্রয়োগ করছে না কেনো পুলিশ। এটা না করার অনেক কারনের মধ্যে একটি হচ্ছে পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য। অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ করে সব রাস্তায় নগর পরিবহণ চলাচল শুরু করলে সেই উপরি টাকা থেকে বঞ্চিত হবে পুলিশ। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন বিহীন অটোরিক্সা থেকে পুলিশ যে মাসোহারা বা টাকা নিচ্ছে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এ আইন প্রয়োগ না করে যানবাহন ও উপরি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে যাত্রী সংখ্যা ৩, এ আইন প্রয়োগ করছে সিলেট মেট্রোপুলিশ। যাতে করে অটোচালক মালিক ও পুলিশের পকেট ভারী হয় এবং যাত্রী সাধারণের পকেট খালি হয়।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নগর পরিবহণ চালু করলেও অটোরিক্সার কারণে যাত্রী সংকটে তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতীতেও কয়েকবার নগর পরিবহণ বা সিটি বাস চালু করে তা টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে সিসিক। আর এ ব্যর্থতার মূলে নগরে অবাঁধে সিএনজি অটোরিকসার বেআইনী যাত্রী পরিবহণ। পৃথিবির অনেক দেশে এমনকি পাশর্^বর্তী দেশের নগরের বা সিটির রাজপথে রিক্সা-অটোরিক্সার চলাচল নেই। কিন্তু সেসব দেশের নগর পরিবহণে কোন অসুবিধে হচ্ছে না অসুবিধে শুধু সিলেটসহ বাংলাদেশের কিছু নগরে। মূল কারণ হচ্ছে অটোরিক্সার মালিক ও চালকদের টিকিয়ে রেখে তাদের আর্থিক লাভবান করিয়ে ভোট কুড়ানো এবং কর্তাব্যক্তিদের অবৈধ সুবিধে আদায়।
এদিকে সিলেট সিটি এলাকায় যাত্রী ৩ জন আইন প্রয়োগ করলেও সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকার অনেক রাস্তায় এ আইনের প্রয়োগ নেই। সিলেট নগরে দক্ষিণ সুরমার কদমতলী ও বাবনা পয়েন্ট পরেই মেট্রেপলিটনের সব রাস্তায়ই ৫জন করে যাত্রী পরিবহণ করছে সিএনজি অটোরিকসা। নগরের টিলাগড় পার হলেই দেখা মিলে ৫ যাত্রীর অটোরিক্সা। উত্তরে তেমুখী পার হলেই মেট্রে এলাকাধীন সিলেট সদরের সব রোডেই দেখা যায় ৫ জন যাত্রী মিলেই ভাড়া দিচ্ছেন অটোরিক্সার। শুধু সিটি এলাকায় ৩ জনের আইন প্রয়োগের কারণেই যাত্রীদের নাভিশ^াস। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আইন মেট্রো এলাকার সবখানে সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। এছাড়া সিলেট নগরে উত্তর সুরমা এলাকায় রেজিস্টেশন বিহীন অনটেস্ট অটোরিক্সা না চললেও নগরের দক্ষিণ সুরমা ও সিটির বাইরে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকার সব সড়কেই অনটেস্ট অটোরিক্সা চলাচল করে থাকে। প্রতিটি অটোরিক্সা থেকে বেআইনী টোকেনের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা করে মাসোহারা আদায় করে থাকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। নগরের বাইরে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় এমন প্রায় ১০ হাজার অনটেস্ট অটোরিক্সা বেআইনীভাবে চলাচল করছে পুলিশ টোকেন নিয়ে।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদের সরকারি সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সিলেট মেট্রেপলিটন পলিটন সিটি হলেও বিআরটিএ এখনো ‘সিলেট মেট্রো’ করা হয়নি। সেই জেলা বিআরটিএ-র আইন ও পারমিট নিয়েই নগরে চলাচল করছে সব ধরনের যানবাহন। তিনি বলেন- আমাদের এসএমপি’র ট্রাফিক বিভাগে জনবলের দারুণ সংকট। মাত্র ১৭ জন সার্জেন্ট দিয়ে সিলেট নগরসহ মেট্রোসিটির ৬ টি থানা কভার করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই অনেক এলাকা এমনও রয়ে গেছে যেখানে জেলার ট্রাফিকতো নেই, মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিকও নেই। যানবাহন নিয়ন্ত্রনে আনতে হলে সিলেট মেট্রো পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে জনবল দ্বিগুন থেকে তিনগুন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd