সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৪১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৫, ২০২২
খলিলুর রহমান :: আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, এর পরই আনন্দঘন ঈদুল ফিতর। মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ এই উৎসবকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে পুরো সিলেট। নগরীর প্রতিটি মার্কেট বিপনীবিতান ও শপিংমল আলোকসজ্জা করে বাহারি রংয়ে সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যানজট নিরসনে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ ও প্রতিটি শপিংমল ও মার্কেটের স্বেচ্ছাসেবীরা। আর এবার সিলেটে জমে ওঠেছে স্মরণকালের ঈদবাজার। করোনা ও লকডাউনের কারণে গত দুই ঈদে তেমন বাজার করতে পারেননি জনগন। খলামেলা বাজার ও কেনাকাটা করতে না পারায় অনেকের মনে ছিল বড় আফছোছ। এবার সেই আফছোছ ঝেড়ে ফেলে সানন্দে করছেন ঈদবাজার। দোকানীরাও গত দুবছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন এবার। আগামী ঈদে হয়তো লকডাউন এসে যেতে পারে এবং এর আভাসও দেওয়া হচ্ছে ইঙ্গিত আকারে। তাই তরুণ তরুণী শিশুকিশোর, আবাল বৃদ্ধ বণিতা সবাই উপচে পড়েছেন ঈদবাজারে। প্রতিটি মার্কেট ও শপিং মলে ক্রেতাদের ভিড়। সকাল থেকে দীর্ঘরাতব্যাপি ভিড় রেগেই আছে বিপনী বিতানগুলোতে। ঈদুল ফিতরে নতুন জামা ও জুতোর পাশাপাশি পর্দার দোকানগুলোতেও ভিড় কম নেই। ঈদে নতুন পর্দা দিয়ে বাসা ও ঘর সাজাবেন এমন একটি ঐতিহ্য লালন করে সিলেটবাসী। গত দুবছর ঘরদরজা সাজাতে না পারায় এবার নতুন পর্দা দিয়ে সাজিয়ে পুরনোগুলো ফেলে দেবেন বা অন্য কাজে লাগাবেন। কসমেটিক্স-এর বাজারও কম নয়। কসমিেটক্স’র দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন যুবমহিলা তরুণী ও কিশোরীরা।
সিলেটবাসী সবসময়ই নতুনত্বে বিশ্বাসী। তাই ক্রেতাদের চাহিদার কথা ভেবে সিলেটের বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নতুন করে সাজিয়েছেন তাদের দোকানপাট। এনেছেন নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাকাশাক। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পোষাকাষাকের জন্য প্রসিদ্ধ নগরের নয়াসড়ক ও কুমারপাড়া এলাকার সমগ্র রাস্তায় বিভিন্ন রংয়ের বাতি জ্বালিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া শপিংমল ও মার্কেটগুলো সাজিয়েছে রেখেছেন তারা।
ঈদে ক্রেতাদের ভিড় এমন পর্যায়ে যে, দরদাম করার কোন সুযোগই নেই। কারণ আগে পিছে লাইনে ক্রেতা। তাই দোতকানীরা যা হাকছেন তা দিয়েই কিনতে হচ্ছে ঈদের জামাকাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী। বিশেষ করে অভিজাত শপিং মলগুলোতে এবার গলাকাটা দাম দিয়েও কিনছেন ক্রেতারা। মেডিকেল স্টুডেন্ট তাসনিমুর রিয়াজ জানান, রমজানে আগেই ঈদের জন্য ৫শ’ টাকা একটি পাঞ্জাবী কিনে রাখি। এই ভেবে যে এবার রমজানে কলেজ খোলা থাকায় হয়তো কেনাকাটার সময় কম হবে। চিকিৎসার সুযোগে বাসায় এসে সহপাঠির সাথে একটি বিপনীবিতানে গিয়ে ওই পাঞ্জাবীর দাম হাকা হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা। এতো বেশি দাম কেনো, জিজ্ঞেস করলে ব্যবসায়ী জানান, উত্তর দেওয়ার সময় নেই, এটা ঈদ ও অভিজাত শপিং মল। সরেজমিনে নগরীর অভিজাত শপিল মল আলহামরা, ব্লু-ওয়াটার, কাকলী, মিলেনিয়াম, শুকরিয়া মার্কেট, আহমদ ম্যানশন, মধুবন, হাসান মার্কেট প্রভৃতিতে গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়ে শ^াসরূদ্ধকর অবস্থা। নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজার, বারুতখানা, নয়সড়ক ও চৌহাট্টাস্থ কয়েকটি অভিজাত দোকানে গিয়েও একই অবস্থা। এবার দক্ষিণ সুরমার কিছু মর্কেটেও ঈদবাজার জমে ওঠেছে।
জিন্দাবাজারের ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটির জনপ্রিয় একদামের একটি প্রতিষ্ঠানে কয়েকবার ডুকার চেষ্টা করে বেশ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে পরে ঢুকেছেন শিক্ষিকা রাহাত ফেরদৌস। তিনি রোববার রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নিজের ও ছোট ভাই-বোনদের জন্য কাপড় ক্রয় করতে এসেছি। অনেক ভিড়, আমি মেয়ে মানুষ তাই ভিড় ঠেলে ডুকতে চাইনা। কয়েকটি দোকানে ঢুকার চেষ্টা করেছিলাম। মানুষের উপস্থিতি এমন যে ঢুকা মুশকিল হয়ে গেছে। অবশেষে কয়েকবার চেষ্টা করে দোকানে প্রবেশ করে নিজের ও ছোট ভাই-বোনদের জন্য কাপড় ক্রয় করেছি। জামা-কাপড়ের দাম বেশি হরেও কিনতে হয়েছে। নগরের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় এবং রাস্তা সরু হয়ে আসায় ঈদের বাজারে এবার হকারদের উৎপাত তেমন নেই। আর এ সুযোগে গলাকাটা দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়িরা জানান, গেল দু’বছর করোনার বিধিনিষেধ থাকায় ব্যবসা হয়নি। এতে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় বিধিনিষেধ কম। তাই ক্রেতারাও মার্কেটে আসতে শুরু করেছেন। উল্লেখযোগ্য হারে ক্রেতারা আশায় আমরা করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠায় আশা করছি। বেচাকেনা আলহামদুলিল্লাহ। বেশ জমজমাট ব্যবসা হচ্ছে। স্বস্তির নিশ্বাস নেয়া যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এমন হলে আমরা গেল দুবছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো। এবারের ঈদে মেয়েদের এবারের ঈদ মার্কেটে ঝড় তলেছে বাহারি রঙ্গের ‘কাঁচা বাদাম, পুষ্পা, বাংলালিংক ও সকাল-সন্ধ্যা শাড়ি ও ত্রি-পিস’। বিক্রেতারাও বলছেন, নতুন নামের কালেকশন ভালো বিক্রি হচ্ছে।
নয়াসড়ক এলাকার একটি নামকরা বিপনী বিতানে আসা চাকরিজীবি আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাতের বেলা মার্কেটগুলোর চারদিকে লাল-নীল বাতি, অনেক সুন্দর দেখায়। তবে জামাকাপড়ের দাম অনেক বেশি হলেও পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে যেহেতু এসেছি,তাই কিনতেই হবে।
এদিকে, ঈদবাজারে ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তৎপর সিলেট মহানগর পুলিশ। এসএমপি কমিশনার নিশারুল আরিফ রমজানের শুরুতেই ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে সকল ধরনের সহযোগিতার কথা বলেছেন।
এসএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) আশরাফ উল্লাহ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। জনবহুল প্রতিটি মার্কেট ও শপিংমলে শিফট ভিত্তিক ফিক্সড নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্য নিযুক্ত করেছি। তারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। তাছাড়া এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানায় ১০ টি টহল টিম বৃদ্ধি করা হয়েছে। পোষাকী ও সাদাপোষাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য বাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
অপরদিকে, বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেটের আশপাশে যাতে যানজট না লাগে সেক্ষেত্রে এসএমপির ট্রাফিক বিভাগ তৎপর রয়েছে। তাদের মধ্যে শপিংমল ও মার্কেট কমিটি নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিয়েছে। তারাও যানজট নিরসনে কাজ করছেন। যেখানে অবৈধ পার্কিং করা হচ্ছে সেখানে জরিমানা করছে ট্রাফিক পুলিশ। পাশাপাশি সর্তকতা বাড়াতে প্রচারও করছে পুলিশ।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd