সিলেটে আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি : কৃষকের মাথায় হাত

প্রকাশিত: ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৫, ২০২২

সিলেটে আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি : কৃষকের মাথায় হাত

নিজস্ব প্রতিবেদক :: উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আকষ্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে পড়েছে এই দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চল। এছাড়া জৈন্তাপুর উপজেলারও অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।ঢলে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার জমির ফসল। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। অনেক বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়েছে পানি।

সোমবার সকাল থেকেই ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে ঢল নামতে শুরু করে। দুপুরের দিকে তলিয়ে যায় বিস্তির্ন অঞ্চল। সীমান্তের ওপারে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিস্টরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার রাত থেকেই ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকে ঢল নামা শুরু হয়। ঢলের স্রোতে ভেঙে গেছে নদীরক্ষা বাঁধ। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলা।

সোমবার দুপুরের দিকে গোয়ানঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী রুস্তমপুর, পূর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং, গোয়াইনঘাট সদর ও পূর্ব আলীরগাঁও এবং পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। ঢলে তলিয়ে যায় এসব এলাকার এলাকার রাস্তাঘাট। জাফলং বাজার, রাধানগর বাজার, লন্ডনী বাজার, বাংলাবাজার ও নতুন বাজারসহ উপজেলার কয়েকটি হাটবাজার এবং এসব এলাকার কিছু ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে।

নদীর পানি উপচে তলিয়ে গেছে জাফলং-রাধানগর-গোয়াইনঘাট সড়কের জাফলং চা বাগান এলাকা। ফলে উপজেলা সদরের সঙ্গে পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে ডউকি নদীর প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের আসামপাড়া এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য নির্মিত বাঁধ। পানিতে তলিয়ে গেছে এসব উপজেলার বোরো ধান।

উপলো কৃষি কর্মকর্তার তথ্য মতে, ঢলে ৫ থেকে ৬শ হেক্টর পানি তলিয়ে গেছে। তবে স্থানীয়দের হিসেবে আরও তলিয়ে যাওয়ার জমির পরিমান আরও বেশি।

পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের মনাইকান্দি গ্রামের কৃষক ওলিউর রহমান বলেন, ঢলে আমার ২০ বিঘাসহ এলাকারই প্রায় দুইশ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। ঢলের যে স্রােত ছিলো তাতে উপজেলার বেশিরভাগ জমিই তলিয়ে যাওয়ার কথা।

তবে গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রায়হান পারভেজ বলছেন, এ পর্যন্ত ৫ থেকে ৬শ’ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। তবে দুয়েক দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফসলের তেমন একটা ক্ষয়-ক্ষতি হবে না।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাহমিলুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণ ও ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। ফসলি জমির পাশাপাশি বেশকিছু রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা বন্যা কবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং সবকটি ইউনিয়নের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

ঢলে তলিয়ে গেছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলারও বিভিন্ন এলাকার জমির ফসল। সোমবার বিকেল পর্যন্ত উপজেলার ইসলামপুর পুর্ব, তেলিখাল, ইছাকলস ও দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। এসব এলাকার কয়েকটি সড়ক এবং কিছু বাসাবাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এই চার ইউনিয়নের প্রায় ৫শ’ হেক্টর জমিতে পানি প্রবেশ করেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

ইসলামপুর পুর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর আলম জানান, চানপুর গ্রামে বাঁধ ভেঙে গিয়ে রংপুর, শিমুলতলা নোয়াগাঁও, মোস্তফানগর, ঢালারপাড়সহ আশপাশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার আধাপাকা ও কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নিচু এলাকার জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে কি পরিমান জমি তলিয়েছে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং বলেন, এখনও পর্যন্ত হাওরে পানি প্রবেশ করেনি। তবে কিছু নিম্নাঞ্চলে তলিয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে পানি কমতে পারে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

সোমবার দুপুরের পর থেকে জৈন্তাপুর উপজেলারও নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, কাল পর্যন্ত ভালো ছিলো। আজ সকাল থেকে নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। দুপুর থেকে নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তবে কোন এলাকায় পানি ঢুকেছে বা কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার খবর এখন্ও পাইনি।

সিলেট জেলায় এবার ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে জানিয়ে জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাজী মজিবুর রহমান বলেন, ঢলে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় কিছু ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে তা খুব বেশি নয়। দুইশ’ হেক্টরের মতো ডুবেছে বলে শুনেছি। তবে পুরো হিসেব এখন্ও পাইনি।

তিনি বলেন, পাহাড়ে বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমান বাড়বে।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2022
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  

সর্বশেষ খবর

………………………..