সিলেটের আতিয়া মহলের দুঃসহ স্মৃতির ৫ বছর

প্রকাশিত: ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০২২

সিলেটের আতিয়া মহলের দুঃসহ স্মৃতির ৫ বছর

জেদান আল মুসা :: ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ। সিলেটের শিববাড়ীর পাঠানপাড়া এলাকায় আতিয়া মহলে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার কথা মনে হলে এখনও শিউরে উঠি।

২৫মার্চ সন্ধ্যায় জঙ্গিদের হামলায় জীবন উৎস্বর্গ করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের দুইজন পুলিশ অফিসার ও র‌্যাব ইন্টেলিজেন্স উইং এর মেজর আজাদ। ঘটনায় চারজন সাধারন নাগরিক নিহত হন। তাদের সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহপাক তাঁদের জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। আমীন।

মোগলাবাজার থানার পাঠানপাড়া-২৭ নং ওয়ার্ডর উস্তার আলী’র বাসায় জঙ্গি আছে মর্মে তথ্যের ভিত্তিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ এর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া স্যারের নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সিলেট মহানগর পুলিশ ২৪ মার্চ রাত অনুমান ০২.০০ ঘটিকা হতে বাসাটির চারপাশে ঘিরে রাখে।

সেই সময় আমি অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) হিসেবে কর্মরত ছিলাম এবং ঘটনাটি আমার দায়িত্বধীন এলাকায় হওয়ায় আমাকে পুরো অপারেশন প্ল্যান প্রস্তুত করতে হয়েছিল।

নির্ঘূম রাত শেষ হয়েছিলো ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পর্যাবেক্ষণ, তথ্য সংগ্রহ ও সামগ্রিক কার্যাক্রমের মাধ্যমে। এরই মধ্যে জঙ্গিরা তাদের অবস্থান নিশ্চিত এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য সকাল অনুমান ৮ টা ৩০ মিনিটের দিকে “আল্লাহু আকরা” ধ্বনি দিয়ে বিকট শব্দে একটি বোমা নিক্ষেপ করে তাদের অবস্থান জানান দেয়।

তখন আমরা আতিয়া মহলের আশেপাশের বিল্ডিংয়ের লোকজন সরিয়ে নিই। জঙ্গিদের কাছে বিস্ফোরক দ্রব্য থাকায় সাময়িক ভাবে অভিযান স্থগিত রেখে পুলিশ বাড়িটির চারিদিক ঘিরে রাখে এবং সাহায্য চায় বিশেষায়িত ইউনিটসমূহের কাছে।

ঢাকা হতে সন্ধ্যার মধ্যে সোয়াট টিমের সদস্যরা সিলেট এসে পৌছায়। তারা ঘটনাস্থল রেকী করে অপারেশন প্ল্যান প্রস্তুত করে।

২৫মার্চ সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন সাধারণ চার জন নাগরিক। ৭ টা ৪৫ মিনিটের দিকে জঙ্গিদের আরেকটি বোমায় আঘাতে নিহত হন পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ও চৌধুরী মো. আবু কয়সর এবং র‍্যাবের মেজর আবুল কালাম আজাদ। ঘটনাস্থলে আমিও অবস্থান করছিলাম।

চৌধুরী আবু কয়সর ও ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম ও ইন্সপেক্টর সোহেল আমার পাশেই ছিলেন। একটু দূরে ছিলেন এসআই জনি লাল দে ও এস আই পারভেজ এবং তৎকালীন সময়ের দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি ইন্সপেক্টর হারুন অর রশিদ, এসি কোতয়ালি দস্তগীরসহ অনেকে। বোমার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা শিববাড়ি।

২৬ মার্চ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে আতিয়া মহলের সমস্ত জঙ্গিদের আস্তানা নির্মূল করা হয়। ২ জন জঙ্গী নিহত হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে আরও ৪ জন জঙ্গীকে নির্মুল করার মাধ্যমে অভিযানের কার্যক্রম সমাপ্ত হয়।

এরআগে অভিযানের মাধ্যমে মোট ৭৮ জন সাধারণ নাগরিককে আতিয়া মহল বিল্ডিংয়ের মধ্যে থেকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।

উক্ত ঘটনায় মোগলাবাজার থানায় দুটি মামলা রুজু হয়েছিলো। এসি মোগলাবাজার জ্যোতির্ময় সরকার, এসি ইসমাঈল, এডিসি গোপাল বাবু, এসি জুবায়ের, ওসি খাইরুল ফজল, ইন্সপেক্টর সঞ্জিতসহ অনেক পুলিশ অফিসার ও ফোর্স সেই সময় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। তাদের ধন্যবাদ জানাই।

পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া স্যারের বলিষ্ঠ ভূমিকার ফলে সেদিন জঙ্গিদের নির্মূল করা সম্ভব হয়েছিলো। সাহসী ভূমিকা ছিলো উপ পুলিশ কমিশনার রেজাউল স্যার, বাসুদেব স্যার, ফয়সল স্যার, শামীম স্যার, তোফায়েল স্যার এর। অতিরিক্ত কমিশনার রোকন স্যার খুব কাছে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেছেন। সকল স্যারদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আজ করোনার আতঙ্কে হয়তোবা ব্যস্ততায় আমরা ভুলে ভুলে গিয়েছি নিহত পুলিশ অফিসারদের আত্মত্যাগের কথা। তাঁদের পরিবার কেমন আছেন? আহতরা বা কেমন আছেন? আমরা ভুলে গেছি। কিন্তু নিহতদের পরিবার স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছে। বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জীবন উৎস্বর্গকারী বীরদের।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

March 2022
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..