খাদিমপাড়ায় বাবা-মেয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ পীরেরচক এলাকার মানুষজন

প্রকাশিত: ৮:৩৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২২

খাদিমপাড়ায় বাবা-মেয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ পীরেরচক এলাকার মানুষজন

ক্রাইম প্রতিবেদক: সিলেট সদর উপজেলার ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ৮ নং ওয়ার্ডের পিরেরচক ও মন্দিরের কোনা এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ মামলাবাজ বাবা-মেয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- সনজিদ আলী উরফে পাখি মিয়া (৬০) সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার আলমপুর এলাকার মৃত মাহমদ আলীর ছেলে। তার বিবাহিত জীবনে তিন ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। তবে সনজিদ আলী উরফে পাখি মিয়া আজ হইতে ২০/২৫ বছর আগে নিজের পিতার বাসস্থান থেকে বিতারিত হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে আসেন মন্দিরের কোনা এলাকায়। আর এখানে আসার পর থেকেই সে ও তার মেয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ওই এলাকার শান্তি প্রিয় সর্বস্তের জনসাধারণ। স্থানীয়ও এলাকার কারো সাথে চুন থেকে পান খসলেই এলাকার সামাজিক ব্যক্তিবর্গকে কোন তোয়াক্কা না করেই সনজিদ আলী তার মেয়ে সালমা বেগম কমলার পরামর্শে ছুটে যান থানা পুলিশের নিকট। জানা গেছে সনজিদ আলীর একমাত্র খুঁটির জোর ৪৫ বছর বয়সেও এখনো অবিবাহিত তার মেয়ে সালমা বেগম কমলা। তার মেয়ে সালমা বেগম কমলা নিজেকে কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা পরিচয় দিলেও আসলে তিনি শিক্ষক নন। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে অতীতের নানা রকম খারাপ কার্যকালাপের অসংখ্য অভিযোগ এলাকাবাসীর। এক কথায় মেয়ে শেল্টারে বেপরোয়া বাবা সনজিদ আলী। আর স্থানীয় এলাকায় তাদের এই পরিবারকে মামলাবাজ পরিবার বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায় সনজিদ আলীর মেয়ে সালমা বেগম কমলা এলাকায় প্রতিনিয়ত বলে বেড়ান সিলেটে পুলিশের কোন এক এডিসির সাথে তার সু-সম্পর্ক রয়েছে তাই সে চাইলে পুলিশ দিয়ে যে কাউকে যে কোন সময় যা ইচ্ছে তাই করতে পারে নিমিষেই। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় কে সেই এডিসি? তাহলে কি সেই এডিসি এই মামলাবাজ পরিবারের খুঁটির জোর?

স্থানীয়ও একাধিক সুত্রে জানা গেছে- সনজিদ আলী এই এলাকায় আসার পর হইতে হাতে-গোনা ৪/৫ পরিবার ছাড়া সম্পূর্ণ এলাকাবাসীর সাথে রয়েছে জায়গায়-জমি সহ বিভিন্ন ধরণের ঘটনায় স্থানীয় থানায় অসংখ্য জিডি ও অভিযোগ। কিন্তু যে কোন ঘটনায় সরজমিন তদন্ত পুলিশ গেলে পান অভিযোগ বা জিডির বিপরীত। সনজিদ আলী নিজের অপকর্ম আড়াল করতে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই তিনি করে বসেন জিডি বা মামলা। আর স্থানীয় থানায় সনজিদ আলীর অভিযোগ বা জিডি না নেয়া হয় তখন তারা বাবা-মেয়ে কোর্টের আশ্রয় নিয়ে হেনেস্তা করে যাচ্ছেন এলাকার বহু জনসাধারণকে যা সরজমিন তদন্তে প্রকাশ পাবে।

আরো জানা গেছে- আজ থেকে ১ বছর খানেক আগে সনজিদ আলী ও তার মেয়ে সামলা বেগম কমলা স্থানীয় এলাকার শাহ গরম দেওয়ান (রহ.) মাজারের কিছু জায়গা জবর দখলের উদ্দেশ্য জোরপূর্বক তাদের দখলে নিয়ে নেয় তবে শেষমেশ এলাকাবাসীর চাপের মুখে পরে এই জায়গা ছাড়তে বাধ্য হন বাবা ও মেয়ে।

তাছাড়া জৈনিক মুহিবের জায়গা জোরপূর্বক জবর দখলে এখনো মরিয়া রয়েছে বাবা- মেয়ে। যা এখন আদালত পর্যন্ত ঘরিয়েছে। মেয়ে সুসম্পর্কের জের ধরে বাবা এলাকায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করছে। তারা বাবা-মেয়ের মামলাবাজির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। অনেকে আবার মামলার ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও নারাজ।

এছাড়াও জানা গেছে- সনজিদ আলী ও তার মেয়ে সালমা বেগম কমলার যন্ত্রণায় এখন অতিষ্ঠ তাদের নিকট আত্মীয় দুইটি পরিবার। তবে সনজিদ আলীই একটি পরিবারকেই ওই এলাকায় জায়গা কিনে দিয়ে এখন তাদের বিঠামাটি ছাড়ানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে সে ও তার মেয়ে। এই ঘটনায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া মামলা মোকদ্দমাও রয়েছে তাদের মধ্যে।

সম্প্রতি গত মঙ্গলবার (৮ই মার্চ) দুপুর অনুমান দেড় ঘটিকারা দিকে বাদী তার দুবাই প্রবাসী স্বামীর সহিত ভিডিও কলে কথা বলাকালীন সময়ে দেখতে পান বিবাদীগণ তাদের জমিতে কাজ করছে তখনই তার ভিডিও কলে কথা বলার বিষয়টি বিবাদীগণের নজরে আসলে বিবাদীগণ তিনি ভিডিও করছেন বলে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে বিবাদী কামাল উদ্দিন তানু মিয়া ও খোদেজা বেগম তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে তাকে মারপিট করতে থাকে তখন তিনি মাটিতে লুটিয়া পড়লে বিবাদীরা বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

পরবর্তীতে বাদী বিবাদীগণের এহেন কার্যক্রমে নিজে ও নিজের পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে একই দিন বিকালে শাহপরান (রহ.) থানায় একখানা সাধারণ ডায়রী করেন, যাহার থানার নং- ৪৩৪। বর্তমানে বাদীর সাধারণ ডায়রীর তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সর্বশেষে বিবাদীগণ তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়রীর সংবাদ শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার (১০ই মার্চ) রাত অনুমান ০৮:৩০ ঘটিকার দিকে সমূহ বিবাদীগণ একত্রিত হয়ে বাদীকে মারধরের জন্য হামলা চালায় তখন বিবাদী সনজিদ আলী পাখির হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র কাঠের রোল দিয়ে বাদীর দেবর মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্য মাথা লক্ষ্য করিয়া আঘাত করে গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম করে এমনকি অপর বিবাদীগণ সেই আহত মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকে বেকধর কিল-ঘুষি মারে।

আহত মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে বিবাদীগণ এই ব্যাপারে তাদের আইনের আশ্রয় না নেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলে যায়। তাছাড়া উক্ত ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় শাহপরান (রহ.) থানা পুলিশ জানতে পেরে সরজমিনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহত মানসিক প্রতিবন্ধী যুবককে চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করে।

আরো উল্লেখ্য গতকাল মঙ্গলবার (১৫ই মার্চ) সনজিদ আলীও তার মেয়ে সালমা বেগমসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে সনজিদ আলীর ভাতিজী সালমা আক্তার পপি নিজেও তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে শাহপরান (রহ.) থানায় আরেকখানা সাধারণ ডায়রী করেছেন, যাহার থানার ডায়রী নং- ৮২৮।

এ ব্যাপারে শাহপরান (রহ.) থানার ওসি তদন্ত ইন্দ্রনিল ভট্টাচার্য রাজন মামলার সততা নিশ্চিত করে বলেন- এই ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার (১৫ই মার্চ) নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। যাহার থানার মামলা নং-২৩।

এ ব্যাপারে শাহপরান (রহ.) মাজার পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ সারোয়ার হোসেন ভূইয়া বলেন- সনজিদ আলী বাদী এমন কোন অভিযোগ আমার কাছে নেই তবে অন্যান্য অফিসারগণের নিকট আছে অবশ্যই। তাছাড়া প্রায় সময় সনজিদ আলী ফাঁড়িতে আসা যাওয়া করেন। আর হে সনজিদ আলীর মেয়ে সালমা বেগম কমলার একটা জিডি আমার কাছে আছে আমি তদন্ত করছি।

এ ব্যাপারে ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মছব্বিরের ব্যবহৃত নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি।

এ ব্যাপারে ৪ নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আফসর আহমদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- সনজিদ আলী ও তার মেয়ের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ শুনেছি। তাদের বিরুদ্ধে গতকাল মামলা ও হয়েছে শুনলাম পুলিশের সামনে এক মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে মারপিট করার অভিযোগে। তারা সমাজের কারো কথাবার্তা শুনেন না। লোকজনের বিরুদ্ধে তাদের মামলা আর মামলা। এক কথায় তারা মামলাবাজ পরিবার।

সর্বশেষে এই মামলাবাজ পরিবারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকার সচেতন মহল সহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যগণ।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

March 2022
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..