সিলেট ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৬ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৩২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক, জৈন্তাপুর :: বাংলাদেশের বহুল পরিচিত পর্যটন এলাকা সিলেটের জৈস্তাপুর উপজেলার লাল শাপলা বিলখ্যাত কেন্দ্রী বিল এর পানি সেচ করে ৩০ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করে নিয়েছে স্থানীয় একটি চক্র। ফলে সিলেট জেলা ব্রান্ডিং পর্যটন স্পট লাল শাপলা বিলের লাল শাপলা হুমকির সম্মুখীন। বিলের পানি সেচ করায় কেন্দ্রী বিলের লাল শাপলা ধ্বংস হওয়ার আশংকা করছেন পরিবেশ কর্মীরা। লাল শাপলা বিলের মাছ ধরার সাথে জনপ্রতিনিধি, শাপলা বিল সংরক্ষণ কমিটি ও স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জড়িত বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের কেন্দ্রী, হরফকাটা ও ইয়ামবিলে প্রচুর পরিমাণে লাল শাপলা ফুল ফূটে। খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে এই লাল শাপলা বিলের ছবি সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ায় তা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভ্রমনপিপাসু প্রতিদিন লাল শাপলা বিলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। লাল শাপলা বিলকে সিলেট জেলা ব্রান্ডিং হিসেবে ব্যবহার করছে জেলা প্রশাসন। এক সময় এই বিলগুলো তপশিলভুক্ত ছিল বলে ইজারা প্রদান করা হতো। লাল শাপলা সংরক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসন গত পাঁচ বছর থেকে ইজারা বন্ধ করে দেন। ফলে প্রতি বছর বিল গুলোতে প্রচুর পরিমাণে লাল শাপলা ফুল ফুটে। বিগত দিনে বিল ইজারা না দেওয়ায় এবং মাছ ধরা নিষিদ্ধ করায় বিলে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শাপলা বিলের চতুর্দিকে বাধ নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে তার কাজ শুরু হয়।
জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল আহমদ এর তত্বাবধানে কাজ শুরু হওয়ার পরে বিলের পানি কমানো হয়। কিছুদিন পর বাধ নির্মাণের কাজ চলাকালে শাপলা বিল সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি শাহিনুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ ও স্থানীয় সাংবাদিক রেজওয়ান করিম সাব্বির বিলের সম্পুর্ণ পানি সেচ করে ত্রিশ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করেন। বর্তমানেও মাছ বিত্রিু অব্যাহত রয়েছে এবং প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গাড়ীভর্তি মাছ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় এই বিলের দেশীয় প্রজাতির বড় বড় মাছগুলো ভারতের মেঘালয়ে পাচার করা হচ্ছে। ফলে লাল শাপলা বিল ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে। এতে শাপলা বিলে আগামী মৌসুমে লাল শাপলা নাও ফুটতে পারে এমন আশংকা করা হচ্ছে।
তাছাড়া এই বিলে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ অতিথি পাখির বিচরণ থাকলেও পানি সেচের কারনে পানি শূন্য শুকনো বিলে পাখিরাও যেনো কান্না করছে। বিলের পানি সেচ ও মাছ বিক্রির ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন কিছুই জানেন না। তবে লাল শাপলা বিল সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি শাহিনুর রহমান দাবি করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমেদ কে খাস কালেকশন এর এক লক্ষ টাকা দিয়ে তারা মাছ শিকার করছেন। কিন্তু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সালাউদ্দিনের সাথে আলাপকালে তিনি টাকার কথা অস্বীকার করে বলেন আমি ত এই ভূমির মালিক নয়। আমাকে কেনো তারা টাকা দেবে, হয়ত অন্য কারো সাথে লেনদেন হয়েছে আর ভূলত্রুমে আমার নাম উঠে আসছে। এ ব্যাপারে জৈন্তাাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ জানান বাধ নির্মাণ এর জন্য তিনি বিলের এক হাত পানি কমিয়েছেন। তিনি আরো বলেন পরে শাপলা বিল সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি শাহিনুর রহমান,সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ ও সাংবাদিক রেজওয়ান করিম সাব্বির প্রশানের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা দিয়ে খাস কালেকশন এর নামে বিল সেচ করে মাছ ধরছেন বলে তিনি শুনেছেন।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) রিপামনি দেবী জানান, লাল শাপলা বিল খাস কালেকশন এর জন্য কাউকে দেয়া হয়নি। যদি কেউ মাছ ধরে তবে তিনি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। সিলেটের এই পর্যটন স্পট এর পানি শুকিয়ে মাছ ধরার ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, শাপলা বিল পর্যটন স্পট সিলেট জেলা ব্রান্ডিং করে। পানি সেচ করে মাছ লুট করে যারা বিলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন পানি সেচে মাছ ধরার বিষয়টি শুনে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ভারপ্রাপ্ত) ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়েছেন। সারা দেশের আলোচিত একটা পর্যটন স্পট জৈন্তাপুরের লাল শাপলা বিল। প্রর্যটক আকৃষ্ট হওয়ায় যেখানে তপশীলভূক্ত বিল থেকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ এক শ্রেণীর স্বার্থন্বেশী মহলের থাবায় স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় মাছ লোট-পাটে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য। গত সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকরা শুকনো বিলে মরা ফুল থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিত্রিুয়া ব্যক্ত করেছেন। অনেকে বলছে দিনে-দুপুরে বিল শুকিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে শাপলা বিলের সৌন্দর্য, স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd