সিলেট ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৫১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০২২
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :: বিনামুল্যের পশু চিকিৎসায় টাকা নেয়া, সরবারহ থাকার পরও কোম্পানির ঔষধ কিনতে বাধ্য করা, মাঠ পর্যায়ে প্রজনন কর্মী ও ভিএফএ (ভেটেরিনারি ফিল্ড এসিষ্ট্যান্ট) দের চাঁদাবাজি, সরকারি ঔষধে ঝুকিপুর্ণ নিরাপত্তা স্টিকারসহ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।
হাসপাতালে পশু চিকিৎসা নিতে এসে পশু মালিকদেরকে ৩/৫শ টাকা দিতে হয়। আর সরকারি ১৫ টাকার ভ্যাকসিন ২/৩শ টাকায়ও বিক্রি করা হয় মাঠ পর্যায়ে। এনিয়ে পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা ভুক্তভোগী মখলিছ মিয়া বলেন, ভিএফএ যারা আছে তাদের ফোন অনেক সময় ধরেনা। আমরা ৩/৪ বার অনুরোধ করার পর তারা আসলে তাদেরকে ৫ শ থেকে ১ হাজার টাকার নিচে দিলে রাগ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে আর আসেনা। শুধু তাই নয় সরকারি ১৫ টাকার ভ্যাকসিনও হাসপাতালেই বিক্রি করে ২/৩ শ টাকায়। যদি বাড়তি টাকা দেই তাহলে বের করে দেয়। আর নাদিলে বলে সাপ্লাই নাই। সরকার না দিলে আমরা পামু কই। এসময় ভুক্তভোগীসুত্র আরো জানায়, আমার প্রতিবেশীর জন্য ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন ও হাসের ডাকপ্লেগ ভ্যাকসিন আনতে গিয়ে বেশি টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। এদের লজ্বা-ভয় কোনটিই নেই। হাসপাতালটির ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার লাবনী রাণী দাস সরাসরি একর্মকান্ড পরিচালনা করে। এদিকে পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার অপর ভুক্তভোগী শামিম সিকদার বলেন, আমার তিনটি ছাগলের একটি মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়। এরপর কয়েকদিন আগে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা করাই। এতে আমার ৫/৬শ টাকা খরচ হয়েছে কারন তাদেরকে বকশিস দিতে হয়। আর কাজ করার আগেই বলে এত টাকা লাগবে। রাজি হলে কাজ করে আর নাহলে কাজ করেনা। আর গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের লেঙ্গুড়া এলাকার নারী ভুক্তভোগী আসমা খাতুন বলেন, আমি ২/৩ বার ছাগল নিয়ে এসেছি প্রতিবারই স্লিপ লিখে দিয়েছে বাইরে থেকে ঔষধ আনার জন্য এবং তারা যে কোম্পানি লিখে দিবে সেটাই কিনতে বাধ্য করে। অপরদিকে উক্ত ভেটেরিনারি হাসপাতালে কি কি ঔষধ সরকারিভাবে সরবরাহ রয়েছে তার কোন চিত্র তুলে ধরতে সক্ষম হয়নি কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে একাধিক সুত্র জানায়, কম্পাউন্ডার ও মাঠকর্মীরা কোন প্রকার তথ্য দেয়না। কারন তাদের দুর্ণীতি ফাঁস হয়ে যাবে।
ঔষধ সরবারহের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান, আমার অনুপস্থিতিতে স্টোরের দায়িত্বে থাকেন ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার লাবনী রাণী দাশ। কিন্তু তার কাছে জানতে চাইলে সেও ঘোজামিলের আশ্রয় নিয়ে বলেন, স্যার না আসলে কিছু বলতে পারবোনা। তাহলে চিকিৎসা করেন কিভাবে? এরকোন সদুত্তর মেলেনি।
সুত্রে আরো জানা গেছে, গাভী প্রজনন বাড়াতে সরকারের উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়ে ষাড়ের বীজ সরবরাহ করা হয় প্রজনন কর্মীদের মাধ্যমে। বীজের একটি টিউব যদি কেউ খামারি বা পশুর মালিক তার বাড়িতে প্রজনন কর্মী ডেকে নিয়ে স্থাপন করেন তাহলে তাকে সরকারি নিয়মানুযায়ী ৭০ টাকা দিতে হবে। আর যদি হাসপাতালে এসে তা গাভিতে স্থাপন করে তাহলে তাকে দিতে হবে ৩০ টাকা। কিন্তু ভুক্তভুগী সুত্র জানায়, ৩০ আর ৭০ তো দুরে থাক ৫/১হাজার টাকার নিচে এরা টাকাই ধরেনা। আর আগেই চুক্তি করে নেয়। এদিকে হাসপাতলটি থেকে সরবরাহকৃত ঔষধের মোরকে ‘এটি প্রাণী সম্পদের সম্পদ, বিক্রয়ের জন্য নহে’ সরকারি এ স্টিকারটি লাগানো হয় সরকারি ঔষধ কালোবাজারি ঠেকানোর জন্য। কিন্তু সেই স্টিকারটিও নামে মাত্র লাগানো রয়েছে এবং সহসাই স্টিকারটি উঠানো সম্ভব। যেকারনে কালোবাজারি হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রানী সম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে লুটন মিয়া নামের এক যুবকের মাধ্যমে একটি হাস নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন এ প্রতিবেদক। এসময় লুটন মিয়া হাসের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা জানালে ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার লাবনী রাণী দাশ ১০০ টাকা নগদ গ্রহন করে লুটনের হাতে ১ টি ভ্যাকসিন দেন। ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার লাবনী রাণী দাশ, হাস,ভ্যাকসিনসহ লুটন মিয়ার উপস্থিতে
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রানী সম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাঃ জামাল খানকে উক্ত বিষয়ে অবগত করলেও তিনি কোন কথা বলেননি। সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাকসিন সরবরাহে গরুর তর্কা ৫০, খুরা ১শ ৬০, ছাগলের পিপিআর ৫০, গলাফুলা ৩০, মহিষের গলাফুলা ৩০, বাদলা ৩০ টাকা, মুরগির রানিক্ষেত ১৫টাকা, হাস ডাকপ্লেগ ৩০টাকা নেয়ার নিয়ম রয়েছে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন ফি’র বাইরে বাড়তি টাকা হাতানোর ব্যাপারে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভেটেরিনারি মাঠ কর্মীরা বলেন, আমরা ভ্যাকসিন ফির বাইরে কোন চার্জ নেইনা অন্য কেউ কি করে জানিনা। তবে একই সুরে অন্যান্যরা মাঠ কর্মীরাও কথা বলেছেন বলে সুত্রে জানাগেছে। বিষয়টি গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। হাসের ভ্যাকসিন সাথে নিয়ে লুটন মিয়া গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক আহমদের নিকট উপস্থিত হয়ে ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার লাবনী রাণী দাশের উপর ১৫ টাকার ভ্যাকসিনের মূল্য ১০০ টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন। এসময় গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক আহমদ মোবাইলে ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার লাবনী রাণী দাশের সাথে উক্ত অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেন। এসময় ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার লাবনী রাণী দাশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক আহমদের কাছে দোষ স্বীকার করে সরী বলেন।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক আহমদ বলেন, হাসের ভ্যাকসিন সাথে নিয়ে পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের পুকাশ গ্রামের বীরমুক্তি যোদ্ধা জমির আলীর ছেলে লুটন মিয়া গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রানী সম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার লাবনী রাণী দাশের উপর ১৫ টাকার ভ্যাকসিনের মূল্য ১০০ টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার লাবনী রাণী দাশের সাথে কথা বললে তিনি দোষ স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd