সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:০৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বিকেল থেকে নানা নাটকীয়তা, উত্তেজনা আর এক পক্ষের বর্জনের মধ্যেই সিলেট চেম্বারের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। চেম্বারের নতুন সভাপতি হয়েছেন তাহমিন আহমদ। এছাড়া ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আতিক হোসেনকে সহ-সভাপতি পদে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তারা সকলেই চেম্বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্রার্থী ছিলেন। এদের মধ্যে তাহমিন ও আতিক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
সোমবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে চেম্বার নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুল জব্বার জলিল এই তিনজনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ফলাফল ঘোষণার পর পুলিশ প্রহরায় চেম্বার ভবন ছাড়েন নির্বাচন কমিশনাররা। তবে এই ফলাফল ঘোষণার আগেই রাত ১১টার দিকে নির্বাচন বর্জন করে চেম্বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অপর প্যানেল সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ। তারা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অগঠনতান্ত্রিক ও একেপেশে আচরণের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এ ব্যাপারে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের নেতারা।
বর্জনের ঘোষণার আগে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রহমান জামিল ও সহ-সভাপতি প্রার্থী হুমায়ুন আহমদের প্রার্থীতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এনিয়েই শুরু হয় জটিলতা। গত শনিবার সিলেট চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই প্যানেল সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে ১১ জন করে পরিচালক নির্বাচিত হন। রোববার দুই প্যানেল থেকেই সভাপতি ও সহ-সভাপতি নিজেদের প্রার্থী তালিকা নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেয়। সভাপতি পদে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে আবু তাহের মো. শোয়েব, তাহমিন আহমদ ও ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদের নাম দেয়া হয়েছে। অপরদিকে, সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে সভাপতি পদে একক প্রার্থী হিসেবে আব্দুর রহমান জামিলের নাম জমা দেওয়া হয়। সোমবার বিকেলে সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে ভোট হওয়ার কথা ছিলো। তবে দুই প্যানেল থেকে সমান সংখ্যক পরিচালক বিজয়ী হওয়ায় সভাপতি ও দুই সহ-সভাপতি নির্বাচন নিয়ে জটিলতার দেখা দেয়। রাত পর্যন্ত দীর্ঘ আলোচনা ও সমাঝোতার চেষ্টা চালিয়েও দুই পক্ষ ঐক্যমতে পৌছতে পারেনি। এনিয়ে উত্তেজনার মধ্যে রাত ৯টার দিকে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রহমান জামিল ও সহ-সভাপতি প্রার্থী হুমায়ুন আহমদের প্রার্থীতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। বাতিলের পরই সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের নেতারা নির্বাচন বর্জন করে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসেন।
এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্রার্থী তাহমিনকে আহমদকে ও সহ-সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ ও আতিক হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
চেম্বারের নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, চেম্বার নির্বাচনে অর্ডিনারি, এসোসিয়েট, গ্রুপ শ্রেণী ও টাউন শ্রেণি এই চার গ্রুপে প্রার্থীতা অংশ নেন। প্রেসিডিয়াম নির্বাচনেও এ চার শ্রেণি থেকে প্রার্থী দিতে হয়। কিন্তু সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে সভাপতি ও সহসভাপতি পদে কেবল অর্ডিনারি শ্রেণি থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এটা গঠনতন্ত্র বিরোধী। তাই তাদের দুজনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
তবে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রহমান জামিল বলেন, অতীতেও একটি গ্রুপ থেকে প্রার্থী দিয়ে চেম্বারের সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু আজকে নির্বূাচন কমিশন সম্পূর্ণ অন্যায় ও একপেশেভাবে একটি প্যানেলকে বিজয়ী করার জন্য আমাদের প্রার্থীতা বাতিল করেছেন। যা অগ্রণযোগ্য। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেবো।
সোমবার রাত ১০টার দিকে চেম্বার ভবনের পাশে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ভবন ও আশপাশের এলাকা ঘিরে রেখেছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। পাশেই জটলা পাকিয়ে আছেন কয়েকশ’ তরুণ।
সিলেট ব্যবসায়ী সমিতি থেকে নির্বাচিত পরিচালক নজরুল ইসলাম বাবুল অভিযোগ করে বলেন, আজকে চেম্বারের ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক দিন। চেম্বার ভবনের ভেতরে প্রেসিডিয়া নির্বাচন চলছে। অথচ বাইরে বিপুল সংখ্যক ছেলেরা মহড়া দিচ্ছে। তারা উত্তেজনাকর শ্লোগান দিচ্ছে। একটি গোষ্টি চেম্বারের দখল নিতে এই তরুণদের জড়ো করেছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের নির্বাচনে এমন ঘটনা নজিরবিহীন ও লজ্জ্বাজনক।
তবে চেম্বার নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিল জানিয়েছেন, আমরা গঠনতন্ত্র অনুসারেই সব কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। গঠনতন্ত্রের বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। এ বিজয়ী প্যানেলের নেতাদের বক্তব্য জানা যায়নি। মোবাইল ফোনে চেষ্টা করা হলেও তারা কল ধরেননি। এরআগে শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চার ক্যাটাগরির দুটির নির্বাচনে ৪০ প্রার্থীর মধ্যে পরিচালক পদে বিজয়ী হয়েছেন ১৮ জন। অপর দুই ক্যাটাগরিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪ জন পরিচালক বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে বিজয়ীরা হলেন- অর্ডিনারি শ্রেণি থেকে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ (৭১৩ ভোট), ফখর উছ সালেহীন নাহিয়ান (৭০৮), মুশফিক জায়গীরদার (৬৫৩) এবং সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের হুমায়ূন আহমদ (৯১১ ভোট), জহিরুল কবির চৌধুরী (৮৬৭), ফাহিম আহমদ চৌধুরী (৮৫৯), খন্দকার ইসরার আহমদ রকী (৭৯৬), আলীমুল এহছান চৌধুরী (৭৩২), মো. আব্দুস সামাদ (৬৮৮), দেবাংশু দাস মিঠু (৬৮৪), মো. নজরুল ইসলাম (৬৫৩), আব্দুর রহমান জামিল (৬৫০) বিজয়ী হয়েছেন।
এসোসিয়েট শ্রেণি থেকে বিজয়ী হয়েছেন, সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদ (৬৫৭), মুজিবুর রহমান মন্টু (৬৫৭), ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী রাজিব (৬১২) ও কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৬০৭) এবং সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের জিয়াউল হক (৫৭০ ভোট) ও হাজী সরোয়ার হোসেন ছেদু (৫৪০)।
এদিকে, পরিচালক প্রার্থীদের মধ্যে ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণিতে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন- ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে আবু তাহের মো. শোয়েব (চেম্বারের বিদায়ী সভাপতি), মো. হিজকিল গুলজার ও মো. আতিক হোসেন এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণিতে আমিনুর রহমান। এ দুই ক্যাটাগরিতে চারটি পরিচালক পদে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ কোনো প্রার্থী দেয়নি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd