সিলেট ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক :: পাথর রাজ্য সিলেটের জাফলংয়ে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ পাথর উত্তোলন। আদালত ও সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুধু কাগজে-কলমে। বাস্তবে পাথরখেকোরা পূরোদমেই উত্তোলন করে যাচ্ছে পাথর সম্পদ। থামছে না যেমন পাথর উত্তোলন তেমনি থামছে না মৃত্যুর মিছিলও। গতকাল সোমবার অবৈধ পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে শুকনো মাটিচাপায় সলিল সমাধি ঘটেছে এক পাথর শ্রমিকের। দুপুরে জাফলংয়ের ডাউকি নদীপারের একটি গর্তে অবৈধ পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে মাটি চাপাঁয় তার মৃত্যু ঘটে। নিহত পাথর শ্রমিক হযরত আলী (৩০), গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের তিতকুল্লি গ্রামের শহিদুল্লাহর ছেলে।
এ বিষয় গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিমল চন্দ্র দেব স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, জাফলংয়ের ডাউকি নদীতে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে হযরত আলী নামের এক বারকি শ্রমিক নিহত হয়েছে শুনেছি। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি, এবং লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপালে প্রেরণের জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে তাদের জানান তিনি।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নদীতে নয়, শুকনো মাটিতে এক পাথরখোকো গভীর গর্ত করে পাথর উত্তোরনের সময় মাটি চাপা পড়েই ওই শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। জ্ঞাতকারণে নদীতে পানির নিচে বালুচাপায় বারকি শ্রমিকের মৃত্যু ঘটার হাস্যকর তথ্য দিচ্ছে পুলিশ। কারণ এই শুকনো মওসুমে নদীতে যেমন পানি নেই নৌকাও নেই, তেমনি বারকি শ্রমিকও নেই। অতীতে দেখা গেছে, এরকম মৃত্যুর ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষ গর্তের মালিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ গর্তের মালিককে দায়মুক্ত রাখতেই মৃত পাথর শ্রমিককে ‘বারকিশ্রমিক’ অভিহিত করে ‘নদীতে মৃত্যু’ বলে হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করছে পুলিশ।
জাফলংয়ে অবৈধ পাথর উত্তোলনের ফলে সিলেটে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা নিশ্চয় উদ্বেগজনক। পাথরখেকোদের এ অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে না। বন্ধ না হওয়ার কারণ, অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে চালানো হয় আইওয়াশ অভিযান। অভিযান পরিচালনার আগেই সংবাদ পৌঁছে যায় পাথরখেকোদের কাছে। তাই তার সটকে পড়ে এবং অভিযানের পরপরই আবারও তারা ফিরে এসে পাথর উত্তোলন শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে অভিযান পরিচালনাকারীরাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
সচেতন মহলের প্রশ্ন, অভিযান পরিচালনার আগেই যদি অপরাধীরা খবর পেয়ে যায়, তাহলে অভিযান পরিচালনার অর্থ কী? তাহলে কি সর্ষের ভেতরেই রয়েছে ভূত। এই ভূত তাড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অবৈধ পাথর উত্তোলনের ফলে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হলেও অপরাধীদের তৎপরতা কমছে না। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ পাথর উত্তোলনের কাজ নির্বিঘ্নে করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়ে থাকে। বস্তুত স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইশারাতেই চলছে অবৈধ পাথর উত্তোলন। লোকদেখানো অভিযানের বদলে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিলেই প্রকৃতি বিধ্বংসী পাথর উত্তোলনের কাজ স্থায়ীভাবে বন্ধ হতে পারে। অবৈধ পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকলে যেহেতু পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়, তাই এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। কাজেই অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হলে অপরাধীদের যারা পৃষ্ঠপোষক তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।
তবে এবিষয়ে জনতে গতকাল সোমবার রাতে গোয়াইনঘাট থনার ওসি পরিমল চন্দ্র দেব’র সরকারী সেলফোনে বারবার কল দিলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd