সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৪৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক :: রেলকে সরকারীভাবে যাত্রীবান্ধব পরিবহন করার চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও সিলেটের রেল যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে মারাত্মক দুর্ভোগ। রেলের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কালোবাজারি সিন্ডিকেটের হাতে টিকিট চলে যাওয়ায় কাউন্টার থেকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে যাত্রীদের। খোদ স্টেশন ম্যানেজারই টিকিটের জন্য যাত্রীদের বাইরের দালালদের কাছে পাঠিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার টিকেট কারোবাজারি এক টিকেট বিক্রেতাকে হাতেনাতে আটক করা হলেও অজ্ঞাতকারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় নিকটবর্তী যমুনা মার্কেটস্থ অনলাইন মিডিয়া-ওয়ান মিডিয়াসহ কয়েকটি দালাল সিন্ডিকেট। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনকে ঘিরে গড়ে ওঠা কালোবাজারি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন রেলের যাত্রীরা। রেলের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে আগেভাগেই কেটে রাখা হয় টিকিট। ফলে যাত্রীরা কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কাটতে ব্যর্থ হন। অনেক সময় সিট খালি থাকলেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের। সম্প্রতি সিলেটের এক সিনিসয়র সাংবাদিক মেয়েকে নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় যাওয়ার জন্য চট্টগ্রামগামী আন্তনগর ট্রেন উদয়ন এক্সপ্রেস’র টিকিট কাটতে যান। তখন কাউন্টার থেকে তাকে জানানো হয় ট্রেনের কোনো আসন খালি নেই। এরপর তিনি দেখা করেন স্টেশন ম্যানেজার খলিলুর রহমানের সঙ্গে। স্টেশন ম্যানেজার তাকে টিকেট দিতে ব্যর্থ হয়ে রেল স্টেশনের নিকটবর্তী যমুনা মার্কেটেস্থ ওয়ান মিডিয়াসহ একের পর এক করে ৪ কালোবাজরী সিন্ডিকেটের কাছে ধর্না দিয়েও টিকিট কিনে দিতে ব্যর্থ হন। কিন্তু ওই সাংবাদিককে যে কোনভাবেই হোক মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রামে পরীক্ষায় নিয়ে যেতে হবে। পরে তিনি নিজেই চলে যান যমুনা মার্কেটে। পরিচয় গোপন রেখে দালাল ওয়ান মিডিয়ায় গেলে অনেক দর কষাকষির পর ২০০ টাকা করে অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে তার হাতে একটি টোকন দিয়ে বলে যান কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে নেন। পরে ওই সাংবাদিক কাউন্টারে গেলে কোন বাক্য ছাড়াই টিকেট দুটি কেটে দেওয়া হয়। সূত্রমতে রেল স্টেশনের কাউন্টারে পাওয়া না গেলেও টিকিট প্রাপ্তির জায়গা হচ্ছে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের পার্শ্ববর্তী যমুনা মার্কেটের ‘ওয়ান মিডিয়া’ ও ‘অনলাইন মিডিয়া’ ও রেলওয়ে ষ্টেশনের কবির এন্টারপ্রাইজ। এ তিনটি দোকানে গেলেই মেলে টিকিট। প্রতি টিকিটে প্রতিষ্ঠানগুলো ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিয়ে থাকে।
সূত্র আরো জানায়, স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা টিকিট কেটে পাঠিয়ে দেন ওই তিন দোকানে। অনলাইনে টিকিট কেটেও বিক্রি করা হয় দোকান গুলোতে। বাইরের দোকানে ট্রেনের টিকিট বিক্রির বিষয়টি জানেন খোদ স্টেশন ম্যানেজার খলিলুর রহমান। কিন্তু এর বিরুদ্ধে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেন না। কালোবাজারে টিকিট বিক্রির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানান না। বাইরে কে কীভাবে টিকিট বিক্রি করছে তা খুঁজে দেখার জন্য গণমাধ্যমকে পরামর্শ দেন তিনি।
সূত্র জানায়, টিকিট কালোবাজারিতে অন্তত পাঁচটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বুকিং সহকারী জহির রায়হানসহ ৪ থেকে ৫ কর্মচারী। রেলস্টেশনের কবির এটারপ্রাইজ, যমুনা মার্কেটের ওয়ান মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া ও নাঈম এটারপ্রাইজসহ অন্তত ৩০ জনের একটি একাধিক সিন্ডিকেট। কদাচিৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে দু-একজন দালাল আটক করলেও রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত থাকায় টিকিট কালোবাজারি বন্ধ হচ্ছে না। অজ্ঞাতকারণে যমুনা মার্কেটস্থ টিকেট কালোবাজারি প্রতিষ্ঠান ওয়ান মিডিয়া,অনলাইন মিডিয়া ও নাঈম এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে সিলেট রেল ষ্টেশনে অবৈধভাবে টিকেট বিক্রির সময় এক দালালকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। শনিবার বেলা ২টার দিকে তাকে আটক করা হয়। আটককৃত দালাল কবির আহমদ রেলওয়ে ষ্টেশনের কবির এন্টারপ্রাইজ এর মালিক। কবির আহমদকে হাতেনাতে আটক করেন স্টেশন মাস্টার আ ব ম রাসেল। পরে তিনি তাকে সিলেট রেলওয়ে পুলিশের হাতে তোলে দেন। সিলেট রেলওয়ে পুলিশের এসআই জয়নুল আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সময় সিলেট রেল স্টেশনের যমুনা মার্কেটের ওয়ান মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া ও নাঈম এন্টারপ্রাইজ কালোবাজারে টিকেট বিক্রি অব্যাহত রাখলেও অজ্ঞাত কারনে এসব প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালোনো হয়নি। অভিযোগ পাওয়া েেগছে, সম্প্রতি রেল টিকেটের ৫০% অনলাইনে দেওয়ায় টিকেট কালোবাজারীরা ঈদ উৎসব পালন করছেন। রেলওয়ে কর্মচারী কর্মকর্তাদের অংশ গ্রহণে দালাল সিন্ডিকেট নির্ধারিত মেবাইল ফোনের মাধ্যমে সব টিকেট সাবাড় করে ফেলে। পরে টোকেন দিয়ে কাউন্টার থেকেই তা কাটিয়ে বিক্রি করে থাকে। দালাল সিন্ডিকেটের সাথে রেল স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও টিকের বোকাররাও জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে সিলেটস্থ রেল স্টেশন ম্যানেজার খলিলুর রহমানের সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি এ প্রতিবেদকের মোবাইল ফোন রিসিভ করেন নি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd