সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দলে গণপদত্যাগের অন্তরালে..

প্রকাশিত: ১:১৫ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২১

সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দলে গণপদত্যাগের অন্তরালে..

বিশেষ প্রতিবেদক :: সিলেটে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের পদত্যাগ নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। একেরপর এক পদত্যাগে গেল কয়দিন বিষয়টি নিয়ে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘টক অব দ্যা টাউনে’ পরিণত হয়েছিল। জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নবগঠিত কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ ওই সংগঠনের এ পর্যন্ত শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন।তবে, দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবরে এসব পদত্যাগপত্র পাঠানোর কথা বলা হলেও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান জানালেন, আমার কাছে কোন পদত্যাগপত্র আসেনি। শুধুমাত্র ফেসবুকে দেখেছি।
জানা গেছে, গেল ১৭ আগস্ট সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটিতে জেলা শাখার আহবায়ক হিসাবে দায়িত্ব পান আব্দুল আহাদ খান জামাল। এছাড়া সদস্যসচিব করা হয় সাবেক ছাত্রনেতা দেওয়ান জাকির হোসেন খানকে। আর মহানগর শাখায় আব্দুল ওয়াহিদ সুহেলকে আহবায়ক ও সদস্য সচিব করা হয় আজিজুল হোসেন আজিজকে।
ওই কমিটি ঘোষণার পর সর্বপ্রথম দল ছাড়েন সিলেটের আলোচিত বিএনপি নেতা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান। তিনি (জামান) অভিযোগ করেন, দলের সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হওয়ার পরও তার সঙ্গে আলোচনা না করেই জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি অনুমোদন করা হয়। কমিটিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি।এডভোকেট জামানের ওই পদত্যাগের পর সিলেটে বিএনপির রাজনীতি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। জামানের অনুসারীরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের মনের ভেতরে জমে থাকা নানা ক্ষোভ ফেসবুকে বহিঃপ্রকাশ ঘটতে দেখা যায়। এরপরই শামসুজ্জামান জামানের পথ ধরেন তাঁর অনুসারীরা। শুরু হয় পদত্যাগ। গেল কয়দিন এমনভাবে সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে পদত্যাগ শুরু হয়েছিল, যেটি জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করে।২১ আগস্ট সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নবগঠিত কমিটি থেকে একযুগে পদত্যাগ করেন ১০ জন নেতা। তারা হলেন- সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক এমদাদ বক্স, সদস্য মওদুদুল হক, শহীদুল ইসলাম কাদির, আলতাফ হোসেন বিল্লাল, আমিনুল হক বেলাল ও শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী লাহিন। মহানগর কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন- সদস্য কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন, রুজেল আহমদ চৌধুরী, আব্দুল হান্নান ও আখতার আহমদ। তবে ওই রাতেই আখতার আহমদ ফেসবুকে লিখে জানান-তিনি পদত্যাগ করেননি। কিন্তু কাউন্সিলর তুহিন সিলেটভিউকে জানান, কমিটিতে আমরা জানি, যে আখতার পদ পেয়েছেন, তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। অন্য কোন আখতার ওই পদের ব্যক্তি হলে আমার জানা নেই।এরপর ২৫ আগস্ট সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ের আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়কসহ শতাধিক নেতাকর্মী গণপদত্যাগ করেন। ওই দিন দুপুরে নগরীর মীরাবাজারে একটি সভা করে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগ করা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- সদর উপজেলা আহবায়ক শাহিদুল ইসলাম কাদির, জৈন্তাপুর উপজেলা আহবায়ক আলতাফ হোসেন বিলাল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আহবায়ক সুজন মিয়া, গোলাপগঞ্জ উপজেলা আহবায়ক আবুল কালাম, জকিগঞ্জ উপজেলা আহবায়ক হাসান আহমদ, বালাগঞ্জ উপজেলা আহবায়ক হেলাল আহমদ, কানাইঘাট উপজেলা আহবায়ক নাজিম উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ পৌর আহবায়ক রাজু আহমদ চৌধুরী, কানাইঘাট পৌর আহবায়ক মিজানুর রহমান ও জকিগঞ্জ পৌর আহবায়ক সাইফুল ইসলাম সাচ্চু।এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক, যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্যসহ শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন বলে জানান জৈন্তাপুর উপজেলা আহবায়ক আলতাফ হোসেন বিলাল।
দলত্যাগের ধারাবাহিকতায় শুক্রবার স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল আরও ১৪ নেতা পদত্যাগ করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় আকস্মিক প্রেসব্রিফিং করে তারা সংগঠন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগের ঘোষণা পাঠ করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রায়হান বক্স রাকু।
পদত্যাগকারীরা হলেন- ২১নং ওয়ার্ডের আহবায়ক কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন, ৬নং ওয়ার্ডের আহবায়ক আব্দুল হান্নান, ১৯নং ওয়ার্ডের মাসুক গাজী, ১৭নং ওয়ার্ডের আহবায়ক বিলাল আহমদ খান, ১০ ওয়ার্ডের মিজানুর রহমান, ১১নং ওয়ার্ডের সেলিম আহমদ, ১০ ওয়ার্ডের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক শামীম আহমদ খান, ২০ ওয়ার্ডের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আকবর হোসেন কয়ছর, ৩নং ওয়ার্ডের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মামুন আহমদ, ২৩নং ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেন, ২০ ওয়ার্ডের আহবায়ক ফারুক হোসেন, ২১নং ওয়ার্ডের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মস্তফা কামাল ফরহাদ ও শাহজান আহমদ। দলে মূল্যায়িত না হওয়া, অযোগ্যদের কমিটিতে ঠাঁই দেওয়ার অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেন বলে প্রেসব্রিফিং এ জানান তারা।
এরপর দিন শনিবার বিকেলে সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নবগঠিত কমিটির ৫নং যুগ্ম আহ্বায়ক লোকমানুজ্জামান লোকমান পদত্যাগ করেন। সর্বশেষ ওই দিন রাত ১০টার দিকে পদত্যাগ করেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নবগঠিত আহবায়ক কমিটির সদস্য টিটন মল্লিক।
নেতাকর্মীদের এসব পদত্যাগপত্র দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবরে লেখা থাকলেও আজ সোমবার পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পৌছায়নি। অথচ এসব পদত্যাগপত্র ফেসবুকে গেল কয়েদিন ভাইরাল হতে দেখা যায়।
পদত্যাগকারীদের এসব পদত্যাগপত্র শুধু ফেসবুকে পোষ্ট, প্রেসবিফিং করে গণমাধ্যমে পাঠিয়ে শেষ, না দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে এ নিয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন নেতার সাথে।
সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটি থেকে সদ্য পদত্যাগকারী ক্লাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, সবাই পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। পদত্যাগপত্র দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপি নেতা খালেদুর রহমান ঝলকের কাছে।অনুরুপ কথা বলেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করা শহীদুল ইসলাম কাদিরও। এরপর ফোন করা হয় মওদুদুল হকের কাছে। তিনি জেলার আহবায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্র কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খবর নিয়ে জানাচ্ছি। এরপর ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও তিনি আর কিছু জানাননি। সর্বশেষ ফোন করা হয় এসব পদত্যাগপত্র ঢাকার নেতাদের কাছে পাঠানোর দায়িত্ব পাওয়া সিলেট মহানগর বিএনপির সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও জামান বলয়ের নেতা খালেদুর রহমান ঝলকের সাথে। তিনি বলেন, দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় টিমের হোয়াটসআপে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া হার্ড কপি পোস্ট অফিস মারফত পাঠিয়েছি।
এরপর স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে ফোন করলে তিনি জানান, আমার কাছে কেউ পদত্যাগপত্র পাঠাননি। তবে ফেসবুকে দেখেছি কেউ কেউ পদত্যাগ করেছেন। আর চিঠি পাঠানো হলে দলের দফতরের কাছে যাবে। তবে আমার কাছে কোন চিঠি এখনো আসেনি। এসব পদত্যাগপত্র হাতে পৌছলে গ্রহণ করা হবে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে দলের সর্বোচ্চ এ নেতা বলেন ,দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।এ প্রসঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..