ছাতক প্রতিনিধি :: ছাতকে রেলওয়ে মালিকানাধিন একটি পুকুর দখল নিয়ে দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা এবং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন তকিপুর গ্রামে এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে একটি পক্ষ গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদে হামলা ও ভাঙচুর করেছে বলে স্থানীয়রা জানান। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ছাতক সার্কেল বিল্লাল হোসেন ও ছাতক থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান ঘটনাস্থর পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমানের তকিপুরস্থ গ্রামের বাড়ির সামনে ছাতক-সিলেট রেলওয়ে সড়কের পাশে একটি পুকুর রয়েছে। রেলওয়ে বিভাগের এ পুকুরটি লিজ নিয়ে যুগ-যুগ ধরে ভোগ দখল করে আসছে চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান ও তার স্বজনরা। সম্প্রতি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওই পুকুরটি নতুনভাবে টেন্ডার আহবান করলে একই ইউনিয়নের গোবিন্দনগর গ্রামের আজিজুর রহমানের পুত্র ছায়াদ আহমদ টেন্ডারের মাধ্যমে পুকুরটি লিজ গ্রহন করেন। বুধবার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষে ছায়াদ আহমদকে পুকুর দখল বুঝিয়ে দিতে তকিপুর গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকের বাড়িতে যায়। সেখানে চেয়ারম্যানের সাথে এ সংক্রান্ত আলোচনা করলে টেন্ডার ও লিজের বিপরীতে দাখিল করা আবেদনসহ যাবতীয় কাগজপত্র রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দেখান আখলাকুর রহমান। এক পর্যায়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে আসার সময় চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষকে ধাওয়া করে। পরে ধাওয়া খেয়ে প্রতিক্ষরা গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এসময় হামলাকারীরা কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও ফাইলপত্র তছনছসহ কার্যালয়ের বাহিরে ঝুলিয়ে রাখা বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত জাতীয় শোক দিবসের দু’টি ব্যানার ছিড়ে ফেলে।
এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান জানান, প্রায় ৩০-৪০ বছর তার পরিবার বৈধভাবে রেলওয়ের ৭৪ শতক ভুমি লিজ গ্রহণ করে ভোগ-দখল করে আসছেন। গ্রামবাসীর সুবিধার জন্য ওই জায়গায় একটি পুকুরও খনন করেন তার পূর্ব পুরুষরা। পরবর্তীতে পাঁচ বছর ও তিন বছর পর পর লিজ নবায়ন করে তারা ভোগ দখলে করে আসছেন। ২০১৬ সালে নবায়ন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে তাদের অবহিত না করে কর্তৃপক্ষ অন্য লোকজনকে লিজ প্রদান করলে তিনি টেন্ডার বাতিলের জন্য আবেদন করেন রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ বরাবরে। এ হিসেবে রেলওয়ের ভূ-কর্মকর্তা (চট্টগগ্রাম)কে টেন্ডার বাতিলের জন্য একটি পত্রও প্রেরণ করেন রেলওয়ের এক সিনিয়র সচিব। এসব যাচাই-বাছাই না করে জোর পূর্বক পুকুরটি দখল বুঝিয়ে দিতে আসেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরে লিজের বিপরীতে আবেন দেখালে তারা চলে যান। এসময় পুকুর দখল নিতে ব্যর্থ হয়ে ছায়াদ পক্ষ সরকারী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে চেয়ারম্যান কক্ষে প্রবেশ করে ভাংচুর চালায়।
এ বিষয়ে ছায়াদ আহমদ জানান, তিনি রেলওয়ের পুকুরটি টেন্ডারে লিজ পেয়েছেন। ওই পুকুরটি দখল বুঝিয়ে দেয়ার জন্য রেলওয়ে বিভাগ থেকে কর্মকর্তা ও সিলেট জিআরপি থানার একজন এএসআই এসেছিলেন। কিন্তু আখলাক চেয়ারম্যান দখল দিতে নানা অযুহাত সৃষ্টি করেন। পরে সেখান থেকে তারা চলে আসার সময় চেয়ারম্যান পক্ষের লোকজন তাদের ধাওয়া করে। ইউনিয়ন অফিসে হামলা, চেয়ারম্যানের কক্ষ ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত কার্যালয়ের বাহিরে ঝুলিয়ে রাখা ব্যানার ছেড়ার অভিযোগটি অস্বীকার করে তিনি বলেন, তাদের উপর হামলার বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করার জন্য তারা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলেন। চেয়ারম্যানকে না পেয়ে তারা চলে আসেন।
ছাতক থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানান, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোন লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Sharing is caring!