সিলেট ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৫১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটে বেড়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ। ঘনঘন মামলা ও গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। অপরদিকে সাইবার ট্রাইব্যুনাল’র কার্যক্রমও চালু হয়েছে। এই আইনের মামলায় গ্রেপ্তারও হচ্ছেন অনেক। ফলে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুক সাংবাদিক, কথিত লাইভ সাংবাদিক, পোর্টাল সাংবাদিক ও বুম সাংবাদিকদের মধ্যে মামলা ও গ্রেপ্তার আতংক কিরাজ করছে। যে কোন সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জামিন অযোগ্য ধারার মামলায় তারা গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যেতে পারেন, এ আশংকায় ভুগছেন তারা। ফলে সিলেটের অনলাইন পোর্টাল ও সোস্যাল মিডিয়াগুলোর সংবাদ প্রকাশে এবং বুম সাংবাদিকদের লাইভ প্রচারে অনেকটা ভাটা পড়েছে।
সিলেটে অনলাইন, ফে-বু লাইভ ও বুম সাংবাদিকের কোন হিসেব বা পরিসংখ্যান নেই। যার হাতে মোবাইল ও বুম সেই এখন সাংবাদিক। সংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, তদবীরবাজি-সহ রকমফের অবৈধ ফায়দা হাসিল করে চলছে তারা। প্রশাসন ওদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বস্তুত তাদের সমীহ করে চলে। ফলে বুম সাংবাদি, অনলাইন ও লাইভ সাংবাদিকরা একেবারে বেপরোয়া হয়ে যত্রতত্র ভিড় করতে শুরু করেছে। কোন একটি রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠান হলে আয়োজকদেরকে অন্তত ২০ থেকে ৩০ সাংবাদিদের দিতে হচ্ছে সার্ভিস ফি নামে চাঁদা। অন্যথায় তারা এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতেও দ্বিধাবোধ করে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লাইভ ও বুম দেখিয়ে চাঁদাবাজি, টাকার বিনিময়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারের মাধ্যমে চাঁদা আদায়, মানহানীকর পোস্ট ও নিউজ প্রকাশ করে টাকার বিনময়ে আবার এই পোস্টের “হাইড” ব্যবসা প্রভৃতি নানা প্রকার ডিজিটাল অপরাধে লিপ্ত ফে-বু, লাইভ, বুম ও অনলাইন সংশ্লিষ্ট কথিত সাংবাদিকরা। তাদের এহেন আষ্ফালনে সিলেটে আপামর জনতা অতিষ্ঠ হয়ে পড়লেও প্রশাসনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছিল না।
অন্যদিকে এসব অপরাধে পেনাল কোডে মামলা হয় না। আবার উপর মহলের নির্দেশনা ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থানায় কোন মামলাও রেকর্ড হয় না। সারা দেশে একটিমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনাল ঢাকায় থাকায় রাজধানীর বাইারের ভুক্তভোগীদের পক্ষে নালিশা মামলা করারও সুযোগ ছিল না । ফলে কথিত বুম সাংবাদিক, ফে-বু সাংবাদিক ও অনলাইন পোর্টালিস্টদের কাছে সিলেটের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েন। এদের উৎপাতে অনেকের পরিবার ধ্বংস হয়েছে, অনেকের মান সম্মান ভূলুন্ঠিত হলেও তাদের পক্ষে করার কিছুই ছিল না।
সম্প্রতি সিলেটে সাইবার ট্রাইব্যুনাল চালু হওয়ায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে। অন্তত পক্ষে আইনত প্রতিবাদ করার সুযোগটা তাদের হাতের নাগালে এসে পৌঁছেছে। আর এতে করে সাংবাদিক নামের সাইবার ক্রিমিনালদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার আতংক।
গত ৯ জুলাই ট্রাফিক পুলিশকে ভর্ৎসনা করে একটি লাইভ প্রচারের দায়ে শাহপরাণ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হলে ১৪ জুলাই ফয়সাল কাদির নামের এক বুম সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর পর গত ২২ জুলাই রাতে বিদেশী কোম্পানী সেভরনের সৃষ্ট অগ্নিবলয়কে সেনানিবাবাহিনীর একটি ভবন আগুনে ভস্মীভুত মর্মে গুজব ছড়িয়ে লাইভ করে কয়েকজন ফেবু ও বুম সাংবাদিক। এ ঘটনায় ৮ জনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে র্যাব-৯ অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে গত ১৭ জুন সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালে সিলেট শহর ও শহরতলীর ৬ জন বুম সাংবাদিক, লাইভ সাংবাদিক ও পোর্টাল সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জামিন অযোগ্য বিভিন্ন ধারায় একটি নালিশা মামলা হয়েছে।
মামলাটি করেছেন সিলেট জেলা জজ আদালতের আইনজীবী সহকারী আতিউর রহমান। মামলায় তিনি তার পরিবার এবং জেলা জজ কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবি অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম সম্পর্কে আপত্তিকর, মিথ্যা, ভিত্তিহীন অপবাদমূলক ও চরম মানহানিকর বক্তব্য উপস্থাপন ও প্রচার করে তাদেরকে সামসাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও পেশার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ করার গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(১)(ক), ২৬(১), ২৯)১), ৩৫(১) ধারায় দায়ের করা এ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হচ্ছেন- অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘সিলেট নিউজ প্রতিদিন’-এর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং হযরত শাহজালাল ২৪ অনলাইন টিভি’র সম্পাদক নিয়াজ মোহাম্মদ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল নগরনিউজ২৪ এর সম্পাদক ও সাইফুল ইসলাম, সোস্যাল মিডিয়া ফেইসবুক’র বুম সাংবাদিক মামুনুর রশিদ শামীম, রুবেল আহমদ ও মিজানুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল মামুন-এসএমপি’র দক্ষিণ সুরমা মোগলাবাজার থানাধীন জাপান স্কুল রোডের বাসিন্দা। আসামি সাইফুল ইসলাম এসএমপি’র এয়ারপোর্ট থানাধীন দেবাইবহর গ্রামের আবদুল খালিকের পুত্র, বুম সাংবাদিক আসামি মামুনুর রশিদ শামীম এয়ারপোর্ট থানার ফতেগড় বাজারতলা গ্রামের বেলাল আহমদের পুত্র, আসামি রুবেল আহমদ একই এলাকার জামাল আহমদের পুত্র, আসামি মিজানুর রহমান ওই এলাকার আলাউদ্দিনের পুত্র। শাহজালাল ২৪ অনলাইন টিভির সম্পাদক নিয়াজ মোহাম্মদ-এর ঠিকানা তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি। মামলা দায়ের পর সাইবার ট্রাইব্যুনাল সিলেট-এর বিচারক আবুল কাশেম মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিলেট মেট্রোডিবি’র উপ-কমিশনারকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। মামলাটির এখনো তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা ইস্যু করা হবে বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd